সাহিত্য ও ইতিহাসের মেল বন্ধনে রাজা রামমোহন রায় তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী

সাহিত্য ও ইতিহাসের মেল বন্ধনে রাজা রামমোহন রায়

তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী

সাহিত্যের আঙিনায় ইতিহাস প্রবেশ করে সমকালীন হয়ে যায়। আমরা সমৃদ্ধ হই সেসব জেনে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে আগুনজ্বলা দিনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ব্যক্তিদের জীবনের নানা ঘটনা। মথা নত করি সমীহে, শ্রদ্ধায়। সাহিত্যের অভিনব ইতিহাস প্রবাহিত হয়ে চলেছে পরবর্তী প্রজন্মে। সাহিত্য এবং ইতিহাস, সময়, স্থান এবং পটভূমির বেনুনীতে বাঁধা এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে সমৃদ্ধ করে যাবে সমাজকে।
ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় কে ভারতের নবজাগরণের পথিকৃৎ বলা হয়। হুগলী জেলার রাধানগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও হিন্দু ধর্মীয় প্রথা ও সামাজিক ব্যবস্থার সংস্কার সাধন ই হয়ে ওঠে তাঁর মূল লক্ষ্য।
বাংলা গদ্যের জনক ছিলেন তিনি। বহু গ্রন্থ রচনা করে বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান রেখে গেছেন।
আমাদের শাস্ত্র গুলোর অনুবাদ করে তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন, দেশাচার বলে যা চালানো হয় তা কোথাও লেখাই নেই শাস্ত্রে।
আরবী, ফার্সি, সংস্কৃত এবং ইংরেজি ভাষা ব্যবহারে সুদক্ষ ছিলেন তিনি।
১৮০৪ সালে একেশ্বর বাদ নিয়ে আরবি ও ফারসি ভাষার প্রথম যে বইটি প্রকাশিত হয় তার নাম তুহফাদ-উল-মুয়াহহিদিন। ফারসি ভাষায় লেখা এই বইটির মুখবন্ধ ছিল আরবিতে লেখা।
হিন্দু, খ্রিষ্ট এবং মুসলিম ধর্ম নিয়ে তাঁর অগাধ পড়াশোনা এবং এর ফলে হিন্দু ধর্মের আচার ও পৌত্তলিকতা নিয়ে বাবা মা এর সাথে তুমুল মতোবিরোধের ফলে ত্যাজ্যপুত্র হন।
১৮১৫ সালে পাকাপাকি ভাবে এসে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ১৮১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্ম সমাজ, যা ছিল সামাজিক, ধর্মীয় এবং বাংলার পুনর্জাগরণের পথ প্রদর্শক।
গবেষক কৃষ্ণ ধর বলেছেন, রামমোহন রায় ভারতের একজন সংবাদপত্রের প্রতিষাঠাতাও ছিলেন। ১৮২১ সালে প্রকাশিত ব্রাহ্মনিকাল ম্যাগাজিন তাঁর প্রথম দ্বিভাষিক পত্রিকা। ঐ সালেই সংবাদ কৌমুদী নামে একটি পত্রিকা বার করেন। এর একবছর পর ফারসি ভাষায় মিরাত-উল-আকবর নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।
রাজা রামমোহন রায় (২২মে ১৭৭২–২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩) ছিলেন বাঙালি দার্শনিক। তৎকালীন রাজনীতি, জন প্রশাসন, ধর্মীয় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছেন। সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টায় তিনি বিখ্যাত।
বিবিসি ও বাংলার জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে দশম স্থানে রাজা রামমোহন রায়।

এমন মহান ব্যক্তিত্ব আমাদের ইতিহাস ও সাহিত্য কে বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ করেছেন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *