মায়ের পূজা —- শুভা গাঙ্গুলী

মায়ের পূজা

শুভা গাঙ্গুলী

মা দূর্গার আরাধনা কবে কোথায় কখন কে শুরু করেছিলো সেটা ইতিহাস তার পাতায় নিশ্চয় লিখে রেখেছে,
তবে পুরাণ বলছে এই শারদীয়া পূজা নাকি অকাল বোধন ,দশরথ পুত্র রাম ,রাবণ বধের জন্য শক্তির আরাধনা করেন, ১০৮ টি পদ্ম না জোগাড় করতে পেরে তিনি তাঁর পদ্ম পলাশ লোচন উৎপাটিত করে দেবীর চরণে সমর্পণ করতে চলেছিলেন,তখন দেবী দূর্গা তার আত্মত্যাগে সন্তুষ্ট হয়ে ,আবির্ভূত হন এবং আশীর্বাদ করেন,
এবার আসি ভূগোলে, ঋতু পরিবর্তন আমাদের কৃষি বিদ্যায় প্রচুর সহায়তা করে , তাই আশ্বিনের দেবী আরাধনা শস্যশ্যামলা বাংলাদেশের কৃষিপ্রধান দেশের মানুষের সারা বছরের সন্চয়,

ছোট্ট নিশা যে কিনা গ্রামের ইংলিশ মিডিয়ম স্কুলে পড়ে , মানে বর্ধিষ্ণু শিক্ষিত উচ্চমনোভাবাপন্ন গ্রামে আর কি , সে একখানা রচনা , মানে দুর্গাপুজা সংক্রান্ত ,লিখতে বসে তার ঠাকুমার কাছে এইসব তথ্য সংগ্রহ করছিলো,
সাধারণত: ঠাকুমা বলতে আমাদের যে সুন্দর গোলগাল হাসিখুশি মহিলার কথা মনে হয় , যিনি কিনা খুব ভালো রান্নাবান্না ও জানেন আবার আচারও বানান , এই নিশার ঠাকুমা ,শুধুমাত্র তাই নন, সেগুলো তো তিনি পারেন ই তা ছাড়াও তিনি লেখাপডাতেও খুব ভালো, কোন ইস্কুলের হেড দিদিমণিও ছিলেন,
তাঁর বাডীতে পূজার দিনগুলো আর পাঁচটা দিনের মতোই তবে তিনি ছেলেমেয়ে নাতিনাতনিদের কোনো কঠোর নিয়মে বাঁধেন নি তারা নিজেরাই মিতব্যয়ী পডাশোনায় চৌকশ কিন্তু সকলেই কিছু না কিছু গুণের অধিকারী,
যেমন কেউ সঙ্গীতে পারদর্শী কেউ খুব ভালো ছবি আঁকে, প্রদর্শনী করে আবার কেউ গ্রামের নিম্নবর্গের ছেলেমেয়েদের পড়ায় তার সময় মতো।
এই সব সমাজ সেবা মূলক কাজে তারা সর্বদাই ব্যস্ত থাকে,
পাড়ার পুজোয় তারা অংশগ্রহণ করে তো বটেই এভাবেই কিছু একটা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে বরাবরই।
তা হলে দিদা , এবার তাহলে বলো এই যে বড বড পুজো তাতে যে খরচা হয় সেগুলো কি অনাবশ্যক?নিশার প্রশ্ন?
না দিদুভাই একদমই নয়, এই কদিনেই তো কুমোর রা , প্যাণ্ডেল তৈরীর জনমজুর রা আর আলোকসয্যা এই সব কাজে যে মানুষরা যুক্ত আছে তাদের সারা বছরের রোজগার টা হয়ে যায়,
তাই এটাও দরকার,
আর এই যে থীম পুজো হয় , এটাতে কি উপকার হয়?
দেখো দিদুভাই art and culture একসঙ্গে যুক্ত, এই যে trained শিল্পীরা তাঁদের শিক্ষা বিদ্যা বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সমাজের বিভিন্ন দিক কে দূর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে আপন মনোভাব প্রকাশ করার সুযোগ পান,তাতে মানুষ ধন্য ধন্য করে আর তাঁরাও সৃষ্টির আনন্দে মশগুল হন,
বর্ষার পরে অনেকটা প্রদূষণ দূর হলে আকাশ ঘন নীল আর সাদা সাদা মেঘ তো সব কবিরই কাব্যগাথায় স্থান করে নিয়েছে,কাশফুল যদিও শরতের শোভা বলেই জানে সকলে, তবু ও মানুষ তার medicinal purpose টাও খতিয়েদেখছে,

ধর্ম পূজা পাঠ অবশ্যই বিনোদনের অঙ্গ, সাথে সবে মিলি করি কাজ টাইপের ব্যাপারও,
তাই কুসংস্কারতা দূর করে পূজা নিশ্চয়ই করা উচিত।

সময় পরিস্থিতি তো সব দিন সমান থাকে না , বর্তমান পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ, কারণ এই রোগ যা কিনা সারা বিশ্বকে তঠস্থ করেছে, মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, আর বিপদ কমছে না তো বাড়ছেই, বৈজ্ঞানিক রা
প্রাণপন চেষ্টা করেও কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছেন না, হয়তো সময় লাগছে , হয়তো অদূর ভবিষ্যতে সেটা পারবেন, হতেও পারে কোনো ভারতীয় বৈজ্ঞানিকের হাত দিয়েই হবে, হতেও তো পারে,

তবে আমাদের সঠিক নিয়ম মেনেই তো পূজার ঘোরাঘুরি করা উচিত

তাহলে চলো মহাশক্তির কাছে আমরা একাগ্র চিত্তে প্রার্থনা করি
যে ,পৃথিবী করোণা মুক্ত হোক, মানুষ স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলি,মানুষ নিজ নিজ কর্ম ক্ষেত্রে ফিরে আসুক,
রোগাক্রান্ত পৃথিবী শান্তির শ্বাস নিক।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *