শিউলি ফোটা ভোরে সুধার আগমনী … মীনা ঘোষ…

শিউলি ফোটা ভোরে
সুধার আগমনী…

মীনা ঘোষ…

পুজো আসে, পুজো যায় বছর বছর, সুধার আর ফেরা হয় না আপনঘর, আলোকিত শহর জানে, কবে তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে গোধূলির মানে, ভোরবেলায় ঝরা শিউলির আকুল ক্রন্দন, সে শুনেছে একা একা, ভিজে গেছে প্রিয় উঠোন.. প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে সুধা, যেখানে সন্ধ্যে নামলে জ্বলে টিমটিম হ্যারিকেন! উঁচু নিচু রাস্তা, দু পাশে উপচে পড়া ঘোলা জলের ড্রেন,
দু’তিনটে ইঁটের, বাকি সবই মাটির বাড়ি, মাঝখানে ঠাকুর দালান, ওখানে একটাই দুর্গাপুজো – বারোয়ারি,
আজ খড়ের কাঠামো হবে ঠাকুরের! সকাল থেকে এক আঁচল শিউলি নিয়ে সুধা যিনি ঠাকুর তৈরি করেন সেই ঠাকুর জেঠুর অপেক্ষায়, আসতে আজ কেন করছে জেঠু, ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত সুধার অসহায় করুণ দৃষ্টি, দুপুর গড়িয়ে গেলে দুটো ছেলে এসে পুরনো খড়ের কাঠামোকে পিটিয়ে পিটিয়ে সোজা করছে, সুধা আস্তে করে বলে, একটু সাবধানে করো না গো, ঠাকুরের ব্যথা লাগবে যে’—
গতবারের পুজোর কথা ভেবে সুধার মন সাময়িক উচ্ছল, ঝলমল, সবার সাথে খুশি আর আনন্দের বয়ে গেছে বন্যা, দূরে থেকেও কেউ দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ কিছু ভেবেছে, আবার কেউ ভেবেছে ও কিছু না.. পাঁচদিন ধরে সেই সুন্দর মুহূর্ত গুলো মনের মণি কোঠায় ধরে রেখেছে সুধা! সেও সেই সপ্তমী থেকে দশমীর বিসর্জনের পর্যন্ত সবার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাতে হাত ধরে গোটা গ্রাম মা দুর্গার সাথে ঘুরেছে, তারপর একটু দূরে থেমে গেছে! এবার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নীরবে ডুকরে কেঁদে উঠেছে,.. চলে গেলে মা’——-
এখন তার গ্রামে নেই পুজোর সেই মন পাগল করা আনন্দ, সুখ, সে দেখতে পায় মায়ের মলিন মুখ, হারিয়ে গেছে হ্যাচাকের আলোয় আলোকিত সুধার সুধামাখা গ্রাম, শহর গ্রাস করেছে তার সেই শৈশবের সুরভিত, সুবাসিত গ্রামের ঐশ্বর্য, সৌন্দর্য.. এখন শুধু বিলাসবহুল আয়োজন, একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা, উদ্দাম নাচ, উল্লসিত টালমাটাল বিসর্জনের মিছিল…

সুধার চোখে জল এসেছিল শেষ যখন পুজোয় গ্রামে গিয়েছিল! যে গ্রামের প্রতিটি সবুজ কণা, গেরুয়া মাটি, শান্ত দুপুরে স্নিগ্ধ শতদলে পরিপূর্ণ দিঘি সুধা অন্ত প্রাণ ছিল, তাদের ছেড়ে সে শহরের নিভৃত ফ্লাটের এক কোণে নীরবে দাঁড়িয়ে আজও খোঁজে পুজোর সেই স্মৃতির অমূল্য রতন…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *