বাংলাদেশের মোহনপুরের পরে আত্রেয়ীতে পাল্টা রাবার বাঁধ হতে চলেছে বালুরঘাটের ডাঙ্গিতে

৪ঠা সেপ্টেম্বর, বালুরঘাট: ভারতে আত্রেয়ী নদীর জল ধরে রাখতে এবার বাংলাদেশের পাল্টা বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদীতে রাবার বাঁধ দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে রাজ্য সেচদপ্তরের তরফে জেলা সেচদপ্তরকে এনিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠি পেয়ে সেচদপ্তর জোরকদমে কাজ শুরু করেছে। আত্রেয়ী নদীতে কী ধরনের বাঁধ তৈরি করা যেতে পারে সেদিকে নজর দিয়ে নদীর জল, মাটি, বালি, নাব্যতা পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্য সেচ দপ্তরের তরফে একটি বিশেষ দল বালুরঘাটে এসে আত্রেয়ী নদী পরিদর্শন করেছেন।
দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাসের মধ্যে বাঁধের মডেল তৈরির কাজ শেষ করে প্রকল্পের ডিপিআর করা হবে। আত্রেয়ীতে বাঁধের কাজ শেষ হলে পুনর্ভবা নদীতেও বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আত্রেয়ীতে বাংলাদেশের মোহনপুরে যে রাবার ড্যাম দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখনও এনিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি। স্বাভাবিক ভাবে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখতেই বালুরঘাটে আত্রেয়ীতে জল ধরে রাখতে এই বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা রাজ্য সরকার নিয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সেচদপ্তরের আধিকারিক স্বপন বিশ্বাস বলেন, রাজ্য সরকার বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদীর উপর বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বাঁধ তৈরি করতে ইতিমধ্যে যাবতীয় পরীক্ষা করা হয়েছে। সেগুলি রাজ্য সেচদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত মডেল তৈরির কাজ শেষ হলেই ডিপিআরের কাজ শুরু হবে। আত্রেয়ীর পাশাপাশি পুনর্ভবা নদীতেও বাঁধ দেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের ভাইস চেয়ারম্যান অর্পিতা ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের আত্রেয়ীতে বাঁধ দিয়ে জল আটকে রাখায় জেলায় ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়েছে। এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার সরব হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতায় কাজ এগোয়নি। বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেচমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমরা বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করছি। এই বাঁধ দেওয়া হলে আগামীতে জলের সমস্যা মিটে যাবে।

বাংলাদেশে আত্রেয়ীতে বাঁধ দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি জেলার পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি সরব হয়েছে। বাঁধ দেওয়ায় নদীতে এদিকে সারাবছর জল থাকছে না। ফলে নদী তীরবর্তী জমিগুলিতে সেচের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশে জল বেড়ে গেলেই বাঁধের জল ছেড়ে দেওয়ায় হড়পা বান সৃষ্টি হওয়ায় কৃষিকাজের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারকে একাধিকবার এনিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে বাঁধ ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ করেও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। তাই বাধ্য হয়ে রাজ্য সরকার পাল্টা আত্রেয়ীতে বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। সূত্রের খবর, সরোজ সেতুর কাছে অথবা ডাঙিতে এই বাঁধ তৈরি করা হতে পারে। তবে কী ধরনের বাঁধ তৈরি করা হবে, উচ্চতা কত হবে তা নিয়ে এখনও সেচদপ্তর সিদ্ধান্ত নেয়নি। প্রাথমিক ভাবে নদীর জল, বালি, মাটি, নাব্যতা, জলের গতি পরীক্ষার কাজ শেষ হলেই তার উপর ভিত্তি করে কী প্রকারের বাঁধ দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত করা হবে বলে জেলা সেচদপ্তরের তরফে জানা গিয়েছে। স্বাভাবিক কারণে এই বাঁধ দেওয়া হলে বাংলাদেশ সরকারও চাপে পড়বে বলে মনে করছেন জেলাবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *