উপন্যাসিকা। সূর্য শিশির। পর্ব-৯। ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।

উপন্যাসিকা।
সূর্য শিশির।
পর্ব-৯।
ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।

“আয় তবে সহচরী,হাতে হাতে ধরি ধরি।”

শ্রীময়ী, কুহেলী, বৃন্দা হৈহৈ করে পৌঁছে যায় কৃষ্ণনগর।শতমন্যুদের বাড়ি। মধুরা বলে-‘আয় আগে আমার শ্বশুর, আর জেঠু কাকুদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। বৈঠকখানায় ঢোকার আগে মাথায় ঘোমটা তুলে নেয় মধুরা। -‘শোন, তোরা কিন্তু সবাই ওনাদের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করবি।’- বন্ধুরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। প্রণাম করার শিক্ষা তারা সবাই নিজের নিজের পরিবারের কাছেই পেয়েছে। উত্তর কোলকাতার শিক্ষিত বনেদি পরিবারের মেয়ে ওরা সবাই। বাগবাজারের শ্রীময়ী,গোয়াবাগানের মধুরা, পাইকপাড়ার বৃন্দা। শ্যামবাজারের কুহেলী।তবু মধুরা তাদের সহবত শেখাচ্ছে! ঘোমটা মাথায় নম্র পায়ে বান্ধবীদের নিয়ে বৈঠকখানা ঘরে ঢোকে মধুরা।-‘জেঠুমনি, বাবা, কাকু, এরা আমার বন্ধু। সবাই স্কুল কলেজে এক সাথে পড়েছি’-।এরা প্রণাম করার সময় বাবা,জেঠু, কাকুরা হাত জোড় করে উঠে দাঁড়ান, আশীর্বাদ করে বলেন -‘কল্যাণোমস্তু’-। তারপর ঠাকুরদালান সংলগ্ন ঠাকুর ঘরে প্রণাম করে এগিয়ে যায় অন্দরমহলের দিকে। যদিও এখন পরিবার একান্নবর্তী নয়,তবু কারো বাড়িতে অতিথি এলে মা, কাকিমা, জেঠিমারা একসাথে রান্না করেন। একটা আভিজাত্য এই বাড়িকে গৌরবের মোড়কে মুড়ে রেখেছে। খুব ভালো লেগে যায় বন্ধুদের। তবে আজ গিন্নিদের গাম্ভীর্য যেন মধুরাকে একটু ভয় পাইয়ে দেয়। ওরা মায়েদের প্রণাম করে।মধুরা চা করতে গেলে জেঠিমা বলেন -‘তুমি বন্ধুদের নিয়ে তোমার ঘরে যাও। সুশীলা চা জলখাবার তোমার ঘরে দিয়ে আসবে।’- শাশুড়িমা বলেন -‘এই শরীর নিয়ে তোমাকে হেঁসেলে আসতে হবে না।’- বৃন্দা বলে ওঠে -‘মধুরার শরীর খারাপ?ক‌ই, আমাদের বলেনি তো! কি হয়েছে?’- কাকিমা বলেন -‘এখনো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।তবে মনে হয় বৌমা আবার মা হতে যাচ্ছে।আমরা পুরোনো দিনের মানুষ। দেখেই বুঝতে পারি।’- মধুরা মুখ লাল করে মাথা নিচু করে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর বন্ধুদের নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।
শ্রীময়ীর খটকা লাগে। এতো বড়ো আনন্দ সংবাদ! তবু শাশুড়িদের মুখ গম্ভীর কেন? নাকি মধুরার ছয়মাসের বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও এতো তাড়াতাড়ি সন্তান ধারণ করেছে বলে ওঁরা বিরক্ত!
সুশীলা চা জলখাবার দিয়ে যায়। বলে-‘দাদাবাবু তো আজ কলেজ যায়নি কো। এট্টু পরেই ফিরবে। জেঠিমা বলে দেচেন আপনেরা চা খেয়ে চ্যান করে নেবেন। ঠিক দুকুর দুটোয় ভাত খাবেন।’- ওরা দেখে সেকেলে বিলিতি কাঁচের প্লেটে লুচি, তিল কালোজিরে দিয়ে আলুর তরকারি, সরভাজা; ঝকঝকে বিলিতি কাঁচের গ্লাসে জল, আর সবুজ রঙের ফিনফিনে পাতলা কাপ-প্লেটে চা। এমন বিলিতি বাসন ওদের বাড়িতেও আছে। তবে অতিথি সেবার জন্য নয়। এই বাড়ির আভিজাত্য যেন অনেকটা উচ্চ মাত্রার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *