কালো মেয়েটা **** সুনৃতা রায় চৌধুরী ©

কালো মেয়েটা
সুনৃতা রায় চৌধুরী ©

হয়েছে তো মেয়ে, তা ও যদি একটু দেখনদার হতো! কী জানি বাপু, আমাদের বংশে এমন কালো তো কেউ নেই! কোন্ কয়লাখনি থেকে তুলে এনেছ ওকে?” কালো মেয়ের মা সোমা যেন মরমে মরে যায়, তার বাবা যে কালো, তা তো অস্বীকার করার উপায় নেই! মেয়ে পেয়েছে তার দাদামশাইয়ের রং।
তা বলে কথায় কথায় এত অশ্রদ্ধা? মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে যে তার বাবাকেও! উৎসবে পার্বণে বাচ্চাদের জন্য জামা কেনা হলে তুলির জন্য একেবারে ম্যাটমেটে রঙের পোশাক। তুলির লাল জামা পরতে ইচ্ছে করলে টিটকারী, “টীকায় আগুন জ্বালানোর ইচ্ছা” বলে। কাকা জ্যাঠারা অন্যান্য বাচ্চাদের নিয়ে মেলায়, চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গেলেও তুলিকে সঙ্গে নিতে লজ্জা পান। সবার লেখাপড়ার জন্য বাড়িতে মাস্টার আসেন, তুলি পড়ে রান্নাঘরে তার মায়ের কাছে, মায়ের কাজকর্মের ফাঁকে। প্রতি বার অবশ্য ভালো ফলই করে! তবে নীচু ক্লাসে তো সবাই ভালো করে। সোমা মনে মনে গর্ব করে বলে, দাদামশাইয়ের রং শুধু নয়, দাদামশাইয়ের মেধাও যে পেয়েছে মেয়ে! এক পড়া ওকে দুবার দেখিয়ে দিতে হয়না।
বুঝদার মেয়ে, কখনো কখনো ওর মন কি খারাপ হয়না? তখন সোমা মেয়েকে বোঝায়, “কারো কোনো বিদ্রুপ কানে নিবি না মা! তোকে দেখিয়ে দিতে হবে, বাইরের রং কালো হলেও অন্তরটা উজ্জ্বল হতে পারে।”
তুলির এখন ক্লাস নাইন। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে ওর খেলাধুলাতেও ভীষণ আগ্রহ। স্কুলের স্পোর্টসে প্রতি বছর স্বর্ণপদক বাঁধা। ঠাকুমা বলেন, ” একেই কালো মেয়ে, তায় আবার রোদ্দুরে ছোটাছুটি!”
বুদ্ধিদীপ্ত সপ্রতিভ মেয়েটি শিক্ষকদের প্রিয় ভীষণ। ওকে তাঁরা সকলেই সাহায্য করেন প্রয়োজনে। মাধ্যমিকের ফল বের হলো। প্রথম বিভাগ তো বটেই, জেলার মধ্যে প্রথম তুলিকা দত্ত।
জেলা স্তরে কৃতী ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার দেওয়া হবে, তুলির জন্য লাল রঙের চুড়িদার কিনে আনলো সোমা। শাশুড়ির চোখে চোখ রেখে এই প্রথম বলল, “গায়ের রঙে কিছু যায় আসে না।”
লাল পোশাকে ঝাঁকড়া চুলে হর্সটেল বেঁধে মাথা উঁচু করে জেলাশাসকের হাত থেকে শংসাপত্র, বই, নগদ অর্থ দশ হাজার টাকা এবং লাল গোলাপের স্তবক হাতে ভারী উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল কালো মেয়েটাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *