সম্পাদকীয় কলমে — গীতশ্রী সিনহা

সম্পাদকীয়
দিবা নিশি বৃথা-ই দিবস

জাতীয় দিবস ও বিশ্বদিবসের উৎসব ! যাদের জন্য দিবস তাদের কী লাভালাভ ! বড় বড় নেতাদের লম্বা-চওড়া বত্তৃতা তার সাথে তালমিলিয়ে হাতেগরম হাততালি , গালভরা প্রতিশ্রুতি আর পরিকল্পনা । দিবসের উদ্দেশ্যে , নেতাদের উদ্দেশ্যে আপ্রাণ জয়ধ্বনি । তাতে কি সমাজের চরিত্র পাল্টে গেল ?

ক্যালেন্ডার শাসিত আরও অনেক দিবসের মতো ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসকে ভুলতে পারি কোথায় ? আমরা দেখেছি, বিশ্ব শিল্পচেতনার
ঊষাকালে শিল্পী নারীকে প্রথম দ্যাখে মা রূপে । নারী হচ্ছে সম্পূর্ণ আকাশ। তবে কেন কন্যাভ্রূণ হত্যার প্রবণতা ! এই অমানবিকতার প্রতিরোধকল্পে কথা বলে উঠলেন দেশের নারী সংগঠন গুলি। প্রগতিশীল মানুষের সম্মিলিত আন্দোলনের ফলশ্রুতি হিসাবে প্রণীত হলো আইন। দেখুন ,কন্যা ভ্রূণ -এর ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার লড়াই ! very embarrassing !

দু-তিন শতক আগেও নারী মুক্তি , নারী স্বাধীনতা এসবই ছিল শুধুই বইয়ের পাতায় —–আজ উঠে এসেছে মিটিং -মিছিল- সেমিনারে । মনে করি, চিহ্নিত দিনে অন্যান্য উৎসবের মতো পালনের জন্য কিছু দায়বদ্ধতা লুকিয়ে থাকে। নারী আজ স্তম্ভিত -স্তব্ধ!
বর্তমান সামাজিক বাস্তবতায় নারীরা যে পরিমান লাঞ্ছনার শিকার হয়ে থাকেন , তার বৃহদাংশটাই লোকচক্ষুর অগোচরে থেকে যায় । আজ
অভব্য, অশ্রাব্য “ধর্ষণ” শব্দটি অতি অনায়াসে সমাজের বাতাসে ভ্যাপসা গন্ধ ছড়াচ্ছে !
আনুষ্ঠানিকভাবে নারী দিবস পালন করেও প্রতি মিনিটে কয়েক মাসের শিশু থেকে বৃদ্ধাদের অবাধে ধর্ষিতা হয়ে চলেছেন । সমাজ
কতটুকু বোঝে, লজ্জা ধর্ষিতার নয় —–লজ্জা ধর্ষণকারীর । হাসি পায় ভেবে , যৌন লাঞ্ছনা বিরোধী আইন, পণপ্রথা বিরোধী আইন , আবার নারীর নিরপত্তা, অধিকার , স্বাধীনতা, সমান মজুরি সবই নাকি নারীকে দিতে হবে ! কিন্তু দেবেটা কে ? এদিকে প্রতিদিন আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ট্রেনে -বাসে, কর্মস্থলে , বাড়িতে-সমাজের প্রতিটি স্তরে লাঞ্ছিতা হয়ে চলেছেন নারী ।

তাই বলছিলাম , বছরে একদিন নারী দিবসের নামে বড় বড় বুলি না আউড়ে – মনভোলানো প্রতিশ্রুতি না দিয়ে ——ব্যক্তিত্বরা একটু সজাগ হন। প্রতিবাদের বিচ্ছিন্ন ক্ষীণস্বর ছাড়া এই নীরবতার বয়স যে বেড়েই চলেছে ।
কেন সমাজের বিবেক বিভ্রান্ত , একটু ভাবুন !

সব শেষে বলি, যুগের অতলে তলিয়ে যাচ্ছে সভ্যতার পরিবর্তন ! নারী জাতির প্রতি প্রার্থনা, ” নারীর নারীত্ব থাকুক প্রতিটি নারীতে।আধুনিকতার সাথে সভ্যতার গৌরব থাকুক পোশাকে নয় নিজ কর্মে। নারীরা বাচুক মেয়ে মানুষ হয়ে নয় “মানুষ” হিসেবে।

সম্পাদকীয় কলমে — গীতশ্রী সিনহা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *