।। ছোট লোক ।। অণুগল্প / কলমে — মনোজ দাশ

।। ছোট লোক ।।
অণুগল্প / কলমে — মনোজ দাশ

‘জানো, আজ না একটা সাংঘাতিক ব্যাপার ঘটেছে!’
হরিপদ একতাল আলুর চোখা রুটিতে মুড়িয়ে মুখের ভেতর চালান করতে যাচ্ছিল, বউয়ের কথা শুনে থেমে গেল। বলল — ‘কী আবার সাংঘাতিক ব্যাপার হল? কোথায়?’
কালিদাসী গলাটা নীচু করল — ‘বাবুর বাড়িতে।’
— কোন বাবু?
— কোন বাবু আবার! এখন তো একটা বাড়িতেই কাজ করি। মজুমদার বাবু — খুব বড় মানুষ। কত্তো বড় ফেলাট। কোথায় কী যেন কারখানার মালিক।
— ‘হুঁ। তা অদ্ভুত ব্যাপারটা কী হয়েছে?’ — বলতে বলতে রুটি আর আলুর ডেলা মুখের মধ্যে চালান করে দিল হরিপদ।
যেন খুব গোপন কথা বলছে, এমন ভাবে বলল কালিদাসী — দুপুরের খাওয়া শেষ হয়েছে সবে, আমি রান্নাঘরে বাসনকোসন ধোয়াধুয়ি করছি, এমন সময় কলিং বেল বাজল।
গিন্নিমা বলল — ” কে এল দ্যাখ তো কালিদাসী!”
দরজা খুলতে দেখি, তিনটে লোক। একজন বলল –ব্যাংক থেকে আসছি। আমি বললাম, দাঁড়ান। ঘরে এসে গিন্নিমাকে বললাম, ব্যাংকের লোক। শোনা মাত্র কত্তাবাবু লাফিয়ে উঠল। ফিসফিস করে বলল বলে দে, বাড়িতে আমরা নেই। তুই কাজের লোক, একা আছিস। আমি চলে আসছিলাম, বাবু আবার বলল, কিছু কাগজ দেয় যদি, নিবি নে। সইটই করতে বললে করবি নে। বলবি, লেখাপড়া জানি নে। আমি বললাম — লেখাপড়া আমি জানি বাবু। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছি। শুনে বাবু বললেন — জানিস তো জানিস, বিদ্যে দেখাতে যাবি নে। যা বললাম, তাই বলবি। আমি এসে দরজা খুললাম। বললাম, বাবুরা কেউ বাড়িতে নেই। অম্নি একজন বলে উঠল — পালিয়ে কতদিন বাঁচবে? সামনের সপ্তায় দখল নেব এ ফ্ল্যাটের। আর একজন একটা কাগজ দিল আমার হাতে। বলল, তুমিই নাও। বাবুকে দিও।আর একটা সই করে দাও এখানে। আমি বললাম, লেখাপড়া জানি নে। লোকটা ভাল করে দেখল আমাকে। একটু হাসল। তারপর কাগজটা আমার হাত থেকে নিয়ে আঠা দিয়ে সেঁটে দিল দরজায়। মোবাইলে ছবি তুলল, তারপর চলে গেল। ওরা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গিন্নিমা চলে এলেন। কাগজটা তুলে ফেললেন দরজার গা থেকে, তারপর দরজা বন্ধ করে দিলেন। ব্যাংকের লোকেরা কিসের কাগজ এনেছিল জানো?
‘ কিসের আবার! ব্যাংকের লোক যখন, তখন টাকাপয়সার কোনো ব্যাপার হবে। শুনতে তো পাই, ব্যাংকের টাকা না মারলে নাকি বড় লোক হওয়া যায় না। সেরকম কোনো ব্যাপার হবে নিশ্চয়। বড় মানুষের ব্যাপার স্যাপার বলে কথা! ওসব খবরে আমাদের কী কাজ? আমার বলে নিজের চিন্তায় এখন মাথা পাগল।
কেন? তোমার মাথার আবার কী হল?
রিকশার লোনের টাকার এমাসের কিস্তি এখনো দিতে পারিনি। কী যে হবে! বাবুরা বড় মানুষ, ঠিক সামলে নেবে সব, কিন্তু আমরা ছোটলোক, কিস্তি খেলাপি হলে ব্যাংক কী যে করবে!
কাল মাইনে পাব বাবুর বাড়ি থেকে। ওই টাকাটা নাহয় নিও। ব্যাংকের কিস্তি দিও। মেরে দেবে না কিন্তু। পরে শোধ দেবে।

*** ***

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *