কলমে কমল গাঁথা ✒️✒️ হাসি দত্ত

কলমে কমল গাঁথা

হাসি দত্ত

খুব অস্থির একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি…..
চারিদিকে শুধু ভাঙন আর ভাঙন ……
শরৎচন্দ্রের ‘শেষ প্রশ্ন’ পড়ছিলাম …..
শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের নারী চরিত্রগুলোর মধ্যে কমল চরিত্রটি আমাকে টানে বেশী কারন কমলকে বুঝতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাই , আর যতবার হোঁচট খাই ততবার কমলের মুখোমুখি হই……
শরৎচন্দ্র কমলের হাত ধরে প্রাচীর ভাঙার সাহস দেখিয়েছেন ফলে সমাজ আহত হয়েছে অনেক।
কখনও কখনও প্রাচীর ভাঙতে গিয়ে মানুষ ভেঙেছে , হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে …..
পড়তে পড়তে আমারও মন ভারাক্রান্ত হয়েছে ….
তবে আমার এই মানসিক কষ্টের উত্তরও পেয়েছি এই উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে, যেখানে বলা হয়েছে…..

‘সমস্ত বড় বিষয়ের জন্ম তো হাহাকারের মধ্যেই’
অর্থাৎ জন্ম দিতে হলে জন্ম দেবার ব্যথাও হজম করতে হয় ……

কমলকে ভালোবেসে বারবার কমল হতে চেয়েছি কারন তাঁর নির্লিপ্ততা, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সত্যকে সহজরূপে গ্রহণ করবার সামর্থ্য আমাকে আকর্ষণ করে……
এখানে তার একটি উদ্ধৃতি দিই–
” দুঃখ যে পাইনি তা বলিনে কিন্তু তাকেই জীবনের শেষ সত্য বলে মেনেও নিইনি। শিবনাথের যা দেবার ছিলো তিনি দিয়েছেন, আমার পাবার যা ছিল তা পেয়েছি। আনন্দের সেই ছোট ছোট ক্ষণগুলি মনের মধ্যে আমার মণি মাণিক্যের মত সঞ্চিত হয়ে আছে। নিষ্ফল চিত্তদাহে পুড়িয়ে তাদের ছাই করেও ফেলিনি, শুকনো ঝর্ণার নীচে গিয়ে ভিখে দাও বলে শূন্য দু’হাত পেতে দাঁড়িয়েও থাকিনি। তার ভালোবাসার আয়ু যখন ফুরলো তাকে শান্তমনেই বিদায় দিলাম। আক্ষেপ ও অভিযোগের ধোঁয়ায় আকাশ কালো করে তুলতে আমার প্রবৃত্তিই হলোনা…..”

অসাধারণ লেগেছে উদ্ধৃতিটি…..
এই উদ্ধৃতিটির মধ্যে দিয়েই কমল চরিত্রটি একদম নিজস্ব হয়ে গেলো আমার। ভালোবাসা ফুরোলে শান্তমনে বিদায় দিতে পারা যে কতো কঠিন তা আজকের দিনে গুমড়ে থাকা ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক গুলোর থেকেই বুঝতে পারি……
বিয়ে না করেও যে দৃঢ় বন্ধন কমল খুঁজে পেয়েছিলো তা যদি শিবনাথ না পেয়ে থাকে তো সেটা তার ব্যর্থতা তাই বলে কমল তাকে ছোটো করেনি কখনও…..
যাকে একদিনও ভালোবাসা যায় তাকে যে কোনোদিন, কোনোভাবেই, কোনো পরিস্থিতিতেই ছোটো করা যায়না এই সত্যটিই প্রায় মরতে বসেছে আজকাল……
এইভাবেই এই শক্তিশালী নারী চরিত্র , পাঠকের হৃদয়ে জীবনে একবারও অন্তত কমল হয়ে ওঠার গোপন ইচ্ছার বীজ বপন করে গেলেন…….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *