।। আবছায়া ।।

(১ম পর্ব)
গীতালি ঘোষ

পাড়াটা একটু মিশ্র পাড়া। কিছু কিছু হাইরাইজ আছে বটেই, আবার কিছু পুরোনো বাড়িও আছে। রাস্তাটাও বিশেষ চওড়া নয়। বর্ষাকালে একটু জলও জমে কোথাও কোথাও। বড় বড় কিছু গাছ আছে রাস্তার দুপাশে। মাঝখানে ছোট্ট একটা পার্ক আছে, যেখানে বাচ্চারা বিকেলে খেলে, কিছু বয়স্ক মানুষ পাথরের বেঞ্চিতে বসে বিকেলে গল্পগাছা করে। মানুষগুলোর মধ্যে মোটামুটি মৌখিকালাপ দেখা যায়। কিন্তু হয়তো খুব গভীর সম্পর্কে এরা বাঁধা নয়। তবুও একটা পাড়া এটা। পুজোর সময় ছোট করে দুর্গা পুজোও হয়। একত্রে খাওয়াদাওয়াও হয়। ছোটখাটো অনুষ্ঠানও হয় কখনো সখনো।

আজ এই পাড়ায় একটা কাণ্ড ঘটে গেছে। একটা খুন হয়ে গেছে! পাড়ার মাঝখানে একটা দোতলা বাড়ির একতলায় এক ভাড়াটে দম্পতি থাকেন। সেই বাড়ির মহিলাটি খুন হয়েছেন! উপরে থাকেন বাড়িওয়ালা তার পরিবার নিয়ে। নিচে শুধু স্বামী-স্ত্রীর বাস, কোন সন্তান-সন্ততি নেই। পাড়ার অনেক মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাড়িটার সামনে। নানা গুঞ্জনে চারিদিক মুখরিত।

আমি, সুনীতা রক্ষিত, প্রাইভেট ডিটেকটিভ শৌণক মুখার্জির অ্যাসিস্ট্যান্ট, পুলিশের সঙ্গে বাড়িটিতে ঢোকার আগে চারিদিকটা একটু নজর করলাম। দরজা খোলা, সিঁড়িতে বসে স্বামীটি দুহাতে মুখ চেপে রেখেছে, মনে হয় খুবই কান্নাকাটি করছে। বাড়িওয়ালা শ্যামল বসু নেমে এসেছেন। পুলিশ কাউকেই ভিতরে যেতে দেয়নি।

আমি সব দেখেশুনে ভিতরে ঢুকলাম। সামনের ঘরটাই বসার ঘর, পরিপাটি সাজানো।আমি ঘরটির এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরে দেখলাম। তারপর প্রথম বেডরুমে ঢুকেই সেই নির্মম দৃশ্যটি দেখলাম! চাপ চাপ রক্তের মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে আছে একটি মেয়ে, পরনে সালোয়ার কামিজ,– ও গুলোতেও ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। এলোমেলো চুলগুলোতেও রক্ত শুকিয়ে জমাট বেঁধে রয়েছে। পুলিশের দলটি তাদের কর্তব্যকর্ম করছে। নানা অ্যাঙ্গেল থেকে ফটো তোলা হচ্ছে, কোথাও কোন হাতের ছাপ পেল কিনা পরীক্ষা করে দেখছে। সকলেই অত্যন্ত ব্যস্ত সমস্ত।

আমার পুরো মনোযোগ ঘরের আশেপাশে। খুনের কোনরকম ক্লু কি কোথাও লুকিয়ে রয়েছে? চাদরটা একটু এলোমেলো, বিছানা থেকে নামতে গিয়ে এমনটা হয়তো হয়েছে। সাইড টেবিলে একটা গ্লাসে জল রয়েছে ঢাকা দেওয়া। দেওয়ালে দুটো মাত্র ছবি -- একটা নীল আকাশে উড়ন্ত বকের সারি, আর অন্যটি এই বাড়ির স্বামী-স্ত্রী যুগলের হাস্যমুখী ছবি। পুলিশের তরফ থেকে ঘরের বেশ কিছু জিনিস  তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার এখানে তেমন কিছু চোখে পড়লো না। 

  এবার বডি তুলে নেওয়ার জন্য বডিকে সোজা করা হলো। দেখলাম মাথাটা রক্তে ভাসাভাসি, মুখে রক্তের ধারা শুকিয়ে গেছে প্রায়।  কব্জির কাছে একটা কালো দাগ আমার চোখে পড়লো। বোঝাই যাচ্ছে যে  মাথায় আঘাত পেয়েই এর মৃত্যু হয়েছে। বডি ওরা গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল। আর মেঝের ওই জায়গা বরাবর পুলিশ গণ্ডি কেটে দিল। আমিও বেরিয়ে এলাম। পুলিশ ওই ঘরটাকে সীল করে দিল।

( চলবে )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *