* ভুবনেশ্বর হে * _____ গীতালি ঘোষ

    * ভুবনেশ্বর হে *
                           গীতালি ঘোষ

ত্রিভুবনেশ্বর যে আজ রথারূঢ় হয়ে পথে বেরিয়েছ, মনে কি পড়ে তোমার সেই দিনটির কথা, যেদিন  এমন করেই রথে চড়ে ফেলে এসেছিলে তোমার বৃন্দাবনের মাটি? তোমার সেই চলে যাওয়ার মুহূর্তে, যে পড়ে রইল পিছনে, কখনো সেই কাজল কালো আঁখিযুগল তোমার স্মৃতিতে ভাসে না? কতকালের হাসি খেলা, যমুনায় নৌকাবিহার, কুঞ্জে কুঞ্জে শত লীলা, চোখে চোখে কত না সংকেত…. সব কেমন করে হারিয়ে ফেললে তুমি,  জগতের নাথ?
সেই একজন নীলাম্বরীর মান ভাঙানোর জন‍্য একসময়ে তুমি কী না করেছ, জীবনের কতখানি সময়  অখণ্ড ভালোবাসার স্রোতে ভেসেছ… সেসব কি একবারও মনে করতে নেই? ঈশ্বরত্ব লাভ করেছ তুমি…. তাই তো তোমার রাজত্বে তাকে ডাকোনি, পাছে কর্ম করতে গিয়ে তোমার মনঃসংযোগ ব‍্যাহত হয়? রাজকার্যের আবর্তে খেয়ালই করনি তুমি যে, শুধু তোমার জন‍্য, তোমারই দেওয়া মালাখানিকে বুকে জড়িয়ে সে অভাগিনীর দিন কেটেছে! একা একা যমুনার তীরে শূন‍্য কলস নিয়ে সে বসে থেকেছে! যদি কখনো তোমার দেখা পায়, সে আশায় তার ধূলিধূসরিত জীবন নিয়ে একলা কেটেছে তার দিনরাত্রি।

তোমার চারপাশে কত লোকজন, কত প্রিয় মুখ, তবুও তো তোমার দ্রবীভূত হৃদয়কে লুকিয়ে রেখে তুমি একলা চলেছ রথে। তুমি কী পথের লোকারণ‍্যে সেই অশ্রুসিক্ত চোখদুটিকে খোঁজো আজও? রথের রশিটি তো চলে সময়ের হাত ধরে। রুদ্ধ মন্দির থেকে দুহাত বাড়িয়ে কী তুমি তারই সন্ধানে বেরোও রথে সমাসীন হয়ে? সহস্র মানুষের মাঝে তোমার দৃষ্টি কি তোমার একদা ফেলে আসা বৃন্দাবনের প্রিয়াকেই খুঁজে বেড়ায়, জগতপতি? তবে কী তুমিও মনে মনে তারই মতন একলা, নিঃস্ব? তাহলে কী রথযাত্রার সব পথ এসে মিলে যায় সেই বৃন্দাবনের পথে, হে জগন্নাথ?
*********  গীতালি
( আমার চোখে রথযাত্রার এক অন‍্য মাহাত্ম‍্য )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *