// ভাত — Series পূর্বা মাইতি

// ভাত — Series

পূর্বা মাইতি

#পাঁচ

আজ সকাল থেকে কাজলের আনন্দের সীমা নেই। আজ যে রথযাত্রা। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা — দাদাবোন তিনজনে মিলে একসঙ্গে ভক্তদের দর্শণ দেওয়ার দিন।
কাজলও আজ বড়দার সাইকেলে সওয়ার হয়ে রথের মেলা দেখতে যাওয়া মনস্হ করেছে।
তবে বড়দার সাইকেলে বন্দোবস্ত না হলে ছোড়দার সাইকেল আছে। এই অপসনটা থাকার ফলে কাজলের একটু বাড়তি সুবিধে আছে। তাই মা ছাড়া কোথাও যাওয়ার হলে কোন না কোনো শর্তের বিনিময়ে কাজল দুজনের একজনকে তো পেয়েই যায়।
এদিকে আকাশে হালকা চালে রোদ বৃষ্টির খেলা চলেছে।
বিকেল হতে না হতেই সোনা রোদ ঝিকিমিক করে উঠলো। তড়িঘড়ি করে কিশোর বড়দার সাইকেলে ছোট্ট কাজল চেপে বসলো। গলি ছাড়িয়ে ঘন্টি বাজিয়ে সাইকেল বাস রাস্তায় এসে পড়লো।
কাজল সাইকেলের পেছনে বসে মহানন্দে দোকান পাট, লোকজন দেখতে দেখতে চললো।
মেলা যাওয়ার পথে পড়ে মোল্লা জীর মাংসের দোকান। পাঁঠা কাটা তো হয়েই চলে। আজ এই প্রথমবার কাজলের নজরে পড়লো। কাজল মাগো বলে বড়দাকে জাপটে ধরলো।
বড়দা কাজলকে যতোই বোঝায়…
আরে মাংস কাটছে তো কী হয়েছে । বাড়িতে যে মাংস রান্না হয়, ওটাই তো! কিন্তু কাজল হঠাৎ যেন চুপসে গেলো।
দিঘীর পাড়ে মেলা বসেছে। নানান জিনিসে, নানান জায়গার মানুষে — রথ দেখা কলা বেচা হয়েই চলেছে। একটা মনোহারি দোকানের পাশে বড়দা সাইকেল এনে দাঁড় করালো। এখান থেকে দিঘির জল টলমল দেখা যায়।
বড়দা কাজলকে বললো —
তুই এখানে একটু বোস। আমি জিনিসগুলো কিনে নিয়ে চট করে চলে আসবো। ঐ যে দূরে রথে চড়ে জগন্নাথ দেব। তুই এখান থেকে দেখতে থাক। এখনি রথ টানা শুরু হবে। আমি আসছি।
ছোট্ট কাজল গুটিসুটি মেরে পাড়ে বসে দিঘীর জলে তাকিয়ে রইলো। ওর আর কিছুই দেখতে ভালো লাগছেনা।
তখনকার দিনে অজানা আশঙ্কা বোধহয় শিশুমনে গাস করেনি। নাহলে কিশোর ছেলেটা নিশ্চিন্তে জিনিস কিনতে চলে যায় আর ছোট্ট মেয়েটি দাদার কথামতো দিঘীর পাড়ে বসে থাকে জলের দিকে চেয়ে ….

চলবে ….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *