মিরুজিন আলো পর্ব – নয় ✒️✒️ -বিজয়া দেব।

মিরুজিন আলো
পর্ব – নয়
-বিজয়া দেব।

জয়মাল্য এসব ভুলে থাকে। সময় অনেক কিছু ভুলিয়ে দেয় আবার স্মৃতি সময় বিশেষে অতীতটাকে জাগিয়ে দেয। অবাঞ্ছিত অবস্থান কষ্ট দেয়। আবার বাস্তব বলে – সব ভুলে যাও, শুধু আমাকে দ্যাখো। অন্নপূর্ণা ভালবাসা পায়নি স্বামীর কাছে। সে তার ছেলেদের ভালবাসে। এতেই সে সুখী। ছেলেরাও মাকে ভালবাসে। এই যে ক’দিন থেকে সে একটি সন্দেহভাজন লোককে নিয়ে আঁতকে আঁতকে উঠছে, ভয়ের ভেতর দিয়ে চলছে তার দিনরাত সেটা সে অন্নপূর্ণাকে বলতে পারে না।
সকালবেলায় পার্বতিয়া একটা সোনার হার নিয়ে এসেছে। বাড়িতে তার স্বামী অসুস্থ। অন্নপূর্ণার চোখদুটো হারের দিকে, চকচক করছে। বন্ধকী বস্তু ক’ জন আর ছাড়িয়ে যেতে পারে! হারটা বেশ ভারী মনে হচ্ছে। পার্বতিয়ার স্বামী মনোহরলালের মুদিখানা ছিল। এখন সে বিছানায় অনেকদিন হয়ে গেল। ছেলেটা মানুষ হয়নি। ব্যবসা লাটে উঠেছে। অন্নপূর্ণা তাকে ইশারায় ডাকছে। অন্নপূর্ণা জানে এই ভারী পুরনো সোনার হার তার হস্তগত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। পার্বতিয়ার শরীর ভালো নয়। ভারী কোমরটাকে টেনে টেনে টাকা ধার নিয়ে গেল। অন্নপূর্ণার মুখে খুশি উপছে পড়ছে। জয়মাল্যর মনে হল গলা টিপে হত্যা করে ঐ লোভী অসুন্দর মুখটিকে। যতসব অপছন্দের বেড়াজালে আটকে পড়ে এভাবে হাঁসফাঁস করতে করতে সে বাকি জীবনটা কাটাবে? হঠাৎ মনে হল ওপাশের সবজি ক্ষেতে একটা লোক। কে লোকটা? অন্নপূর্ণা কাজে লাগিয়েছে? সহজে টাকা হাত দিয়ে বেরোয় না যার সে কি সবজিক্ষেতে লোক লাগিয়ে কাজ করাবে? আগে জয়মাল্যকে বলত অন্নপূর্ণা সবজিক্ষেতে কাজ করার জন্যে। জয়মাল্য ওসবে যায় নি। তাই নিজেই করে নেয় অন্নপূর্ণা। জয়মাল্য এগিয়ে গেল সবজিক্ষেতের দিকে। আশ্চর্য কেউ নেই। অথচ স্পষ্টই একটা লোক সে দেখেছে। এবার মনে হল একই আদলের মানুষ সে যেন রোজ দেখছে। ঐ একই রকমের আবছায়া মাজা মাজা গায়ের রং, কিছুটা আঁধারে – ছোপ লাগানো অবয়ব একেই তো বারবার দেখছে সে। কে লোকটি? সে এখানে আসতে আসতেই পালিয়ে গেল? অন্নপূর্ণার সবজিক্ষেত তো দিব্যি হয়েছে। একপাশে একটুকরো জমিতে হলুদ সর্ষেক্ষেত, একটা সবুজ লাউগাছ তরতর করে মাচানে উঠেছে। সবজিক্ষেতকে টুকরো টুকরো করে আলাদা আলাদা ক্ষেত করেছে অন্নপূর্ণা। আলু কপি বিন পেঁয়াজ। বেশ ভালো লাগছে তার। ঘন সবুজ আর হলুদের বাহার। ঠান্ডা একটা হাওয়া বইছে। সামনেই শীতঋতু। আচ্ছা, চেষ্টা করলে কি অন্নপূর্ণাকে ভালবাসা যায়? যারা নেই, যারা চলে গেছে আর যারা আছে তাদের মাঝখানে একটা দেয়াল তুলে দিতে পারলে সে বেঁচে যেতে পারে হয়ত।
ইশকুলে স্টাফরুমে জয়মাল্য পরীক্ষার খাতা দেখছিল। ছাত্ররা কত কী লেখে! কিছু কিছুর তো মাথামুন্ডু নেই। এরমধ্যে একটি ছাত্র লিখেছে যে পাপ করে সে যখন তখন কালো ছায়া দেখে। পাপ ও পুণ্য নিয়ে একটা amplification ছিল। ভেতরটা চমকে উঠল জয়মাল্যর।
(ক্রমশ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *