# গল্প # শিরোনাম-ওম। # কলমে-ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।

# গল্প
# শিরোনাম-ওম।
# কলমে-ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।

পূর্ব-দক্ষিণের খোলা বারান্দায় চায়ের কাপ হাতে বসেছে দেবব্রত। পায়ের কাছে সকালের নরম রোদ লুটোপুটি খাচ্ছে। শীতসকালের এই উষ্ণ আমেজ তার সত্তর বছরের শরীরে আরামের হাত বোলায়। সামনের ফুটপাতে ভিখারীদের সংসারের শিশুদের মধ‍্যেও তপনতাপ গায়ে মেখে নিজেদের ছায়ার সঙ্গে নৃত‍্যখেলার নিত‍্য মাতন শুরু হয়েছে।ওদের দেখে ছেলেবেলার স্মৃতি আলোড়ন তোলে মনের মধ‍্যে। ভোরের কুয়াশার মধ‍্যে দাদুর পেছনে ছুটছে দামাল দেবু। -“খাজুরির রস খাবানে দাদুভাই?”- দাদুর প্রশ্রয়ের হাসি। পেছনে মায়ের ডাক-“দলুইটা গায়ে জড়ায়ে যা দেবুউউ”– শীতকালে দেবুর আব্দার মায়ের কাছে-” মা, পুলিপিঠা করবা না?”-আজ স্মৃতিই শুধু সম্বল। মেদুরতায় আচ্ছন্ন, বিপত্নিক, নিঃসঙ্গ বৃদ্ধের একমাত্র অবলম্বন সহকারী সেবক সনাতন। সনাতনের ডাকে চমক ভাঙে দেবব্রতর। -“বেলা গইড়ে যেইচে বাবু। চ‍্যান খাবা সারতি হবেনে? আমারও তো বয়স হইনচে,”- পরম যত্নে তাঁকে তেল মালিশ করে স্নানে পাঠায় সনাতন। দুপুরে গিজার-গরম জলে স্নান করে ভাত খাবে দেবব্রত। রাতেও খাওয়া সেরে রুমহিটার চালিয়ে লেপের উষ্ণ আলিঙ্গনে তলিয়ে যাবে সে। দিনগত পাপক্ষয়।

দেবব্রত সান্ধ‍্যভ্রমণ সেরে ফেরার পথে দেখে ফুটপাতবাসীরা জড়ো করেছে কাঠকুটো, আগুন জ্বেলে গোল হয়ে বসে সেঁকে নিচ্ছে হাত-পা,প্রাকৃত অগ্নি-উত্তাপে। ওদের গায়ে ছেঁড়াফাটা সোয়েটার, মলিন চাদর।শিশুগুলি মায়ের বুকে লেপ্টে শুষে নিচ্ছে মায়ের বুকের ওম। দেবব্রতর ইচ্ছে করে কোন যান্ত্রিক তাপ নয়,ঐরম করে ওদের মধ‍্যে বসে প্রকৃত আগুনের আমেজ উপভোগ করতে। পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় দেবব্রত, দুহাতের আঙুলগুলো মেলে ধরে ফুলের মতো। মনে পড়ে নিজের শৈশবকে। এমনভাবেই মায়ের বুকে শীতের আমেজ নিতো সে। হঠাৎই পাড়ার সুবীরবাবু ডাকেন,-“কী হলো দেবুদা? আগুন পোয়াতে ইচ্ছে করছে? আমারও করে। কিন্তু ওরা তো ওদের তাপের ভাগ আমাদের দেবে না।”- -” কেন দেবে না সুবীর?”– –“কেন দেবে বলুন তো দেবুদা? আমরা আমাদের সুখের ভাগ কখনো কী ওদের দিই? আজ কোন মুখে চাইবো দাদা? চলুন,বাড়ি চলুন।”–দুই বৃদ্ধেরই চোখের কোনে অশ্রু জমে। বাড়ি ফিরে লেপের তলায় শুয়ে কেঁদে ফেলে বৃদ্ধশিশুটি। -“মাগো,শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আমায়। বড্ডো শীত করছে মা”-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *