“কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে গিয়ে অসূচি অবস্থায় ঠাকুরের জন্য ভোগ রান্না করেছিলেন মা সারদা। ” ✍🏼✍🏼 মৃণালিনী ভট্টাচার্য

“কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে গিয়ে অসূচি অবস্থায় ঠাকুরের জন্য ভোগ রান্না করেছিলেন মা সারদা। “
✍🏼✍🏼 মৃণালিনী ভট্টাচার্য

সুদূর অতীত কাল থেকে আমরা শুনে আসছি ঋতুস্রাবের সময় মেয়েরা থাকে অসুচি। এই সময় মেয়েদের ঘর থেকে বের হতে নেই, পুজো করা বারণ, গুরুজনদের জন্য রান্না করা বারণ, তাদের খেতে দেওয়া বারণ। তারা যেন অস্পৃশ্যের মতো এক কোণে পড়ে থাকবে। আমাদের সমাজ তাই শিখিয়েছে আমাদের। বড় বড় শাস্ত্র পড়ে যারা পন্ডিত হয়েছেন তারাই এমনটা বলেছেন। এ সময় মেয়েদের স্পর্শ করাও পাপ। এমন ধ্যান-ধারণা বহুদিন আগেকারের।

তবে বর্তমানেও যে সমাজ কিছুটা পাল্টেছে এমনটা পুরোপুরি বলা যায় না। সমাজ যতই এগিয়ে যাক মেয়েরা যতই চাকরি করুক, ছেলেদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার চেষ্টা করুক, মাসে ওই চারটে দিন সমাজের আর পাঁচটা লোক তাদেরকে বুঝিয়ে দেয় যে সে মহিলা। যতই সে চাকরি করে সংসার অফিস সামলাক না কেন ওই চারটি দিন সে সেই পুরনো ধ্যান ধারণা নিয়ম মানতে বাধ্য। কিন্তু শুনতে অবাক লাগে এই সমস্ত নিয়মের উল্টো পথে হেঁটে ছিলেন সারদা দেবী। সেই সময় দাঁড়িয়ে এই কাজটি করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। মাসের ওই দিনগুলিতে তিনি রান্না করতেন, পূজা করতেন, স্বামীর সেবা করতেন। কোন কিছুই শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব কে না জানিয়ে তিনি করেননি।
স্মৃতিকথা পড়ে জানা যায় একবার শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভয়ানক পেটের সমস্যা হয়েছিল। তিনি কোন রকম মসলাযুক্ত খাবার খেতে পারছিলেন না, তাই জন্য মা সারদা তার জন্য হালকা ঝোল, শুক্তো বানিয়ে দিতেন। কিন্তু মাসের ওই তিন দিন মা তো রান্নাঘরে ঢুকবেন না তখন খাবার আসতো মন্দির থেকে, কিন্তু সেই মন্দিরের খাবার খেলেই ঠাকুরের পেটে অসুখ বেড়ে যেত। ঠাকুর তখন অভিযোগের সুরে মাকে বলেছিলেন মা রান্না করেননি বলেই ঠাকুরের পেটে অসুখ বেড়ে গেল। তখন মা ঠাকুর কে বুঝিয়ে বলেছিলেন মেয়েদের এই অসুচির তিনদিন রান্না করতে নেই, সেই শুনেই ঠাকুর বলেছিলেন ” মনই সূচি অসুচি শরীরে সুচি হয় না “।

এইভাবে দীর্ঘদিনের কুসংস্কারের কুঠারাঘাত করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ এবং মা সারদা দেবী। অতদিন আগে তারা যদি বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সমাজ কেন বুঝতে পারবে না। এখন তো সমাজ অনেক বেশি শিক্ষিত,শিক্ষার আলো যত বেশি প্রবেশ করবে মানুষের মনে, তত বেশি কুসংস্কার দূরে চলে যাবে। এই সত্যই তো এতদিন ধরে মানুষকে শিখিয়ে আসা হয়েছে। শিক্ষাই একমাত্র পুরনো ধ্যান ধারণা পুরনো আবর্জনাকে সরিয়ে দিয়ে নতুন আলো দেখাতে পারে। তবে আমরা কি শুধু পুঁথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি? সমাজের বোধোদয় কবে হবে? এ প্রশ্নের উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। মায়ের এই সাহসী পদক্ষেপ ছড়িয়ে পড়ুক নতুন প্রজন্মের উপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *