অনুগল্প: *বিশ্বাস* *নীহার কান্তি মন্ডল*
অনুগল্প: *বিশ্বাস*
*নীহার কান্তি মন্ডল*
বিশ্বম্ভরের অন্ত্যেষ্টির দিন তাঁর উদ্দেশ্যে ভোগ সাজাতে গিয়ে বউমা থালায় দু’পিস্ ইলিশ মাছের পেটির মাছ তুলতেই পাশ থেকে বিশ্বম্ভরের স্ত্রী বিলাসীবালা দেবী খ্যাঁক করে উঠলেন –” বউমাআ, তুমি জানো না — তোমার শ্বশুর মশায় ইলিশের গ্যাদা আর লেজের মাছ খেতে ভালোবাসে?
থতমত খেয়ে অপ্রস্তুত বউমা বললো – “মা, ভাবছিলাম আজ তো অনেক মাছ — তাই বাবাকে – – ”
কথা শেষ করতে পারে না বউমা, আবার শাশুড়ির ধমক —
“ভেবে আর কাজ নেই বউমা। যা বলছি শোনো, দুই পিস লেজ আর গ্যাদার মাছ তুলে দাও প্লেটে।”
কেরানি বিশ্বম্ভর বিয়ের পরে যেদিন প্রথম ইলিশ এনেছিলেন — সেদিন বিলাসী বালা বলেছিলেন — “আমি ইলিশের লেজ আর গাদার মাছগুলো খাই না। ”
নবাগতা স্ত্রীর কথা শুনে বেচারা আদিখ্যেতা করে বলে ফেলেছিলেন –“আমি ইলিশের লেজ আর গ্যাদার মাছ খেতে খুব ভালোবাসি — ওগুলো আমাকেই দিও।”
সেই থেকে বিশ্বম্ভরের লেজ ও গাদার মাছ খাওয়া শুরু — মৃত্যুর পরেও যা থেকে নিষ্কৃতি নেই।
বিবাহিত জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রে বিশ্বম্ভরকে সন্দেহ ও চরম অবিশ্বাস করে গেছেন বিলাসীবালা। এর জন্য বিশ্বম্ভরকে লাঞ্ছনা গঞ্জনাও কম সহ্য করতে হয়নি। অথচ অদ্ভুতভাবে ইলিশের লেজ ও গ্যাদার বেলায় একবারের জন্যও জীবনে তার বিশ্বাস টলে নি।
একেই বোধহয় — বলা যায় “সুবিধাবাদী বিশ্বাস”
বেচারা!!
সারাজীবন কলুর চোখ বাঁধা বলদের মতো খেটেই গেল ।