শিরোনাম : ফুলমণির আত্মকথা——— কলমে : রুমকি তরফদার

শিরোনাম : ফুলমণির আত্মকথা———
কলমে : রুমকি তরফদার

ঊসব ‘মে দেবস’ টেবস আমি বুঝিলাই গো বাবু,
সাইরাদিন খাইটে খাই
নাম আমার ,’ফুলমণি সোরেন’ বটেক,
সাইরাদিন গরম পিচের রাস্তায়
হাঁইটি আর হাঁইটি——–
গরম পিচ দেখিছিস তো!
যেইটা দিয়া রাস্তা তৈয়ার হয়,
তুরা যে রাস্তা দিয়া গাড়ি চালাস্
মাথথার উপর গনগনে সূর্যের তাপ ,
পাইয়ের নীচে টগবগে পিচ্ ,
আর মাথথায় পাথরের বুঝা,
বড় কষ্ট হয় রে !
শইরীরে গরম ঘামের দরদরানি ৷

মুর সামনে দাঁইড়িয়ে কথা বুলতেও যে, ভদ্দরনোকেরা ঘেন্না পায়
আমি নাইকি নুংড়া,গায়ে গন্ধ ,
তা কি কুরবো বল ,
সাইরাদিন এই কাম কইরা,
গা কি আর পুরিষ্কার থাকে বটে?
আর কাম না কইরাও যে উপপায় নাই,
ঘরে অসুস্থ মরদ ,
কারখানায় কাম করতো বটে,
কারখানাটা বন্ধ হই গেলো ,
কাজ চইলা গেলো,
মদ গিইলে গিলে……..
শরীরটা এক্কেবারে শেষ করি ফেলিছে-
তিনডা ছোট্ট ছোট্ট মাইয়া,
দুই ,তিন ,সাত পরপর-
আমি কাম না কুরলে,
ওদের প্যাট চইলবে কেমনে ?
উই প্যাটের লাগিই তো সব—-
আর মা-বাপ লিখখাপড়াও শিখাইনিকো,
যে তুদের মতো চাকরি করি খাইবেক,
তাই,দুইশো টাকা ‘দিন্ ‘,
এই কামে লাগিছি বটে ৷
ভিন দ্যাশে একখান ভাই ছিল বটেক,
কিছু ট্যাকা পাঠাইতোক মাঝে মধ্যি-
সেও তো ভয়ে গেলোবার দেশে ফিরতি গেলো,
ঐ লকডাউনে সব বন্ধ হই গেলো না !
শুনলাম রেললাইন ধরে হাঁটতি হাঁটতি
ট্রেনের ধাক্কায়—————
সব শেষ হই গেলো !
বউ,বাচ্চা,হগ্গলে শ্যাষ হইছে,
তুরা আবার ঘটা করে
পরিযায়ী শ্ররমিক নাম দিছিস নাকি?
ক্যামন যেনো পাখ্খি পাখ্খি মনে হয় নামটা শুইনলে,
এইলো আর গ্যাইলো,ওই দু’দিন তুদের খব্বরের পাতায়-
তারপর কুনহু লোক আর তার সংসারের
খব্বর রাখে না,
সব তুদের ঐ গদি পাওয়ার খেলা———
আর আমাদের গত্তর আছে য’দ্দিন!

আচ্ছা,বল দিকিনি ,
তুদের ওই কি শ্ররমিক দেবসে,
একখাইনা মিষ্টির প্যাকেত লিয়ে,
আমার কি হইবেক?
পাইরবি আমার মরদটারে কাম দিতি
আর মদের ঠ্যাকগুলা ভাঙতি?
পাইরবি আমার ভাইটারে ফিরাই দিতি?
আমার ছাইলা-মাইয়াগুলানকে
দামী ইস্কুলে বিনা মাইহিনায় পড়াইতে,
বাসায় তুদের পাশে বসাইতে?
আমাদের একটু আরাম দিতি পাইরবি রে?
পাইরবি সাইরাবছর প্যাট ভরাইতে,
দুবেলা দু’মুইঠা গরম ভাইত দিতেক ?
বাবু, শুইধু দুবেলা দু’মুইঠা ভাইত……..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *