সোনার কেল্লা / বাণী চন্দ দেব।

সোনার কেল্লা / বাণী চন্দ দেব।
———————————————-
সেই একরত্তি বয়সে যখন মা’র হাত ধরে সিনেমাহলে ” সোনার কেল্লা ” দেখা হলো, তার রেশ বেশ কয়েকদিন মনের মধ্যে রয়ে গেলো।
সত্যজিৎ রায় এর লেখা ” সোনার কেল্লা ” প্রকাশিত হয় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে। ১৯৭৪ সালে চলচ্চিত্র হিসেবে এটি মূক্তি পায়। সিনেমাটি দেখার পর মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন জাগলো, মুকুল বলে সত্যি কেউ আছে যে কিনা জাতিস্মর? জাতিস্মর কি সত্যি হয়?
ষাটের দশকে এক জাতিস্মর ছেলেকে নিয়ে হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় গবেষণা করছিলেন। তার উদ্যোগে কোলকাতায় প্যারাসাইকোলজি সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। যাার অফিস ছিলো লালমোহন ভট্টাচার্য রোডে। এর আজীবন সদস্য ছিলেন উত্তম কুমার, সত্যজিৎ রায় ইত্যাদিরা। সোসাইটির মাধ্যমে হেমেনবাবুর গবেষণার সাথেও অনুসন্ধিৎসু সত্যজিৎ একটু একটু করে পরিচিত হয়ে উঠলেন। সত্যজিৎ এর ” সোনার কেল্লা ” ছবির জাতিস্মর মুকুল চরিত্রের পিছনে লুকিয়ে ছিল রাজস্হানের প্রভু নামের একটি ছেলে। বলাই বাহুল্য প্যারাসাইকোলজিস্ট ডঃ হেমাঙ্গ হাজরার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছিল জয়পুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর চরিত্র।
জয়সালমের এ এখন যাকে আমরা ” সোনার কেল্লা ” নামে জানি তার প্রকৃত নাম ছিল ত্রিকুট গড়। যেটি এখন বিশ্বের একমাত্র Living Fort বলা যেতে পারে। ১১৫৬ সালে ভাট্টি রাজপুত রাজা জয়সাল লো দুর্বা থেকে রাজ্যপাট গুটিয়ে এনে ত্রিকুট পাহাড়ের চূড়ায় জয়সালমের দুর্গ তৈরী করেন। শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন রাজা তার নিজের নামে। এখানে বর্তমানে প্রায় ৩০০০ লোক বাস করেন।
ঢালু পথ বেয়ে পাঁচটি ফটক পেরিয়ে মূল দূর্গে প্রবেশ করা যায়। প্রধান চত্বরের একপাশে আছে প্রাসাদ, আরেকদিকে জৈন মন্দির। এছাড়া সরু সরু গলি ধরে এগোলেই দুদিকে সোনালী রংএর পাথরের নকশা খোদাই করা বাড়িঘর চোখে পড়বে। ওখানকার বাসিন্দারা পর্যটকদের জন্য ধাতু, পাথর,কাঁচ, কাঠ,কাপড়ের তৈরী পুতুল, পোশাক, গয়না ইত্যাদির পশরা নিয়ে বসে আছে। একসময় মিশর, আফ্রিকা, আরব, পারস্য ও ইওরোপের সাথে বণিজ্য পথের নিয়ন্ত্রক ছিল এই জয়সালমের। এখানকার স্হাপত্যে ইসলামী এবং রাজপুত ঘরানার মেলবন্ধন ঘটেছে। বর্তমানে এর আয়ের মূল উৎস পর্যটন ব্যবসা। এ ব্যাপারে সত্যজিৎ রায়ের এক বিরাট ভূমিকা আছে। কেন? তা একটু বুঝিয়ে বলি। ” সোনার কেল্লা ” ছবির স্যুটিং জয়সালমের এ হওয়ার পর এর নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো, ছড়িয়ে পড়লো ত্রিকুট পাহাড়ের কেল্লাটির নামও, যা এখন সোনার কেল্লা নামে পরিচিত। আগে এই শহর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খুব একটা পরিচিত ছিলো না। এখন এটি পর্যটক আকর্ষন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আর তাই সত্যজিৎ রায়কে ওরা ভগবানের মতো মানে। বাঙালিদেরও বেশ শ্রদ্ধার চোখে দেখে।

***

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *