// মিনিট দশেক // পূর্বা মাইতি

// মিনিট দশেক //

পূর্বা মাইতি

আজ নীপা অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরোবার জন্য, অফিসে তাই সাত তাড়াতাড়ি ঢুকে গিয়েছিল।
সবে সবে পার হওয়া ফার্স্ট এ‍্যানিভার্সারির গন্ধ গায়ে লেগে। এর মধ্যে বান্ধবী রাকার বিয়ে। অমিতকে নিয়ে একসঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছে। তাই আজ এ‍্যাতো তাড়া।
ডট ছটায়, যেন এক ঝটকায় ও সেভেনথ্ ফ্লোর থেকে বেরিয়ে লিফটে ঢুকে গেল। হাসব‍্যান্ড অমিত নীপার আগেই ফ্ল‍্যাটে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে নেবে।
লিফট থেকে নেমে তন্বী নীপা অটোস্ট‍্যান্ডের দিকে পা চালালো। স্ট‍্যান্ড কাছেই। রানিং অটোও ধরা যায়।
ওই তো একটা।
এ‍্যায় এ‍্যায় অটো। না না বেরিয়ে গেল।
ব‍্যাস,নাও ঠ‍্যালা। এবার লাইন দাও! অনেকটা দেরি হয়ে যাবে তাহলে। অগত‍্যা।
ভাবতে ভাবতে নীপা স্ট‍্যান্ডে এসে লাইন দিয়ে একটা অটোয় উঠে বসলো। করোনাকালে ঝামেলা কাকে বলে নীপার মতো অফিস যাত্রীদের গা সওয়া হয়ে গেছে। মাস্ক, ব‍্যাগ সব কিছু ঠিকঠাক করে পেছনের সিটে নীপা বসলো। মোবাইলটাও একবার টিপে দেখে নিয়ে ব‍্যাগের চেন আটকে দিলো।
অমিত এইবার ফোন করা শুরু করবে।
যা দেরি হয়ে যাচ্ছে!
আরে তাড়াতাড়ি বেরোবো বললেই তো আর বেরোনো যায় না। মিটিং ছিল। তাও বাঁচা গেছে, ছটার আগে শেষ হয়ে গেছে।
অটো স্টার্ট দিল। মুখে ঝাপটানো চুল বাঁ হাতে সরাতে সরাতে নীপার পাশের সিটের দিকে চোখ চলে গেল। নীপা এতক্ষণ নিজের মনেই মশগুল ছিল। খেয়াল করেনি পাশের জনকে।করোনার জন্য উনি বেশ সাইডেই সরে বসেছেন।
চোখাচোখি হতেই — স‍্যার আপনি এখানে? না মানে এভাবে?
ততক্ষণে স‍্যার বাবাজী কাঁচুমাচু !
নীপা পাশের ভদ্রলোককে আবার আমতা আমতা করে বলল — কোন কি প্রব্লেম হয়েছে স‍্যার?
আমি কি কোন হেল্প,না মানে যদি লাগে —
স‍্যার বাবাজী– না না। তেমন কিছু না।আসলে আজ গাড়িটা হঠাৎ একটু গন্ডগোল করছে। ড্রাইভার ওটাকে নিয়ে ব‍্যস্ত। তাই —
নীপা — স‍্যার একটা ক‍্যাব বুক করে নিলেইতো পারতেন। আসলে আপনার তো অভ‍্যেস নেই এভাবে যাতায়াত করার।
বলতে বলতে নীপার নামার স্ট‍্যান্ড এসে পড়ল। নীপা অটো থেকে নেমে চালককে ভাড়া দেওয়ার ফাঁকেই পাশের ভদ্রলোককে নিমেষের মধ‍্যে ঘাড় নিচু করে আবার বলে নিল —
স‍্যার আপনি কতদূর যাবেন? এখন অফিস টাইম,ভীড় বাড়বে —
আপনি এখানেও নামতে পারেন,আমি ক‍্যাব বুক করে দেব? আমার কোন অসুবিধে নেই।
আমি এখান থেকে অন‍্য রুটের অটো ধরবো।
স‍্যার বাবাজী — না না ঠিক আছে।
সামনে দিয়ে অটোটা হুশ করে বেরিয়ে যাবার পরও নীপা একটু দাঁড়িয়ে রইল।
মিনিট দশেকের পাশের ষাটোর্ধ্ব এই যাত্রীটি, এতক্ষণ নীপা যাঁকে স‍্যার সম্বোধন করছিল, তিনি নীপার আগের অফিসের বস। যিনি নীপার মতো অনেককেই নাকানিচোবানি খাইয়েছেন।
কিন্তু নীপার মাথায় ওটার থেকে বেশি এখন খটকা লাগছে –স‍্যারের মতো লোক ক‍্যাব না করে অটোয়? কারণটা কি??
যাক গে যাক গে।
নীপার তো এখন এইটা ভেবে এক্সাইটেড লাগছে যে —
মিনিট দশেকের জন্য হলেও ওই স‍্যার আর নীপা একই গাড়ির এমনকি একই সিটের সওয়ার!!
ওহ্ কেয়াবাত কেয়াবাত !!
উপরবালে! তোমার দুনিয়ায় কাকে কখন ওঠাও নামাও — কেউ বলতে পারেনা।
ফোন বেজে উঠল।
হ‍্যাঁ অমিত।
নীপা — হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ আমি রাস্তায় —
আর হাফ এ‍্যান আওয়ারের মধ‍্যে আমি ঢুকে যাচ্ছি। আমি? ফাইন। সো ফাইন!
নীপা ফোন বন্ধ করে মুচকি হাসতে হাসতে ভি আই পি রোডের দিকে এগিয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *