ল্যাজ ধ্রুবতারা …

ল্যাজ
ধ্রুবতারা …

হঠাৎ করে খেয়াল করলাম আমার পেছনে ল্যাজ গজিয়েছে I ল্যাজের ডগায় এক গুচ্ছ চুলও আছে I মুখে হাত বুলিয়ে দেখলাম , কোথায় , দারা সিং এর মত আমার মুখের কোথাও ফোলা টোলা নেই I রীতিমত প্যান্ট শার্ট পরেই আছি I কিন্তু ল্যাজটা নড়ছে চড়ছে I আর সেটাও আমার ইচ্ছের তোয়াক্কা না করেই I তারপরে আমি ধীরে ধীরে রাস্তা খুঁজে বের করলাম I হামাগুড়ি দিয়ে ভীড়ের মধ্যে দিয়ে বের হতে গিয়েই দেখলাম সবারই একটা করে লেজ আছে I গোটানো I কোনো রকমে ল্যাজ আমিও গুটিয়ে ফেললাম I রাস্তায় এসে ছুটতে লাগলাম I দেখি আমি মানুষের মতই ছুটছি I হনুমানের মত লাফ দিতে চাইলেও হচ্ছেনা I শূন্যে হাত ছুঁড়ে হাতের তালুতে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলাম I উহু উহু , স্পাইডার ম্যানের মত কোনো সুতো বা দড়িও হাত থেকে বের হচ্ছেনা I যে সুতো বা দড়ির উপরে ভর দিয়ে আমি এক লাফে নবান্ন থেকে রাইটার্স আবার রাইটার্স থেকে অন্য কোনো পার্টি অফিস কিম্বা অন্য কোনো মনুমেন্ট অথবা হাই রাইজার ছুঁয়ে ফেলতে পারি I বড় নিরাশ হয়ে ছোটা বন্ধ করে হাঁটা শুরু করলাম I

রাস্তা পেরিয়ে ফুটপাথ ধরে এগোতে গিয়েই দেখি একটা কুকুর আমার পিছু নিয়েছে I ‘এই হ্যাট হ্যাট !’ কুকুরটাকে তাড়াতে মুখের শব্দগুলো কেমন যেন ফিনফিনে লাগলো শুনতে I মনে হলো আমি কী তবে পুরুষত্ব হারাচ্ছি ! আমার সেই বজ্রের মত গুরু গম্ভীর আওয়াজটা কেমন যেন পাল্টে গিয়েছে বলে মনে হলো ! আবার কুকুরটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম , ‘এই হ্যাট হ্যাট , অসভ্য কোথাকার !’ কথাটা যেন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই মুখ থেকে বেরিয়ে এলো I কেমন যেন মেয়েলি বলে মনে হলো I কিন্তু আমি ছেলে আর মেয়ের তফাৎ করিনা I নিজের বাড়িতেই এক ছেলে এক মেয়ে আছে I দুজনকেই ছোট বেলায় একই রঙের জামা প্যান্ট পরিয়ে মেলা ঘোরাতে নিয়ে যেতাম I কুকুরের দিকে না তাকিয়েই এগোতে লাগলাম I

কিন্তু কুকুর আর পিছু ছাড়ে না I মাঝে মাঝে মনে হলো যদি খ্যাঁক করে দাঁত বসায় পশ্চাদ দেশে ! পরে ভাবলাম সামনের অংশে দাঁত না বসালেই হলো I পশ্চাদ দেশে কতজনারই তো কত কিছু নেই I কারো কারো তো কাপড়ও নেই I আর পশ্চাদে ইতিহাস লেখা হয় , তাই আমার পশ্চাদ দেশে যদি কুকুরটি কামড় বসায়ও তবুও ক্ষতি নেই I সেটাই কালকের ইতিহাস হয়ে যাবে I কিছুদূর গিয়েই ডানদিকে নন্দন চত্ত্বর দেখে একটু দাঁড়ালাম I পেছনে গোটানো লেজ লুকিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি সেখানেও সবাই বাঙালি সাজে ধুতি পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে I কেউ কবি , কেউ সাহিত্যিক , কেউ অভিনেতা , কেউ গায়ক I মোটের উপরে সেখানে সবাই গুণী I ভাবলাম ঠিক এই জায়গাতে লেজটা বের করে হুপ হাপ করে একটা ডাক ছাড়ি I দেখি মানুষ আর হনুমানের ককটেল দেখে ওরা কেমন ভয় পায় I

যেই না আমি লেজ নাড়িয়ে হুপ করে এক ঝাঁপ দিলাম , অমনি সামনের সবাই ধুতির কোঁচা ছেড়ে ধুতি তুলে বের করলো তাদের লেজ I আমি অবাক হয়ে দেখি বিখ্যাত সব মুখগুলো যেন আমার দিকেই এগিয়ে আসছে I যে যত বেশি বিখ্যাত তার লেজ তত বড় I সামনে এসে তার মধ্যে থেকে একজন গানের দুই লাইন গেয়ে বলে উঠলেন , ‘বুঝলে বাপু , এমনি এমনি এই জায়গায় উঠি নি I তুমি ভুল জায়গায় এসে পৌঁছেছো I বিখ্যাত হতে গেলে বড় লেজ দরকার I ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম , ‘লেজ তো আমারও আছে , কিন্তু ওটা বড় করার উপায় বলুন প্রভু !’ কেউই বলতে চাইলেন না I বুঝতে পারলাম এরা কেউই প্রতিযোগিতায় প্রতিভাগীর সংখ্যা বাড়াতে চায়না I তবে তার মধ্যে থেকেই একজন সহৃদয় ব্যক্তি বলে উঠলেন , ‘ শোনো হে বৎস , আমাদের দলে সামিল হতে চাইলে তোমার লেজের নড়াচড়া হতে হবে অন্যের ইচ্ছে মত I তবে তুমিও বিখ্যাত হতে পারবে I ’

বিখ্যাত লোকগুলোর মধ্যে থেকে একজন হাতে গিটার নিয়ে গেয়ে উঠলো , ‘হাল ছেড়োনা বন্ধু ’ দেখি তার গানের সুরে সুর মিলিয়ে কয়েকজন অভিনেতা আর অভিনেত্রী সেই গায়কের লেজ ধরে বলে উঠছে , ‘তোরা যে যা বলিস ভাই , আমার সোনার হরিণ চাই !’ রামায়ণের সেই হরিণ সেদিন রাবণের রূপ ছিল সেটা ভেবে আমি আর হরিণ ধরতে গেলাম না I ধীরে ধীরে আবার ভীড়ের মধ্যে মিশে গেলাম I যেখানে সবার পেছনেই একটা করে ল্যাজ গুটিয়ে রাখা আছে I মাঝে মাঝেই সেই লেজ গুলো নড়ে উঠছে I ওদের লেজ দেখে আমার লেজও নড়ে উঠছে মাঝে মাঝে I যার লেজ লম্বা হয়ে উঠছে সে এক ঝটকায় সেই ভীড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে I মিশে যাচ্ছে সেইসব বড় লেজ ওয়ালা মানুষগুলোর মধ্যে I

তাওবুংখক …মনিপুর …৩০/০১/২০২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *