এসো সবুজ ছুঁয়ে থাকি — ©শ্বেতা ব্যানার্জী

এসো সবুজ ছুঁয়ে থাকি।
©শ্বেতা ব্যানার্জী
বেদ অনুসারে, কলিযুগের শীর্ষে পৃথিবীতে শুরু হবে ধ্বংসলীলা…মানুষে- মানুষে যুদ্ধ, হানাহানি, বইবে রক্তগঙ্গা। দেখা দেবে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়! অর্থাৎ বেদ খুব স্পষ্টভাবেই কলিযুগে পৃথিবী ধ্বংসের ইঙ্গিত দিয়েছে।
কলিযুগের শেষেই কি তবে সব শেষ ? নেমে আসবে ঘোর কালো অন্ধকার ? ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী ? কী অপেক্ষা করছে পৃথিবীবাসীর জন্য ? সর্বনাশ না কি নতুন শুরু ? কী বলছে হিন্দু শাস্ত্রকার —–
কলিযুগের পর কী হবে ? হিন্দু শাস্ত্রমতে, কলিযুগের শেষে আবারও সময় থমকে যাবে। ধ্বংসের পর আবার পৃথিবী এক অন্ধকার জগতে পরিণত হবে। তারপর ফের নতুনভাবে জন্ম হবে মানবিকতার… মিলবে আশার আলো, সূচনা হবে সত্যযুগের।
তবে মনুসংহিতায় সৃষ্টির পিছনে বিজ্ঞানের হাত আছে সেকথা উল্লেখ আছে,” সৃষ্টির রহস্যে বিজ্ঞান ”
যার সৃষ্টি আছে তার বিনাশ ও থাকবে ধ্রুবসত্য,কিন্তু তাকে যদি আমরা নিজেরাই তাড়াতাড়ি ডেকে আনি সভ্যতার হাতুড়ি ছেনে…
সেখানে স্বয়ং ঈশ্বর ও কিছু করতে পারবেন না।
এই যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা
আমরা বলি,তার কারণ যে এই সভ্য মানুষ সেটা আমরা ভুলে যাই।
বিশ্ব উষ্ণায়ন
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি;
যুগে যুগে পৃথিবীর বহু অংশকে সমুদ্র গ্রাস করছে।
প্লিস্টোসিনের তুষার যুগের শেষ প্রান্তে আজ আমরা পৌঁছে গেছি। পৃথিবীর সমস্ত হিমবাহগুলি গলে ছোট হয়ে আসছে। আজ বিশ্ব উষ্ণতার কারণে পৃথিবী সমুদ্রের আক্রমণে, সে যেন বিশাল শূঁড় উঁচিয়ে ধেয়ে আসছে …।
আটলান্টিক উপকূলের অনেক নদীর মোহনা অঞ্চল গভীর সমুদ্রের নীচে চলে গেছে , সমুদ্রের লোনা জলে অনেক নদীর আজ সলিলসমাধি।
মানব সভ্যতার যুগ থেকেই তুষার গলতে শুরু করেছিল, আর আজ দাবানল যা কিছুটা মনুষ্যকৃত। অতিবৃষ্টি,তাপপ্রবাহ, পারমাণবিক বিস্ফোরণ,
রাশিয়ার বরফ গলিয়ে জমি তৈরি, পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের সভ্যতার আশংকা, সুনামির মতন বিধ্বংসী প্লাবন আবারও ডেকে আনতে পারে।
আজকের বেরেন্ট, বেরিং ও চীন সাগর এইভাবেই জলপূর্ণ হচ্ছে। তাছাড়া চিন নদী বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ পাল্টে দিচ্ছে নিজেদের খুশি মতন।
কষাই হয়ে যদি আমরা প্রকৃতিকে আঘাত করি,প্রকৃতির রক্তক্ষরণ রক্তচক্ষু হয়ে আমাদের বিপদজনক পরিবেশের ধারক ও বাহক হয়ে উঠবেই।
আবহাওয়ার খামখেয়ালি মেজাজ সভ্যতার হাতুড়ি।
পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও কিছু বৃদ্ধি পেলেই তুষার গলবে,তাতে প্রশান্ত মহাসাগরের জল ১০০ফুট উঁচু হবার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। শুধু প্রশান্ত মহাসাগর নয়,আটলান্টিকের তীরে সমস্ত বাণিজ্য কেন্দ্র, নগর
সব কিছু সমুদ্রের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাবে।
পৃথিবীর উষ্ণায়ণ যদি আরও বাড়তে থাকে আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল মানব সভ্যতার
ঐতিহ্যের ফসিলে পরিণত হবে।
আসলে মানুষ যেভাবে চলতে পছন্দ করে সেটাই আঁকড়ে রাখে।তাই জলবায়ুর এই পরিবর্তনে মানুষ আজও সজাগ নয়।পৃথিবীর উত্তাপ বাড়ছে কিন্তু মানুষের সচেতনতার আজও পরিবর্তন হলোনা।
জলবায়ুর পরিবর্তন মানেই সমুদ্র সমুদ্র স্ফীতি আর
এর ফল যে অতি মারাত্মক তা আমরা সুনামির সময়
কিছুটা বুঝেছি,তবুও যদি উদ্যোগী না হই জীবজগত বৈচিত্র্য হারিয়ে ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে.. রাষ্ট্র যদি সরকারি ভাবে ফরমান জারি করে, সাজা কিম্বা জরিমানার তাহলে হয়তো কিছুটা কাজ হলেও হতে পারে।
মহাপ্লাবন আগেও ঘটেছিল দক্ষিণ ইউরোপের কোন স্থলভাগ জলের উপর তখন দেখা যেতনা, দেখা যেত কিছু উঁচু পর্বত শিখর। এই মহাপ্লাবন আফ্রিকায় প্রবেশ করে আর রেখে যায় বালুকা রাশি, সেই বালুকা রাশির উষর মরুপ্রান্তর আজ সাহারা।
বিখ্যাত ভূ-বিজ্ঞানী সুকার্ট পৃথিবীর সমুদ্রের এই সীমা লঙ্ঘন ও স্থল জয়ের ইতিহাস খুঁজে জানালেন
সমুদ্রগ্রাস ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, বিশেষত উত্তর আমেরিকায়।
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্র ফুঁসে উঠছে এই ফুলে ফুঁসে ওঠার কারণে পৃথিবী ধ্বংসের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাবে, সভ্য মানুষ কোন প্রযুক্তি বলে সেই ধ্বংস কে রক্ষা করবে?
আসুন নিজের বাড়ি থেকে সচেতনতা তৈরি করি।
এসি কম চালাই, রেফ্রিজারেটর দুটো নয় একটা চালাই, সবুজায়ন করি, বিজ্ঞানের অগ্রগতি’র নামে
পাহাড় ধ্বংস রুখে দিয়ে প্রকৃতির জীবন রক্ষা করি।
আর যদি আমরা এখনো সচেতন না হই, তবে অচিরেই পৃথিবী নামক বাসস্থানের নিশ্চয়তা অদৃশ্য সভ্যতায় পরিণত হবে।
(তথ্যসূত্র, জল ও সমুদ্র,লেখক শচীনাথ মিত্র)