বসুন্ধরা আজও কাঁদে (বাবিয়া) মনের কথা

বসুন্ধরা আজও কাঁদে(বাবিয়া)মনের কথা

সকলকে প্রথমেই জানাই শুভ স্বাধীনতা দিবসের প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজকের দিনটি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।আমরা হলাম গিয়ে স্বাধীন ভারতের নাগরিক।আমরা প্রত্যেকেই সচরাচর এই দিনটিতে একে অপরকে স্বাধীনতার শুভবার্তা জানিয়ে থাকি।স্কুলে,পাড়ায়,কলেজে,অফিসে ভারতীয় পতাকা তুলি।কুচকাওয়াজ, জাতীয়সঙ্গীত গেয়ে খুব গর্ব অনুভব করি,তাঁদের জন্য যাঁরা দিনরাত্রি বুকের রক্ত ঝরিয়ে, কোটি কোটি হিন্দু মুসলমান একত্রিত হয়ে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে।সত্যিই তো,proud feel হওয়ারই কথা।এর মধ্যে কোনো সংশয় নেই।আমরা তাঁদের কে আমাদের শ্রদ্ধা মিশ্রিত যথার্থ সম্মান প্রদান করি।যেটা একজন স্বাধীন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে করা উচিত।এ পর্যন্ত কোনো ত্রুটি নেই।সব ঠিকঠাক।আর একটু বিষদে বলি,না না আজ আর কোনো পরাধীনতার অভিযোগ নেই।শুধুই একটা গতানুগতিক সমালোচনা বলতে পারেন।আজও এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে,আমার একটা নিছকই কৌতুহল বা প্রশ্ন বলতে পারেন,মনের গভীরে উঁকি মেরে চলে গেল।আচ্ছা, কেউ বলতে পারবেন আমরা মেয়েরা ঠিক কতোটা স্বাধীন?খবরের কাগজ,নিউজ চ্যানেল গুলো দেখে আমরা আজও মনের মধ্যে কেমন যেন একটা insecure feel করি।আমাদের দেশ তো স্বাধীন?তাহলে এরপরও কেন আমরা মেয়েরা এত্তো টা হীনমন্যতায় ভুগি?রাত দশটার পর যেখানে একটি ছেলে হাতে ট্যাটো করে,এক কানে দুল পরে,বাইকে চড়ে হিরোগিরি মেরে উড়ে যায়।সেখানে,ঠিক তারই পাশের বাড়ির মেয়েটা টিউশনি বা নিজেই প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ে আসতে গিয়ে ধর্ষণের স্বীকার হয়?মনে পড়ে না তখন,ওই জানোয়ার গুলোর দেশমাতৃকার মুখয়ব টা।মনে হয় না একবারও সেই মেয়েটারও স্বাধীন ভারতের নাগরিক হিসাবে স্বাধীন নিশ্বাস নেওয়ার অধিকার আছে?উল্টে,মেয়েটা যদি বেঁচে থাকে,আর তার মামলা আদালত পর্যন্ত পৌঁছয়,আবারও বারে বারে উকিল পুলিশদের একই অতি কুৎসিত কথোপকথন বা interrogation এর মাধ্যমে সেই মেয়েটির পুনরায় শ্রীলতা হানী করা হয়।কেউ বা হয়তো এসমস্ত ঝক্কি এড়ানোর দায়ে,আত্মহত্যা করে,বা যারা তাঁর উপর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করেছে তাঁরাই প্রমান লোপাটের জন্য তাঁর রক্তাক্ত লাশ টা কে পুড়িয়ে দেয়।তাহলে,কি করবো,এবার আমরা সভ্য স্বাদীন সমাজ?করি তো।প্রতিবাদ করি,সেই ধর্ষিতা কন্যার ফটোর সামনে মালা দিয়ে নীরবতা পালন করে,বড়জোর মোমবাতি মিছিল করে তাঁর অতৃপ্ত আত্মার শান্তি কামনা করি।আমাদের দায়িত্ব টা এখানেই শেষ হয়ে যায়।তবুও আমরা স্বাধীন তো।এটা তো গেল এক কাহিনী।এবার আসবে অন্য দিক।
পাশের পাড়ার ছেলে ধরে নিলাম তাঁর নাম পল্টু কিংবা বল্টু,Whatever,তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না,কিন্তু সমস্যা টা হল সে দিনরাত্রি এক করে porn movie দেখে fantacy করে পাশের বাড়ির মেয়ে লাবন্য কে নিয়ে।ইতিমধ্যে অনেকবার প্রেমের প্রস্তাব দেওয়াও হয়ে গেছে।সাথে সাথে চলেছে ইভটিজিং, স্টকিং।কিন্তু মেয়েটি হয়তো কোনো কারণে তাঁর প্রস্তাবে রাজী হয় নি।তখন খোকার মানে লেগেছে-কি?আমাকে রিফিউজ?এত্তো বড় সাহস?তুমি রূপসী বলেই খুব অহমিকা তোমার।দাঁড়াও তোমার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। দেখি তুমি এবার এই রূপ নিয়ে কোথায় যাও।পরের দিন ঠিক একই পথে আচমকা কি হল কেসটা?ওই চিরাচরিত পৌরষত্বে আঘাত পেলে যা হয়,Acid attack।তার পরেই টাকার জোরে case সাল্টে দেওয়া।উল্টে,আবারও আসামীর কাঠগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকে নারী।খুব Bore করছি না।সবে তো কলির সন্ধ্যে।এখনও ঝুড়ি থেকে ঝুপ করে,বেড়াল টা বেরুনো বাকি।একটি মেয়ে যখন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ডিগ্রি নিয়ে সামান্য সাহায্যের জন্য পাড়ার বাপ্পা দার কাছে যায় একটা ছোটোখাটো চাকরীর খোঁজে।সেদিকে একটু টর্চ লাইট টা ফেললে কেমন হয়?পাড়ার মস্তান বাপ্পার উক্তি-আরে,ছুটকি চিন্তা করিস না,তোর মতোন young,charming,so glamorous lady র আবার চাকরীর অভাব কি?শুধু আমাদের পার্টির বস কে একটু imprrss করে দিস।ওই হ্যাঁ,রাত বারোটা নাগাদ চলে আসিস।সাথে থাকবে Non-veg item,scorch কিংবা হুইস্কি।আর তোর ওই মনমাতানো dance…বারো হাজার টাকার চাকরী তো fixed.আশা করি সকলেরই কিছু টা হলেও বোধগম্য করাতে পারছি এরকম হাজার হাজার ছুটকি ডিগ্রি নিয়েও কেন বাড়িতে বসে আছে?আমরা তো স্বাধীন।কিন্তু আজও আমরা পুরুষশাসিত পিতৃতান্ত্রিক সমাজে তথা দেশে যখন এই আমরা নারীরা একটা সন্তানের জন্ম দিই।৯মাস ১০ দিন তাঁকে তাঁর মা মাতৃগর্ভে ধারণ করে।মা খেলে,বাচ্ছাও খায়।লেবার পেন টাও মাই সহ্য করে,বাবা না।একটা বাচ্ছা সারাক্ষণ তাঁর মাতৃসংস্কারের দ্বারা বড় করা হয়।প্রাথমিক শিক্ষা টা সে তাঁর মায়ের কাছ থেকে পায়।তাতে কি?পদবী তে সে পিতারই ধারণ করে।পিতার ধর্মই নাকি তার ধর্ম হয়।সে যতোই মায়ের সংস্কৃতিতে বড় হোক না কেন,তাঁকে বলা হয়,সে তার বাবার community তেই belong করে।সেখানেও পিতৃপরিচয় তাঁর প্রধান পরিচয়।এ তো গেল,নারীস্বাধীনতার কথা।এখনও পণপ্রথা আছে।যার কারণে গৃহবধূ কে পুড়িয়ে।কিংবা উপযুক্ত পণ না পেলে মিথ্যে করে চরিত্রের বদনাম দিয়ে বাড়ি থেকে মেরে বের করে দেওয়া হশ।এখানেও কিন্তু আমরা স্বাধীনভাবে লড়াই করি।কোর্টের দোরগোড়ায় চক্কর কাটি।সুফল কি আদৌ পাওয়া যায়?প্রশ্নটা আজও অজানা।
তারপর পুরুষরা তোমরাও তো স্বাধীন।স্বাধীন না?তোমাদের ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও,উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধু বাবা কাকার পার্টিতে চ্যানেল নেই বলে,আর উপযুক্ত টাকা মানে ঘুঁষ খাওয়াতে পারবে না বলে বাড়িতে বসে আছো।আর তোমারই স্কুলের লাস্ট বেঞ্চে বসা মানে ফেলুরাম সর্দার পাশ কাটিয়ে তোমাকেই কাঁচকলা দেখিয়ে চাকরী টা নিয়ে নিলো।আবার দ্যাখা হলে দু চারটে advice ও দিয়ে যায়।সুযোগের অসৎ ব্যবহার কি কেউ করে?তুমি অসহায়তার শিকার হয়ে ধরেছো উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ধরেছো অটোর স্টেয়ারিং।দিন দিন বেকারত্ত্ব,দারিদ্র্যতা,অশিক্ষা গ্রাস করছে আমাদের গোটা স্বাধীন ভারতবর্ষকে।একটার পর একটা election,আর হাজার কয়েক মিথ্যে প্রতিশ্রুতির বেড়াজালে দিনে দিনে জড়িয়ে যাচ্ছে আমার দেশের ভাই বোনেরা।নিজস্ব রাজনৈতিক দাপট না থাকলে পরেই তুমি হেরে গেছো।ঘরে ভাত নেই।আছে পন্ডশ্রম।কেউ কেউ B.A.pass দিয়ে,অপরের দোকানে খাটছে কর্মচারীর ন্যায়।তাতে কি?কি যায় আসে?ইংরেজরা তো চলে গেছে।আমরা তো স্বাধীন।আগে করতাম ইংরেজদের গোলামি।এখন করি, পার্টি politics এর নামে নিজেই নিজেদের গোলামি।দিনে দুপুরে দূর্নীতি,হ্যাঁ শুধুই দূর্নীতির মোড়কে মুড়ছে আমাদের ভারতমাতা।কোনো এক গ্রীষ্ম কিংবা শীতের অন্ধকারাচ্ছন্ন,তপ্ত বা কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে একটি বার কান পেতে শুনবেন,আমাদের বসুন্ধরা আজও কাঁদে।খুব করুণ সেই কান্নার সুর।একেবারে হৃদয় বিদীর্ণ করে যায়।শুধু হয়তো,সেই কান্নার আওয়াজ টা আমাদের কর্ণকুহরে ঠিকমতোন পৌঁছয় না।পৌঁছলেই বা কি?কিছু তো পাল্টাবে না।

যাক সে সব দুঃখের কথা, আমরা তো স্বাধীন।।

(সমাজের দূর্নীতি কে তুলে ধরেছি কেবলমাত্র। চরিত্রদের নাম কাল্পনিক।Personally কারুর ভালো না লাগলে plz ignore করবেন।দেশ মাতৃকাকে অপমান করিনি।শুধু তলোয়ারের বদলে কলম দিয়ে হয়তো বোঝাতে চেয়েছি।ব্যস।এটুকুই ভেবে নেবেন।)
জয় হিন্দ🙏🙏🙏🙏

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *