বৃষ্টিভেজা পথ ধরে …. কোয়েলী ঘোষ

বৃষ্টিভেজা পথ ধরে ….

কোয়েলী ঘোষ

“বৃষ্টি পড়ে এখানে বারো মাস
এখানে মেঘ গাভীর মত চরে । ”

শিলং থেকে সকালে চলেছি সেই বৃষ্টির শহরে যেখানে অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ধারাপাত আর মেঘ কুয়াশার লুকোচুরি খেলা ।

চেরাপুঞ্জির স্থানীয় নাম সোহরা । শিলং থেকে দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার ,প্রায় দেড় ঘণ্টার মত রাস্তা ।
পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের স্থান ছিল চেরাপুঞ্জি । এখন সেই স্থান দখল করেছে মৌসিনরাম গ্রাম ।

চমৎকার মসৃণ রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলেছে । দুদিকে সবুজ অরণ্য , মালভূমি , উপত্যকা । মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে পাহাড় ।
ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি পড়ছে আবার আকাশ পরিষ্কার । আমরা পৌঁছে গেছি চেরাপুঞ্জি ।
ভিউ পয়েন্ট এ দাঁড়ালে প্রকৃতির এক একটি দরজা যেন খুলে যাচ্ছে । নীল দিগন্তে মিলিয়ে যাওয়া পাহাড় , মেঘ , যা ভাষায় অবর্ণনীয় ।

ওয়াকাবা ফলস দেখলাম রেলিং ঘেরা ভিউ পয়েন্ট থেকে । পাহাড়ের পাথুরে গা বেয়ে সরু জলধারায় নামছে ঝর্ণা ।

নহকলিকাই ফলস চেরাপুঞ্জির বিখ্যাত সবচেয়ে উঁচু জলপ্রপাত ।
সবুজ পাহাড় ঢাকা মালভূমি থেকে প্রায় ১০০০ মিটার উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার জল । রেলিং ঘেরা ভিউ পয়েন্ট । দেখতে দেখতে মনে হয় স্বর্গ রাজ্যে পৌঁছে গেছি ।

সেভেন সিস্টার ফলস দেখব বলে
ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছি । চারিদিকে সাদা মেঘ । বৃষ্টি পড়ছে । কোথায় ঝর্ণা ? অথচ শব্দ শুনতে পাচ্ছি ।
তারপর বৃষ্টি থামলো আর একসাথে দেখা হল সাত বোনের সাথে অর্থাৎ সেভেন সিস্টার ফলস
সাতটি জলধারায় মালভূমির ওপর থেকে ধাপে ধাপে এসে মিশেছে নদীতে । অপরূপ দৃশ্য ।
একে কেউ বলে মৌসুমী ফলস ।

মেঘালয়ে ছোট বড় অনেক গুহা আছে ।
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে বেশ অভিযান করা যায় মৌসুমী গুহায় । চুনাপাথরের তৈরী । ভেতরে আলো জ্বলছে । অদ্ভুত আকৃতির পাহাড়ের গা বেয়ে চুঁইয়ে পড়ছে জল । সিঁড়ি দিয়ে নেমে গুহার মুখ পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসা ।
বৃষ্টির জন্য এই গুহার ভেতরে আর প্রবেশ করা হয় নি ।

ইকো পার্ক
সাজানো এক পার্কের সামনে গাড়ি এসে দাঁড়াল । গেট দিয়ে ঢুকে চেনা অচেনা ফুলের কেয়ারী । রেলিং ধরে এগিয়ে গিয়ে দেখা হল আর এক ঝর্ণার সাথে । এখানে অনেক দূর পর্যন্ত অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায় ।

লিভিং রুট ব্রিজ বা জীবন্ত শিকড়ের সেতু চেরাপুঞ্জির এক অন্যতম আকর্ষণ। রবার গাছের শিকড় জড়িয়ে খাসি উপজাতিরা তৈরি করেছে নদীর ওপর এই সেতু । নিচে বয়ে চলেছে নদী ।
এখানে আসতে হবে ট্রেক করে ।

পথের ধারে এক হোটেলে খাওয়া হল । থালায় সাজিয়ে রুটি , ভাত , ডাল , পনির , পাঁপড় , সবজি আর মিষ্টি । পরিবেশন করছেন এক খাসি মহিলা ।

পাহাড়ে বাজার নিয়ে বসেছেন মহিলারা ।
নাশপাতি ,কলা , আনারস , মাশরুম , শুকনো মাছ দিয়ে তৈরি খাবার কলাপাতায় মুড়ে বিক্রি হচ্ছে ।
দারচিনির লম্বা লম্বা টুকরো বিক্রি করছে স্থানীয় মহিলারা ।

সবুজ পাহাড়ের পিছন দিকে সূর্য অস্ত যাচ্ছে । নীল , কমলা রঙ ছড়িয়ে । আমরা ফিরে যাচ্ছি ।
কিছু হল দেখা কিছু রয়ে গেল বাকি । তবু যা দেখলাম তার তুলনা নেই ।
মাঝে মাঝে সেই স্মৃতি পথ ধরে হেঁটে আসি । সুন্দরী ঝর্ণা , নীল আকাশে মিলিয়ে যাওয়া ঢেউ খেলানো সবুজ পাহাড় , বৃষ্টি ভেজা পথ , আবার কখনো দেখা হবে কি ?

মেঘালয় ট্যুরিজমের খুঁটিনাটি জানতে ফোন করতে পারেন এই নম্বরে : ০৮১৩২০-১১০৩৭
মেঘালয় ওয়েবসাইট থেকে থাকার জন্য হোটেল বুক করে নিতে পারেন ।
এখানে আসার জন্য মেঘালয় ট্যুরিজমের বাস পাওয়া যায় নতুবা গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন ।

ছবি ঋণ – অর্পণ ঝা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *