চলো যাই কাছে পিঠে —- কোয়েলী ঘোষ

চলো যাই কাছে পিঠে

কোয়েলী ঘোষ

গাড়ি চলেছে চওড়া রাস্তা ধরে , দুদিকে সবুজ সারি সারি গাছ , গমের ক্ষেত ,দূরে ধুম্র পাহাড় ।
আমরা চলেছি ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুরের রাণী নেতারহাট ।রাঁচি থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরত্বে এক ছোট্ট পাহাড়ি উপত্যকা ।


পথ চলেছে জঙ্গলের ভেতর ।একসময় এসে পৌঁছলাম নেতারহাট গেটে ।তারপর
কিছু দোকান পাট নিয়ে ছোট এক বাজার ।
বাজার পেরিয়ে সবুজ মোড়া ফুলে বাহারি পাতায় সাজানো হোটেলে এসে গেলাম । তখন শীতকাল । স্নান ,খাওয়া সেরে আবার আমরা বেরিয়ে পড়লাম ।
জঙ্গলের ভেতর দিয়ে গিয়ে পায়ে হেঁটে নিচে নামলে ছোট এক ঝর্ণা , নাম আপার ঘাঘরি ফলস । পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে সফেন জলধারা ।
আসার পথে পড়ল ন্যাসপাতি বাগান । শুকনো ডাল পালা , শীতে পাতা ঝরে ফুল ধরেছে । বর্ষা এলে আবার ভরে যায় ন্যাসপাতিতে।
তার উল্টো দিকে পাইন বন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে । গাছের নিচে ছড়ানো পাইন ফল । কয়েকটা কুড়িয়ে নিলাম ।
এবার আমরা গেলাম ন কিলোমিটার দূরে ম্যাগনোলিয়া পয়েন্ট । এখান থেকেই সূর্যাস্ত দেখা যায় ।
‌দুরে পাহাড় আর জঙ্গলের পিছনে সূর্য অস্ত গেল ।এই মুহূর্ত অপূর্ব । আকাশের কি বর্ণিল রঙ ছড়িয়ে আস্তে আস্তে ডুবে গেল পাহাড়ে ,অবর্ণনীয় ।
এখানে আছে এক ভালবাসার কাহিনী ।
রাজকুমারী ম্যাগনোলিয়া, গ্রামের এক রাখালকে ভালোবেসেছিলেন।সেই প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নিজের পোষ্য ঘোড়ার পিঠে চড়ে এই পয়েন্ট থেকেই তিনি ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন , তারপর সেই রাখালও ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ দেয় । পাহাড়ের ধারে সেই স্মৃতিতে আছে যুগল মূর্তি ।
সন্ধ্যে নামল ।আমরা ফিরে এলাম হোটেলে । কি ভয়ংকর শীত । রাতে হোটেলেই খাওয়া সেরে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম । চারিদিকে অন্ধকারে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লাম ।


পরদিন খুব ভোরে দেখতে হবে সূর্যোদয় । ভোরবেলা শীত পোশাকে মুড়ে আমরা এসে গেছি কোয়েল ভিউ পয়েন্টে । সবুজ টিলার ওপার থেকে সূর্যের আলো ঝিকমিক নদীর জলে ছড়িয়ে পড়ল ।
এরপর জলখাবার খেয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম নেতারহাট ড্যাম দেখতে । লাল মাটির পথ ধরে প্রায় চার কিলোমিটার গিয়ে দেখা পেলাম এই ড্যামের । শান্ত স্নিগ্ধ নীল জলরাশি আর সবুজ জঙ্গল ,পাহাড় মিলেমিশে অপূর্ব এক দৃশ্য ।

এবার আমরা লোধ জলপ্রপাতের দিকে চললাম । ৬১ কিলোমিটার রাস্তা যেতে দু ঘন্টা লাগলো । গাড়ি রেখে পাথুরে পথ ধরে একটু হেঁটে এই জলপ্রপাত দেখে মন ভরে গেল । উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে এই জলপ্রপাত ।
নেটারহাট স্কুলটিও এক দ্রষ্টব্য । আজও গুরুকুল পদ্ধতিতে এখানে পড়াশোনা হয় ।
নির্জন , শান্ত এই সবুজ পাহাড়ে সেই আদিম অকৃত্রিম আরণ্যক প্রকৃতিকে নিবিড় করে অনুভব করলাম ।
এদেশের মানুষ খুব গরীব । এই জঙ্গল , নাশপাতি বাগান আর ছোট ছোট দোকান পাট তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে ।
মনের স্মৃতিতে রয়ে গেল এই সুন্দরী নেতারহাট ।

এখানে যাবার জন্য হাওড়া রাঁচি ট্রেনে গিয়ে ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যায় ।
থাকার জন্য প্রভাতবিহার , ডাক বাংলো , প্রাইভেট হোটেল রবি এন্ড শশী লজ , হোটেল প্রকাশ ইত্যাদি আছে ।

ছবি ঋণ – জয়শ্রী কুন্ডু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *