ভ্রমণ কাহিনী —★নিপ্পনের দেশে কলমে # শ্বেতা ব্যানার্জী
ভ্রমণ কাহিনী —★নিপ্পনের দেশে
কলমে # শ্বেতা ব্যানার্জী
ছোটবেলায় যে দেশটা সম্মন্ধে অনেক কৌতুহল
ছিল,সে দেশে কোনদিন যেতে পারবো স্বপ্নে ভাবিনি,
ছেলে, বৌমার ইচ্ছে ও জেদের হাতধরে পাড়ি…
নেতাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পোঁছে ইমিগ্রেশন পর্ব শেষ করে, কিছু স্ন্যাকস খেয়ে উড়ানের অপেক্ষা, বিকেলে ৪,৩০মিনিটে ব্যাংকক
এয়ারলাইনস টেক অফ করলো। জানলার পাশেই
সিট ছিল, কিছুটা ভয় কিছুটা আনন্দ নিয়ে দুরুদুরু বুকে উড়ানের সাথে ডানা মেললাম,যেহেতু পরিবারের সাথে তাই কিছুটা নিশ্চিন্তমনেই…।
ব্যাংকক এয়ারলাইনসের আতিথেয়তা মুগ্ধ করেছিল,২০০০০ফুট উপরে ওঠার পর ওরা গরম তোয়ালে দিল, যা ছিল ইউজ অ্যান্ড থ্রো, বেশ স্বস্তি বোধ করলাম গরম তোয়ালে দিয়ে মুখ, চোখ মুছে।
তারপর কিছুক্ষণ পর স্ন্যাকস গ্রীণ টি। আবার ১ঘন্টা বাদ ব্রেকড পনির , জিরা রাইস, চিকেন তন্দুরি,আশ্চর্যজনক ভাবে পায়েস।
ল্যান্ডিং এর আধঘন্টা আগে থেকে অরেঞ্জ জুস
যে যার খুশি মতন নাও, আমি যেহেতু অন্যান্য খাবার খাইনি জুসটা খেয়ে খুব তৃপ্তি পেলাম, তিনঘন্টার জার্নি কিভাবে কোথা দিয়ে কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না…
ট্র্যাঞ্জিটের আলো ঝলমলে ব্যাংককে ফটোসেশানের সুবিধা হয়নি, কারণ নারিতার ফ্লাইট ধরার তাড়া ছিল। জীবনে প্রথমবার লম্বা জার্নি
ব্যাংকক থেকে নারিতা—
এই এয়ারেও যথেষ্ট আতিথেয়তা, যথেষ্ট খাবার দাবার কিন্তু মনের চাহিদা নেই কিছু খাবার।
সামনের স্ক্রিনে আমরা দু’জন যাত্রাপথ দেখছিলাম,
তারপর একটা মুভিও দেখলাম।
আধঘন্টা অন্তর অন্তর সুন্দরী বিমানবালা ড্রিংকস অফার করছিলেন , আমরা কিছু নিচ্ছি না দেখে জিজ্ঞেস করলেন এনি টি অর কফি প্লিজ, আমরা কফি নিলাম উনি মৃদু হেসে চলে গেলেন…।
একটু ঝিমুনি মতন এসেছিল, ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় ঘোষণা এলো সিল্টবেল্ট বাঁধুন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই উড়ান নারিতা বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং করবে।
আজ ৮,১, ২০ দীর্ঘ বিমান যাত্রার পর ওখানকার সময় অনুযায়ী ভোর তিনটে আমরা “নারিতা” বিমানবন্দরে পৌঁছলাম,
এয়ারপোর্টে পৌঁছে ছেলে আমাকে এক অদ্ভূত বিষয় দেখালো, উপরে এয়ারপোর্ট আর নিচে রেলস্টেশন। ছেলে যেহেতু এখানে থাকে চাকরির সুবাদে তাই কোন অসুবিধায় পড়তে হয়নি…।
টারমিনাল ১, বিশাল এলাকা–
যথারীতি ছেলে ও বৌমা আমাদের দু’জনের দায়িত্ব দু’জনে নিয়ে নিয়েছে আমরা যেন রোবটের দেশে রোবট হয়ে ওদের অনুসরণ করছি—
এয়ারপোর্টের গেটের পাশে তিনটে লেন,একটা দিয়ে এয়ারপোর্টের ট্রান্সপোর্ট বাস যাচ্ছে,একটা দিয়ে প্রাইভেট কার।
ছেলে বৌমা ইনফরমেশন ডেস্কে গিয়ে জানতে পারলো বাসের অনেক দেরি, তাই আমরা ট্রেনে যাওয়া স্থির করলাম।
ঘন কুয়াশার মধ্যে একহাত দূরের মানুষকে দেখা যাচ্ছিলনা। তার উপর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা।
ছোটবেলায় জাপানকে রোবটের দেশ বলে জানতাম,আরও জানতাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বিস্ফোরণে (হিরোশিমা ও নাগাসাকি)
ধ্বংস হবার পরেও কীভাবে নিজেদের চেষ্টায় নিজেদের প্রমাণ করে পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠতম দেশের একটি হিসাবে তুলে ধরেছিল—
জাপান যে রোবটের দেশ তা চাক্ষুষ করলাম,
এত শৃঙ্খলাপরায়ণ, এত নিয়মানুবর্তিতা, প্রত্যেকই চলছে কিন্তু একদম পুতুলের মতন, যেন কে চাবি দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে!
ট্রেন যখন ছুটে চলছে উপর দিয়ে আমি অবাক বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি, কি অপরূপ এই
জাপান সুন্দরী! প্রকৃতি যেন নিজ হাতে তুলি দিয়ে
সাজিয়েছে নিজকন্যা কে।
দু’দুটো ট্রেন পাল্টিয়ে আমরা নামলাম “গিয়াতুকু” স্টেশনে, নেমে আবারও চমক! সূর্যদেব যেন দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে এত উজ্জ্বল দিনের আলো যেন নায়িকার ফ্ল্যাশলাইটে অভিনয় শুরু, আমি মুগ্ধ,আমি আবেগতাড়িতভাবে প্রকৃতি কে আলিঙ্গন করলাম।
প্রকৃতি well come জানতে বলে উঠলো “ইরিয়াস সে মাসে” (হয়তো উচ্চারণ আমার বাংলা বানানে ভুল হ’তে পারে)
“গিয়াতুকু” স্টেশন থেকে আমার ছেলে বৌমার বাড়ি হেঁটে মিনিট পাঁচেক, আমরা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হেঁটে চলেছি এই বৃষ্টি যেন পুষ্পরেণু অতিথিকে স্বাগত জানাতে। কারণ এখানে এই ঝলমলে রোদ, পরক্ষণেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, অনেকটা আমাদের শরতের মতন।
একে ঠাণ্ডা তায় বৃষ্টি মেখে কাঁপতে কাঁপতে এসে
রুমে ঢুকে আগে রুমহিটার চালিয়ে দিয়ে চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে সবে বসেছি, বৌমা গরম কফি এনে বললো– ‘ইরিয়াস সে মাসে’ উষ্ণ কফিতে ঠোঁট রেখে আমি বললাম
“আরিগাতো গোদাইমাস ” অর্থাৎ ধন্যবাদ —
—– ক্রমশ….