বোধ — বিবেকানন্দ মণ্ডল

বোধ

— বিবেকানন্দ মণ্ডল

ইস গমকা করুঁ
ক্যায়সে সুকরিআদা ?
তুম তো চ্যালি গ্যায়ি
দেকে এ খাজানা সদা …

যে ব্যথা দিয়ে গেছো
কিভাবে করবো সে ঋণ শোধ ?
তুমি তো চলে গেছো
দিয়ে গেছো গুপ্তধন —
অমূল্য সে বোধ ।

হ্যাঁ অমূল্য সে বোধ । কবি জীবনানন্দের গভীরেও ‘কোন্ এক বোধ কাজ করে ‘। কবি তাই বলেছেন । সেটাই কি জীবনানন্দের জীবনানন্দ ? মনে হয় তাই জীবনানন্দের জীবনানন্দ । যে আনন্দকে সাজিয়ে গেছেন এই বোধের লিপিলেখায় ; কবিতায় কবিতায় । সাহিত্য/শিল্প তো সত্যিই আনন্দময় বোধের অনুভূতি ।

এই বোধের সোপান কি ? — না, গমকা খাজানা ; ব্যথার গুপ্তধন । সুখের অনুসন্ধান করতে করতে ব্যথার গুপ্তধন পেয়ে গেছেন যিনি তিনিই তো আমাদের শোনাতে পেরেছেন অক্ষয় আনন্দের গীতিকল্লোল ।

“Our Sweetest songs are those that tell of saddest thought .”

তো এই sad /গম/ দুঃখ বা ব্যাথা যদি সেই আনন্দ কল্লোলের উৎস হয় তাহলে সেটাও তো কারো কাছ থেকে প্রাপ্ত হতে হয় । রবীন্দ্রনাথ বলেছেন — “ওগো দুখজাগানিয়া তোমায় গান শোনাবো ।” কে সেই দুখজাগানিয়া ? কোনো নারী/পুরুষ বা কোনো একক ব্যক্তিবিশেষ ? না কবিদের এই ‘তুমি’ কখনোই একক নয় ; বলা যেতে পারে একক হয়েও একক নয় । একক বোধের সার্বিকতাতেই তো কবিতা /সাহিত্য/শিল্প ।আর , কবি তাকেই গান শোনাবেন কেন ? যিনি দুঃখ দিলেন ! আমরা তো তাকে তিরস্কার করি , ঘৃণা করি !

হ্যাঁ , এখানেই সেই বোধের পার্থক্য ; কবি/সাহিত্যিক /শিল্পীদের সাথে আমাদের বোধের পার্থক্য । তাঁদের বোধ বলে , যার কাছ থেকে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ আমি পেলাম তার কাছে তো আমি ঋণী । তাই , ঋণ স্বীকার তো সবার আগে তার কাছেই করতে হয় । দুখজাগানিয়াকেই প্রথম গান শোনাতে হয় । অপরপক্ষে আমাদের বোধ বলে , দুঃখ-ব্যথা কখনো সম্পদ হতে পারে না । তাই ব্যথা দানকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা নয় , ঘৃণাই একমাত্র কাম্য ।

কবিদের সেই বোধের গভীরে আমরা পৌঁছাতে পারিনা বলেই হয়তো আমরা নির্বোধ । ‘গমকা খাজানা ‘ পেলে কবিরা পেট্রোলিয়াম পণ্যের মতো দুঃখ-ব্যথাকে নিবিড় বোধের কারখানায় পরিশুদ্ধ করে আনন্দের শিখা নির্মাণ করতে পারেন । আর আমরা অন্ধকারে বসে জোনাকির আলো জ্বালা দেখে ঈর্ষায় জ্বলি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *