সব ভ্রম, ভ্রম নয় — তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী

#বিষয়ভার্চুয়াল পৃথিবীকি আমাদের আত্মিক বন্ধন ব্যাহত করছে?

#আমার বক্তব্য এই মতের বিপরীত।
সব ভ্রম, ভ্রম নয়
তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী

তারিখ::১৬/০১/২১

সব কিছুরই ভালো এবং মন্দ, দুটো দিক ই থাকে। তাই এই ভার্চুয়াল জগতেরও তাই আছে। আমার মনে হয় সবকিছুর ভালো দিকটাই দেখা উচিত স্বচ্ছ দৃষ্টিতে।
আরও অনেকের মতো আমিও এই ভার্চুয়াল পৃথিবীর একজন মানুষ। বহু বছর ঘরে থাকায় বাইরের দুনিয়া অনেকটাই অজানা অচেনা। গৃহবন্দী থাকার জন্য মানসিক ভাবে একাকীত্ব জাপটে ধরছিল আর অদ্ভুত নিঃসঙ্গতার সঙ্গে কেমন যেন সখ্যতা তৈরি হয়ে যাচ্ছিল। আর কিছু দিন এমন থাকলে হয়তো ডাক্তারের হেল্প নিতে হতো। কিন্তু এই পৃথিবীতে আসার পর খুব তাড়াতাড়ি অনেক মানুষের সাথে ভার্চুয়াল আলাপ হয়ে গেল। তার মধ্যে কেউ কেউ বেশ আপন করে নিল। লেখালেখির জন্য অনেক ভালো বন্ধু দাদাভাই দিদিভাই পেয়েছি। যারা সবসময় পজিটিভ কথা বলে ভীষণ ভাবে মানসিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এটা মনে হয় ঈশ্বরের অনেক আশির্বাদ। অথচ আমার বা আমাদের চারপাশে কত মানুষ আছেন যারা একটু হেসে এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করেন না। কিন্তু এই ভার্চুয়াল পৃথিবীর অনেকেই আছেন যারা রোজ না হলেও খোঁজ নেন প্রায়শই। আর তখন মনে হয় ভীষণ আপন কেউ যেন সত্যিই আছে পাশে।

আমার লেখার অভ্যাস একদম চলে গেছিল ঘর সংসার সামলাতে গিয়ে। এক ভার্চুয়াল লেখিকা দিভাই এর প্রচন্ড উৎসাহ দানেই আমি গত তিন বছর আবার কলম ধরেছি, হাতা খুন্তির পাশাপাশি। অথচ পরিবারেও তো সবাই আছেন।কৈ এমন ভাবে কেউ তো বলে নি!!

ঘটনা ১:: বছর চারেক আগে চেন্নাই যাচ্ছি ট্রেনে। একলাই। ভীষণ ভালো এক দিভাই কে বলেছিলাম। পুরো রাস্তা উনি মেসেজ করে আমার খোঁজ নিয়েছেন। রাতের খাবার, দুপুরের খাবার খেয়েছি কি না, কতদূর পৌঁছেছি, কতক্ষণ আর লাগবে, যতক্ষণ আমি গন্তব্যে না পৌঁছেছি উনি কিন্তু আমার সঙ্গে ছিলেন ভার্চুয়ালিই।

ঘটনা ২:: আমার খুব পরিচিত এক বন্ধুকে এই ভার্চুয়াল পৃথিবীর কিছু বান্ধবী খুব বিরক্ত করছিল। তার অফিস করা মুশকিল হয়ে পড়ে। ভালো বন্ধু হবার দরুন সে আমাকে জানায়। এবার আমি এক পুলিশ অফিসার ভার্চুয়াল বন্ধুর শরণাপন্ন হই। তিনি সব জেনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়াতে অসভ্যতা বন্ধ হয়। আমার সাথে আজও দেখা হয় নি ঐ পুলিশ অফিসার বন্ধুর। এছাড়া আরও অনেক বন্ধুর সমস্যা এই পুলিশ অফিসার বন্ধু মিটিয়ে দিয়েছেন।

ঘটনা ৩:: এক ভার্চুয়াল দিভাই অনেক বয়স্কা, যাকে আমি আজও দেখিনি ওনার একটা পোস্ট দেখে আমরা সবাই অবাক। উনি হাঁটু বা পায়ের সমস্যা নিয়ে আগরতলা থেকে কলকাতা আসেন। ডাক্তার দেখে ওনাকে বলে দেন যে উনি আর সুস্থ হবেন না। যতদিন বাঁচবেন এভাবেই। উনি কলকাতা ছাড়ার আগে খুব কষ্ট পেয়ে এসব লিখে পোস্ট দিতেই এই ভার্চুয়াল ডাক্তার কবি বন্ধু ওনার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর ঐ দিভাই যান ঐ ডাক্তারের কাছে। ওনার সুচিকিৎসায় দিভাই অনেক ভালো।

কি বলবো এইসব ঘটনা গুলো কে?? কত নিকটে চলে আসি আমরা এভাবে ভার্চুয়াল। সুখে দুঃখে। ভার্চুয়াল পৃথিবীতে আত্মিক যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় হচ্ছে মনে করি কারণ ভালো মানুষের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি।

বেশ কয়েক বছর হলো প্রথম ঘটনার ভার্চুয়াল পৃথিবীর দিভাই আমার এখন খুব চেনা। একসাথে বেড়াই। দেখাও করি।

ঘটনা ৪:: ভয়ংকর করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল বন্ধুরা একে অপরের খোঁজ রেখেছেন সবসময়। কাউকে কদিন অনুপস্থিত দেখলেই যে করে হোক জানার চেষ্টা চলেছে তিনি সুস্থ আছেন কি না… জানলেই পাবলিক পোস্ট করে সবাই কে জানিয়ে নিশ্চিন্ত করা হচ্ছে।

এছাড়া বহু সংস্থা তাদের সাধ্যমত গরীব দুখী অনাথের পাশে টাকা দিয়ে, খাবার দিয়ে, ওষুধ দিয়ে, শীতের পোষাক দিয়ে থাকছেন। বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ খুব দ্রুত এবং সহজেই করতে পারছেন। সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

ভার্চুয়াল পৃথিবীর এই নিবিড় আত্মিক বন্ধনই আমাদের এখন সুন্দর করে বাঁচার রসদ।
এই যোগাযোগ আরও মজবুত হোক এটাই কাম্য। ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *