স্বপ্নের সেই নিঝুম গ্রামে ********* পশ্চিম সিকিমে কোয়েলীর সাথে
স্বপ্নের সেই নিঝুম গ্রামে
পশ্চিম সিকিমে কোয়েলীর সাথে
কতদিন কোন স্বপ্ন দেখিনি , কতকাল যেন ভুলেই গেছি , কতমাস কেটে গেছে গৃহবন্দী তারপর এলো সেই বেড়াতে যাওয়ার ঠিকানা ।
একুশে জানুয়ারী শীতসন্ধ্যায় আমরা সপরিবারে তল্পিতল্পা বেঁধে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে । উঠলাম দার্জিলিং মেলে , সব সাবধানতা মেনে , ,মুখে মাস্ক আর হাতে স্যানিটাইজার নিয়ে ।
রাত্রি দশটা পাঁচে শিয়ালদা থেকে ট্রেন ছাড়ল ।
যাত্রাপথ
ট্রেন চলেছে ঝিকঝিক ঝিকঝিক — নিউ জলপাইগুড়ি থেকে আমরা যাব পশ্চিম সিকিমের এক নিঝুম গ্রামে ,নাম তার কালুক ।
সারা ট্রেনের যাত্রী চলেছে বেড়াতে । ,কেউ দার্জিলিং ,কালিম্পং , মিরিক কেউ গ্যাংটক ,নাথুলা কেউ পুবে ,কেউ পশ্চিমে , নানা প্রান্তে । কারো উৎসাহের কোন কমতি নেই । বিরাট বিরাট সুটকেস নিয়ে , ট্রেনের সিটের তলায় চালান করে সবাই চলেছে আনন্দে । সবার টিকিট কনফার্ম পর্যন্ত হয় নি । কেউ বসে , কেউ অল্প জায়গায় আধশোয়া হয়ে পা গুটিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ।
এখন ট্রেনে কোন চাদর বালিশ কম্বল দেওয়া হয় না বলে বাড়ি থেকে কম্বল এনে কেউ কেউ বেশ আরাম করে ঘুমিয়েছে ।
ঘন কুয়াশা বাইরে , বেশ শীত করেছে রাতে । ট্রেনে এমন হৈহৈ করেছে একদল যে ঘুমের বারোটা গেছে বেজে ।
ঘন কুয়াশার জন্য এক ঘণ্টা লেট করে ট্রেন এসে পৌঁছল নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে । এবার কত ভিড় সেটা বোঝা গেল । সেই ভিড় একটু কমলে বাইরে এসে দেখি সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে । আমাদের গাড়ি বুক করাই ছিল । গাড়ির মাথার ওপর সুটকেস বেঁধে যাত্রা শুরু হল ।
নিউ জলপাইগুড়ি ছাড়িয়ে এলাম । লোকালয় শেষ , গাড়ি এবার পাহাড়ের পথ ধরে ওপরে উঠতে শুরু করেছে । ড্রাইভার ভাইকে বলা হল গাড়ি কোন রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড় করাতে কিন্তু সেদিকে তো থামার কোন লক্ষণ নেই দেখছি । অনেকটা পথ পেরিয়ে যেখানে গাড়ি দাঁড়াল সেখানে পৌঁছে দেখি চারিদিকে নীল পাহাড় । দোতলা এক সুন্দর রেস্টুরেন্টে , সামনে দুজন পাইকের মূর্তি । ওপরে উঠে হাত মুখ ধুয়ে , বাথরুম সেরে টেবিলে বসলাম । ততক্ষণে অর্ডার দেওয়া শেষ । টেবিলে এসে গেছে গরম ধোঁয়া ওঠা মোমো , অহনা তোশির খাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে । আমাদের জন্য আলুর পরোটা , চা , কফি এলো । খাওয়া সেরে দু একটা ছবি তুলে নিলাম ।
এবার যেতে হবে অনেকটা পথ .. প্রায় চার ঘণ্টা । গাড়ি আবার চলতে শুরু করেছে ।
একদিকে গভীর খাদ আর একদিকে গভীর জঙ্গল , কত চড়াই পথ গাড়ি চলছে তো চলছেই ।
তিস্তা
পথে যেতে যেতে দেখা হল তিস্তা নদীটির সাথে । মৌনী স্তব্ধ পাহাড়ের কোলে কখনো স্থির শান্ত , কখনো বা ঘুঙুর বাজিয়ে সাথে সাথে চলেছে সে … মাঝে মাঝেই অদৃশ্য হয়ে যায় সবুজ গাছের ফাঁকে , আবার নীল সবুজ রঙের শাড়ীটি দেখা যায় । তিস্তা অনেকটা পথ সাথে চলেছে ।
যে নদীর নাম তিস্তা , সিকিমে তার নাম রঙ্গিত ।
চলে এসেছি সিকিম বর্ডার । ড্রাইভার ভাই হিন্দিতে বললেন – সবাই ভালো করে মাস্ক লাগাবেন না হলে ফাইন । মাস্ক তো ছিলই তবুও ভালো করে নেওয়া হল । চেকপোস্টে তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন গাড়ি কোথা থেকে আসছে ? যাত্রীরা কোথায় থাকেন ? জবাব পেয়ে যাবার নির্দেশ । সাড়ে ছ়মাস লক ডাউন ছিল সিকিম রাজ্য ।
তিস্তার পার ধরে গাড়ি চলেছে । চারিদিকের সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে চলেছি , প্রতি বাঁকে এক এক দৃশ্য । একশো তিরিশ কিলোমিটার পথ একসময় শেষ হলো , উঠে এসেছি ৬২০০ ফুট উচ্চতায় । গাড়ি এবার নিচে নেমে যে রিসর্টের সামনে এসে দাঁড়াল তার সাজানো রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম ।
গাছে গাছে ফুল , থরে থরে লেবু ধরে আছে , ক্যামেলিয়া , অর্কিড ,এজেলিয়া , মিলি নাম না জানা আরো কত কি !!
রিসর্টের নাম মন্দরিন ভিলেজ । ঘর গুলো চমৎকার । পর্দা সরালেই দেখা যায় প্রিয় কাঞ্চনজঙ্ঘা । সারি সারি পর্বত শ্রেণী , মেঘ ভেসে যায় .. আমার মন ভেসে যায় .. পৌঁছে গেছি সেই স্বপ্নের দেশে ।
ছবি ঋণ — অর্পণ ঝা
চলবে