খাদ্য সম্পর্কীয় কিছুকথা কলমে: শুভা গাঙ্গুলি
খাদ্য সম্পর্কীয় কিছুকথা
কলমে: শুভা গাঙ্গুলি
ইঞ্জিন চালাতে যেমন ইন্ধন যোগাতে হয় ,মানুষের দেহকে কর্মক্ষম রাখতেও খাদ্যের প্রয়োজন হয়, এই প্রয়োজনীয়তা পশু পাখি পতঙ্গেরও আছে,তবে খাদ্যাভ্যাস সম্পূর্ণ আলাদা মানব আর পশুকুলের, কারণ শারীরীক বলবৃদ্ধির সাথে নীরোগ থাকাটা মানুষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং রোগাক্রান্ত হবার সম্ভাবনা মানুষের ক্ষেত্রে একটু অন্যরকম এবং বিপজ্জনক।
তাই বর্তমান খাদ্য প্রণালী তে সুষম খাদ্যের সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যুক্ত খাবার খাওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়,
যেমন এখন ভয়ানক কোভিড ১৯ এর মোকাবিলায় আমরা প্রচুর সাইট্রাস ফুড বা ফল খেয়ে থাকি,
কারণ ভিটামিন সি আমাদের শরীরে লোহিতকণা বৃদ্ধি করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়,
সেই বিষয়ে আমরা তাহলে দেখি যখন ব্যাকটিরিয়া ভাইরাস সম্বন্ধীয় জ্ঞান ছিলো না তখন মানুষ কি ধরণের খাদ্য গ্রহণ করতো।
আফ্রিকার অরণ্যে মানুষ প্রথম দুপায়ে হেঁটে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলো,তখন সে কি খেয়েছিলো,খুব সম্ভবত: আমিষ খেয়েছিলো কারণ তার পশুপ্রবৃত্তির তখনো নিবৃত্তি ঘটেনি,(অবশ্য এখনও মানুষের সেই হত্যা করার প্রবৃত্তি কোথায় গেছে)
আফ্রিকার সেই আদিম মানবের প্রায় ১০লক্ষ বছর পরে মানে আমাদের ১৫ লক্ষ বছর আগে হোমোইরেক্টাস মানব জাতির অভ্যুথান ঘটে,আমরা তাদেরই বংশধর,
পশুপালন ও কৃষিকাজের উদ্ভব হয়েছিলো অনেক পরে , তার আগেই মানুষ আগুনে ঝলসে খেতে শিখে গিয়েছিলো, বিবর্তনের সাথে সাথে,
তার হজম ক্ষমতা কমে ফলে সুষম খাদ্যের প্রয়োজন হয়,
খাদ্যের উপকরণ নির্ভর করে ,তার বাসস্থানের চারপাশে কি ধরণের খাদ্যসামগ্রী পাওয়া যায়, তার ওপর নির্ভর করে, যেমন বাংলাদেশের জলা এলাকায় মাছের আধিক্য , আমরা তাই মাছে ভাতে বাঙালী।
শরীর সম্বন্ধে যখন জ্ঞানলাভ ক্রমশঃ বাডলো তখন খাদ্যের প্রকারভেদ করা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করা হল, আর আমরা তো জানিই কোনো ‘অভ্যাস’ সাধারণ মানুষের আয়ত্বে আনতে হলে ঈশ্বরের সাহায্য অবশ্যম্ভাবী, তাই গীতায় আমাদের সুচতুর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শোনালেন,
“মানুষের মনোবৃত্তি খাদ্যের প্রতি আসক্তির উপর নির্ভরশীল, তাই মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী খাদ্যেকে তিনভাগে ভাগ করা হলো
সাত্বিক ,রাজসিক আর তামসিক।
সাত্বিক খাদ্য হলো সেই সব খাদ্য যা পুষ্টিকর, মেধা ও বল বর্ধক এবং শরীরকে নিরোগ রাখতে সক্ষম,
রাজসিক খাদ্য হলো সাত্বিক খাদ্যের অধিক লবণ মসলাযুক্ত এবং মনোরম করে তোলা হলো শুধুমাত্র জিহ্বার আহ্বানে , যা শরীরের জন্য সুবিধাজনক নয়।
তামসিক খাদ্য যা বাসী, পচা এবং উচ্ছিষ্ট ,
যেমন দুধ, সাধারণ তাপমাত্রায় সাত্বিক, অতি উষ্ণ রাজসিক, আর বাইরে পড়ে থেকে পচন ধরা দুধ হলো তামসিক।
দুধ একটি নিরাপদ প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য বলবর্ধক।
খাদ্যের মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা সময়ের ওপর নির্ভরশীল ,
তাই প্রাচীনকালে দেখা যায় প্রসেস্ড ফুড বা দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার জন্য খাদ্যের সঞ্চয় প্রক্রিয়া,খাদ্যের সংরক্ষণ করার উপায় নির্ধারিত হয়েছিলো।
সাধারণতঃ সৈনিক বা যারা যুদ্ধযাত্রায় যেতো তাদের আর নাবিকদের এই ধরণের খাদ্যের প্রয়োজন হতো।
এখন বর্তমান সমাজ ভীষণরকম ব্যস্ত তাই আমরা সর্বতো ভাবে এই সংরক্ষিত খাবারের উপর নির্ভরশীল, বিদেশে প্রসেসড ফুড খুবই সমাদরে গৃহীত।
এখন বর্তমানে প্রসেসড ফুডের খাদ্যজনিত গুণাগুন বজায় রাখা হয়, ফাইবার যা আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী তা বজায় রাখা হয়, কাই ক্যানড ফুড যে কোন সময় যে কোন জায়গায় আমরা সঙ্গে নিয়ে যেতে পারি , আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী।
প্রসেসিং এখন সর্বজনগ্রাহ্য একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া যা খাদ্য এবং ফলের রস কে দীর্ঘমেয়াদী করতে সমর্থ কিন্তু সেটাও অনন্তকাল নয়।
আর ফলের রস ,টাটকা তাজা ফলের আগে পিছে কখনইআসতেই পারে না ক্যানড জুস।
তবুও অন্তরীক্ষে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগারে কর্মরত বৈজ্ঞানিকগণ এই প্রসেসড খাদ্য খেয়েই দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন।
খাদ্য আমাদের অভ্যাসের দাস, আমরা যে কোন মোটামুটি হজম করা যায় এমন গাছপালা পশুপাখি খেয়েও বেঁচে থাকতে পারি, কারণ দেখাযাচ্ছে, মরুভূমি অধ্যুষিত অঞ্চলে “মরুভূমির জাহাজ”!শুধুমাত্র যানবাহনের কাজই করতো না , উটের দুধ ,উটের মাংস ভক্ষণ করেই তাদের দীর্ঘ পদ পরিক্রমা করতে হতো, আমরা ইতিহাসে দেখেছি মঙ্গোলজাতিরা খুব কষ্টসহিষ্ণু ছিলো মরুভূমির মধ্যে তারা শুধুমাত্র কয়েকটি ঘোড়া নিয়ে চলতো,ঘোড়ার দুধ , ঘোড়ার মাংস,আর একটা ঘোড়ার দুধ পচিয়ে একরকম মদ্যজাতীয় পানীয়
প্রস্তুত করতো যা তাদের আত্মীয় বিহীন ভয়ানক প্রান্তরে কিছু আনন্দ প্রদান করতো,
এটা অবশ্য সাত্ত্বিক খাবার নয় তামসিক।
বিজ্ঞানীদের মতে ৩৮০ কোটি বছর আগে জীবনের উদ্ভব ঘটে,কিন্তু হোমিনিডদের আবির্ভাব প্রায় ৭০ লক্ষ বছর আগে, তারপর ফসিল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,প্রায় ৪০ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকায় দুপায়ে চলা এপ্জাতীয় প্রাণীর আবির্ভাব তার ও দশ লক্ষ বছর পরে হোমেও ইরেক্টাস রা রাজত্ব করতে আসে,
তারপরও কেটে গেছে দীর্ঘ সময়
বর্তমান পরিস্থিতি বলছে যে ২০৫৫ সালের মধ্যে সমস্ত পৃথিবীর জনসংখ্যা পৌঁছে যাবে প্রায় ১০ বিলিয়নস বা তার বেশি।যদি না কোভিড 19 এর মতো বা তার চেয়ে আপাত নিরীহ কারণ দৃশ্যমান নয়
অথচ ভীষণ ক্ষমতাশালী ভাইরাস এর উদ্ভাবন ঘটে,অথচ গ্লোবাল ওয়ারমং গ্রীনহাউস এফেক্ট ইত্যাদি কারণে এগ্রিকালচার ঠিকমতো খাদ্য উত্পাদনে সক্ষম হচ্ছে না,
বৈজ্ঞানিক রা অনুসন্ধান করে দেখেছেন প্রতিটি সাতজন মানুষের মধ্যে একজন ঠিকমতো খাদ্য পাচ্ছেন না বা তাঁকে আমরা ক্ষুধার্ত দের দলে বসাতেই পারি।
সেক্ষেত্রে আমাদের খাদ্যে যে প্রয়োজনীয় প্রোটিন মিনেরালস থাকা উচিত যা আমরা প্রাণিজ এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিন থেকে পেয়ে থাকি,কিন্তু livestock প্রতিপালনেও আমাদের উদ্ভিদের প্রয়োজন, প্রাণীজ প্রোটিন আমাদের শরীরে অপরিহার্য।
আমরা দেখেছি থাইল্যান্ড মালয়েশিয়ার মানুষজন পোকামাকড ভক্ষণ করে, উচ্চপ্রোট্নযুক্ত এই কীট এ ফ্যাট ভীষণ কম , আর অন্যান্য মিনেরাল ও প্রচুর পরিমানে , না থাকলে এনারা কখনই খাদ্য হিসাবে কীটপতঙ্গ কে সামিল করতেন না।
কিন্তু স্বাদ?
না সেটা বলতে পারবো না।
পোকা মাকড় আমরাও খাই ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিশেষ ধরনের পিঁপড়ে আর তাদের ডিম খাওয়ার প্রচলন আছে,লবস্টার , কাঁকড়া তো জলের পোকাই বটে,
আমরা এক প্লেট কাঁকড়ার মালাইকারী খুব দাম দিয়ে কিনে খাই, relish করে খাই, shrimps ও ভালোবাসি তাই mankind এর ভবিষ্যত যখন এই insect farming এর দিকে যাচ্ছে, তখন আমাদের একটু সচেতন হওয়া উচিত।
আমরা পড়েছি আমাদের পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,একবার ভুলক্রম আরশোলা দিয়ে চা খেয়েছেন,আর
তাতে তাঁর হাঁপানির উপশম হয়।
আরো একটা খবর ,হয়তো সত্য মিথ্যা জানা নেই , তবে একবার আমাদের জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন নাকি রাস্তায় চলতে চলতে grasshopper খেয়ে ফেলেছিলেন,
আমরা তো নগন্য মানব।
The world Edible insect Day being held on 23rd October by Belgian entrepreneur globally,for the consumption of edible insects,with a focus on Europe,North America and Australia.
সমস্ত ঘটনার দুটো দিক সর্বদাই থাকে , এই insect eating কিন্তু একেবারে বিপদমুক্ত কিনা তা নানাভাবে পরীক্ষাকরা হচ্ছে এবং দেখা যাচ্ছে এর সদার্থক দিক অবশ্যই আছে, সব বিবেচনা করেই world health organisation এই কাজটা হাতে নিয়েছে।
তবে কারো বাডীতে হেলে একপ্লেট উচ্চিংডে পাকোড়া খুব সমাদরে খাওয়া যাবে বলে সাধারণ মানুষ হয়তো এখনও মনে করে না।