এক সমুদ্র ভালবাসা —তাজপুর কোয়েলী ঘোষ

এক সমুদ্র ভালবাসা —তাজপুর

কোয়েলী ঘোষ

ভেজা বালিতে পদচিহ্ন রেখা
শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস পিছনে পড়ে ;
মেঘলা আকাশের ছায়া পড়ে বুকে ,
ঘোলা জল ,নোনা সাগর পাড়ি ।
গর্তে লুকায় মানুষ -কাঁকড়া
শক্ত দাঁড়া পিছনের দিকে টানে ।
নির্জনে এক শান্ত বালুচরে
আমরা দুজন একসাথে চল হাঁটি —
পৃথিবীর খোঁজে প্রয়োজন নেই আর ,
পাখি হয়ে উড়ি দিকচক্রবালে
কুড়িয়ে আনি আলপনা আঁকা ঝিনুক
ঢেউয়ের দোলায় ভেসে যাই , আরও বহুদূর —
উজল সকাল , জ্যোৎস্না রাতের মায়ায়
নিবিড় ভালবাসা আঁকি এক সমুদ্দুর ।


শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে , চলে এসেছি তাজপুর ,শান্ত নির্জন এক সমুদ্রের টানে । নীল সাগর মিশে গেছে নীল আকাশে , সমুদ্র সফেদ ঢেউয়ে আছড়ে পড়ছে বেলাভূমিতে ,দূরে সারি সারি ঝাউ আর কেয়া বনের সারি — সব মিলিয়ে তাজপুর ।
ভোরবেলা বেরিয়ে পড়েছি আমরা গাড়িতে ,পথে একবার কোলাঘাটে নেমে চা আর অল্প কিছু খেয়ে পৌঁছে গেছি রিসর্টে ।
বুকিং করাই ছিল । ছোট ছোট স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘর ,সামনে বারান্দা , ফুলে সাজানো । মাঝখানে বসার জয়গায় দোলনা । সেখানে পাশে খাওয়ার আয়োজন ।স্নান করে , খাওয়া সেরে চলেছি সাগরের দিকে ।
অল্প পায়ে চলার বালির পথ ,তারপর দু চোখ জুড়ানো উন্মুক্ত উদার সমুদ্র ।
সাগর এসে পা ভিজিয়ে দিয়ে স্বাগত জানায় – আবার চলে যায় -স্পর্শে বেলাভুমিতে চলার অদ্ভুত এক শিহরণ অনুভব করি ।
ছোট বাচ্চাটা আনন্দে উচ্ছ্বসিত ,মায়ের হাত ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছে । একটু পরে সমুদ্রের ধারে এসে বসেছি ।
আস্তে আস্তে সূর্য ডুবে যাচ্ছে ,সন্ধ্যে নামছে ,এক ঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে কোথায় কে জানে — নিবিড় নির্জন এক শান্তিতে ডুবে আছে প্রকৃতি ।


তারপর আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠলো ,চাঁদের আলো ছড়িয়ে গেল সাগরে –সাগর যেন স্নান করে শুভ্র বসন পরে উঠল ।
মন গেয়ে উঠল -” ওহে সুন্দর ,মরি মরি ,তোমায় কি দিয়ে বরণ করি । ”
মায়াময় চাঁদ যেন সাগরের বুকে উজাড় করে ঢেলে দিয়েছে তার সৌন্দর্য ।

ফিরে যাই সমুদ্রের ধারে পাতার ছাউনিতে ,সেখানে চা থেকে শুরু করে সবই পাওয়া যায় । এক কাপ চা বিস্কুট খাই ,তারপর ফিরে আসি রিসর্টে ।
কিছুক্ষণ খোলা বাগানে গল্প করে খাওয়া দাওয়া সারি ইচ্ছেমত ,তারপর নিশ্চিন্তে ঘুম ।
পরদিন ভোরে উঠে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেছি বেশ কিছু দূর – সারি সারি সবুজ ঝাউবন । সূর্য উঠছে ,আকাশে লাল আভাস ,ছবি ফুটে উঠছে জলে –আলোর ছবি ..
”আলোকে মোর চক্ষু দুটি মুগ্ধ হয়ে উঠল ফুটি — ”
সারি সারি কাঁকড়া গর্ত থেকে উঠে আসছে , বাচ্চাটাকে নিয়ে কাঁকড়া দেখাচ্ছে তার বাবা । ক্যামেরা তাক করে রেখেছে গর্তের দিকে , ভিডিও হচ্ছে । লাল কাঁকড়ার এক সাম্রাজ্য বালির ভিতর ,লুকোচুরি খেলছে ওরা ।
দুপুরে নিশ্চিন্তে ঢেউয়ের দোলায় স্নান করা হল ।খুব বড় ঢেউ নেই ,ভেসে গিয়ে নোনা জল খাওয়ার ভয় নেই । এই অন্তহীন ঢেউয়ের আনাগোনা পা ডুবিয়ে বসে বসে উপভোগ করলাম । একসময় পিছনে ফিরে গিয়ে সবাই একটা করে ডাব খেলাম । বৃদ্ধ মানুষটি ডাব কেটে দিতে লাগলেন । রান্না শুরু করে দিয়েছে এক অল্পবয়সী বউ ।এখানে কেউ কেউ আহার সেরে নেন কম খরচে।


একটু গল্প করি বউটির সাথে । ওর বর গেছে মাছ ধরতে ।বৃদ্ধ মানুষটি শ্বশুর মশায় । সকালে এসে ঝাঁট দিয়ে দোকান খোলেন । তারপর চা তৈরি ,রান্নার আয়োজন । সারাদিন পর ফিরে যায় ঘরে । এই প্রান্তিক মানুষদের সাথে গল্প করি ,মিশে যাই আত্মীয়তায় ।

ঝড়
বিকেলে আকাশ কালো হয়ে উঠেছিল বলে বেশিক্ষণ সমুদ্রের ধারে বসিনি । না সুনামি নয় ,ঝড় বৃষ্টি শুরু হল ।বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুনছি শনশন বাতাসের শব্দ ,সাগরের গর্জন । সেই সময়ের রুপ অর্পণ ক্যামেরা বন্দী করেছিল ।
আবার শান্ত হয়ে গেল সব । দুটো দিন ক্লান্তি অবসাদ দূর করে আবার ফিরে গেলাম ।
কাছাকাছি আরও দুটো সমুদ্র সৈকত একসাথে দেখে নেওয়া যায় ,দিঘা আর মন্দারমণি ।

কিভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে দূরত্ব ১৭০ কিমি , বাস বা ট্রেনে যাওয়া যায় । তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস , বা কাণ্ডারি এক্সপ্রেস ধরে দিঘার আগের স্টেশনে নেমে ছোট গাড়ি বা টোটো করে আসা যায় । দিঘা কলকাতার বাসে পথে বালিসাইতে নেমে যাওয়া যায় । সেখান থেকে টোটো করে আসা যায় ।
থাকার জন্য অনেক রিসর্ট আছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *