বালুরঘাটে দিদিকে বলোতে সাড়া ফেলে দিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী

৩০শে আগষ্ট, বালুরঘাটঃ ২৭শে জুলাই কলকাতাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সূচনা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের দিদিকে বলো কর্মসূচীর। এরপরে জেলায় জেলায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য নম্বর নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি যান তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা নেত্রীরা। আর সেই কর্মসূচীতে বালুরঘাটে সারা ফেলে দিলেন বালুরঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক ও প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী।  অনেকে বলতেন পেশায় আইনজীবি রাশভারী এই মানুষটি মানুষের সঙ্গে ঠিকভাবে কথা বলতে চাননা, কিন্তু তার নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে, তাদের দেওয়া বদনামকে তিনি যেন বাউন্ডারির বাইরে পার করে দিলেন অনায়াসে। বর্তমানে রাজ্য সরকারের সংস্থা ম্যাকিন্টোস বার্ন- এর চেয়ারম্যান পদের ব্যাস্ততা সামলে বালুরঘাটে রীতিমতো চোষে ফেলেন তিনি। বালুরঘাটের ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শুরু করে প্রতিদিন নিয়মিত তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে চোষে বেরলেন শঙ্কর বাবু, গেলেন শহরের বাড়ি বাড়ি, মানুষের সমস্যার কথা যেমন শুনলেন, তেমন তিনি প্রচার করলেন দিদিকে বলো-এর বার্তা।এরপর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মসূচীতেও একি কায়দায় টানা তিনদিন দিন ও রাতের ভোজন সারেন এলাকার কোন গরীব মানুষের ভাঙা টিনের বাড়িতে, রাত্রীবাস-ও করেন সেইখানে। নিজের জীবনশৈলির সম্পূর্ণ বিপরিতে এলাকার মানুষ দেখতে পেলো এক অন্য শঙ্কর বাবুকে। তাই সবার মুখে উচ্চারিত হলো গত বিধানসভা নির্বাচনে তার পরাজয়ে বালুরঘাট হারালো উন্নয়নের গতি। আর যা হয়ে উঠলো শহরের চায়ের ঠেকের আলোচনার বিষয়, এ এক অন্য শঙ্করবাবু যেন ময়দানে। গত লোকসভা নির্বাচনে শুধু বালুরঘাট শহরে তৃণমূল কংগ্রেস পিছিয়ে ছিলো প্রায় ১৭ হাজার ভোটে। সেইখান থেকে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। আর সেই লড়াই-এ শঙ্কর বাবুর এই প্রয়াস যেন কিছুটা অন্য স্বস্তি আনতে পারে বলে মনে করছেন শহরের আম জনতা।

এইভাবেই শঙ্কর বাবু যে প্রচার ও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের বার্তা একদিকে যেমন পৌছতে লাগলেন, তেমনি মানুষের অভাব অভিযোগের কথাও শুনতে দেখা গেলো বালুরঘাটের প্রাক্তন বিধায়কে। মানুষের অভিযোগ শুধু শোনা নয়, তা রীতিমতো নথিবদ্ধ করলেন এবং সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাতে “দিদিকে বলো” নম্বরে ফোন করতে বলতে শোনা গেলো শঙ্কর বাবুকে। এই অভিনব প্রচার কৌশল নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন এটা কোন গিমিক নয়, তিনি বলেন তার কর্ম জীবনেও অপরাধীকে সাজা পাইয়ে দিতে তিনি একপ্রকার এই ধরনের কৌশল অবলম্বন করতেন, সেইখানে আসল সত্য উন্মোচনের জন্য সাধারন মানুষের কাছে গিয়ে কথা বলে, তাদের সঙ্গে মিশে জানতে চাইতেন প্রকৃ্ত বিষয়।

আর এবারও মানুষের মধ্যে গিয়ে তাকে দেখা গেলো কেন শহরে ক্রমাগত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে তৃণমূল। তিনি বলেন গত আট বছরে বালুরঘাট এক অন্য রূপে ফুটে উঠেছে, যা এই সরকারের আমলে সম্ভব হয়েছে। বালুরঘাটের রাস্তা, ২০১২ সালে বরাদ্দ পানীয়জল প্রকল্প থেকে জেলা প্রশাসনিক ভবন থেকে বাজারের রাস্তার বিস্তার পাড়ায় পাড়ায় এলইডি বাতির ব্যাবস্থা, বৈদ্যুতিক চুল্লি, সাড়ে তিন লক্ষ টাকার ১৭০০ বাড়ী নির্মাণ, নদীবাঁধ ও শহরের প্রান আত্রেয়ী খাড়ির সংস্কার মতো একাধিক উন্নয়নের মুখ দেখেছে বালুরঘাট, পাশাপাশি বালুরঘাট পেয়েছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, বিমানবন্দর। কিন্তু এতো কিছুর পরেও কেন বালুরঘাটের মানুষ তৃণমূলে আস্থা রাখছে না তা জানতেই তার এই উদ্যোগ, যে কথা মানুষ বাজারে বলতে পারবেন না, যে কথা মানুষ মিটিং-এ বলতে পারবেন না সেই সব কথা মানুষ একান্তে নিরালায় বলতে পারবেন, তাই রাতের ভোজন ও রাত্রীবাসের ভাবনা ছিলো তার। জানতে পারলেন সাধারন মানুষের অনেক কথা, তাদের অনেক অভিযোগ, আর তা নিয়ে যথা স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন শুধু ৯ কিম্বা ১০ নম্বর নয়, তিনি বালুরঘাটের বাকি এলাকা গুলোতেও এইভাবেই ঘুরতে চান, আর জানতে চান এলাকার মানুষের সমস্যার কথা, আর তার এই কৌশল যে বালুরঘাটের মানুষের অন্যভাবনা তৈরি করেছে তা প্রকাশ পায় পাড়ার চায়ের দোকানের জনতার দরবারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *