রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা অবনতির প্রসঙ্গ তুলে সরিয়ে দেওয়া হলো স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে

১৫ই মে, দিনাজপুর ডেইলি ডেস্কঃ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার আগে রাজ্যে নজিরবিহীন পদক্ষেপ করল নির্বাচন কমিশন। নজিরবিহীন ভাবে আগামিকাল শুক্রবার রাত দশটার পর থেকে রাজ্যে শেষ দফার ভোট প্রচার বন্ধ করে দিল কমিশন। নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগে থেকেই শেষ দফার ভোট প্রচার বন্ধ করে দিল নির্বাচন কমিশন। স্বাভাবিক ভাবে প্রচার শেষ হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার বিকেলে। কমিশনের বক্তব্য, ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচার ও র‌্যালিকে কেন্দ্র করে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, তার ফলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ দিকে এই ঘটনার পরই রাজনৈতিক শিবিরে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

এর পাশাপাশি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে সরিয়ে দিল কমিশন। তাঁর কাজকর্ম দেখভাল করবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে। অন্য দিকে বর্তমানে এডিজি সিআইডি পদে থাকা কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকেও অপসারিত করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে কমিশনের নির্দেশ, কাল শুক্রবার সকাল দশটার মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে রিপোর্ট করতে হবে রাজীব কুমারকে। দু’জনকে সরানোর বিষয়ে মুখ্যসচিব মলয় দে-কে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। মুখ্যসচিবকে বুধবার রাত দশটার মধ্যে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছে কমিশন।

দেশে এই প্রথম কোনও রাজ্যে ৩২৪ ধারা প্রয়োগ করল নির্বাচন কমিশন। দিল্লি থেকে উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দিল্লির নির্বাচন সদনে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে শেষ দফার নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়। কমিশনও এ রাজ্যে কী ঘটছে, সে বিষয়ে নজর রেখেছিল। এই দু’টি বিষয় পর্যালোচনা করার পর কমিশনের তরফে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। সপ্তম তথা শেষ দফার নির্বাচনে এ রাজ্যে দমদম, বারাসত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। এই সব কেন্দ্রগুলিতে আগামী কাল ১৬ মে বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলি প্রচারের শেষ সুযোগ পাবে।

গত ১৩ মে রাজ্যে ঘুরে গিয়েছিলেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। সেই সময় তিনি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাব, রাজ্যে নিযুক্তি বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে, বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েকর সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের কাছ থেকে রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতির রিপোর্ট নেন। দীর্ঘ পর্যালোচনাও করেন তাঁদের সঙ্গে। কমিশন সূত্রে খবর, ওই পর্যালোচনায় উঠে আসে, রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন ভোট প্রক্রিয়ায় সাহায্য করছে না। শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ নির্বাচনও তার জন্য সম্ভব হচ্ছে না।

কার্যত এই পরিস্থিতিতে অগ্নি সংযোগ করে মঙ্গলবার কলেজ স্ট্রিটে গন্ডগোলের ঘটনা। বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন উল্লেখ করেছে, মঙ্গলবারের ঘটনায় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট যায় দিল্লিতে। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যে নিযুক্ত পুলিশ এবং বিশেষ পর্যবেক্ষকও তাঁদের রিপোর্ট পাঠান নির্বাচন সদনে। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা রিপোর্টে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রচার চলাকালীন গোলমাল ঘটছে। তার জেরে ভোট প্রক্রিয়াতেও প্রভাব পড়তে পারে। এই সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পরই নিরাপত্তার কারণে এক দিন আগেই প্রচার পর্ব শেষ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

কমিশনের এই নির্দেশের পরই রাজনৈতিক শিবিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কখনও যা হয়নি, তাই হল। এক দিন প্রচারের সময় কমিয়ে দিল। এ রকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হল এ রাজ্যে, যেখানে আইনশৃঙ্খলার কারণে প্রচারের দিন এক দিন কমিয়ে দিল! এটা কি রাজ্যের প্রশাসন বুঝতে পারছেন? রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে সরিয়ে দেওয়া হল, এটা লজ্জার। পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। পশ্চিমবঙ্গের জন্য অনভিপ্রেত। তবে প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীকে প্রচারের সুযোগ দেওয়া হল। আমরা সময় কম পেলাম। এটা নিয়ে পরে দল যা বলার বলবে। সকলে নির্ভয়ে ভোট দিক।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা শুনলাম। গণতান্ত্রিক বিষয়ে আমাদের অধিকার খর্ব করা হল। কিন্তু গত রয়েক দিন ধরে এ রাজ্যে যা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলার কারণে নির্বাচন কমিশন যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তে করেছে। আমাদের আর কিছু বলার নেই।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *