।। আমার দুর্গা ।। কলমে : সাহানা

।। আমার দুর্গা ।।

কলমে : সাহানা

চার রাস্তার মোড়ে লালবাতিটা জ্বলে উঠল! গাড়িটা ব্রেক কষল ঘ্যাঁ-অ্যাঁ-চ। আচমকা ঝাঁকুনি সামলে উঠে বসতেই বন্ধ কাচে টোকা…
টক্ টক্
একটা জীর্ণ মলিন মুখ। রুক্ষ্ম চোখ। চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে। কি মনে করে কাচ নামালাম।
-ও মা, মা গো! ফুল নেবে?
কচি হাতে একগোছা গোলাপ। মলিন কিন্তু রক্তবর্ণ।
অবাক হবার কিছু নেই। প্রতিদিন যারা এই রাস্তায় চলাফেরা করেন, এ মুখ এবং আরও কিছু, পরিচিত।
সাধারণত এইসব আবদারে কান দিই না। কিন্তু, আজ….
ব্যাগ খুলে কিছু খুচরো টাকার সঙ্গে পঞ্চাশ টাকার নোট মিলিয়ে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চাশ টাকা রেখে বাকি খুচরো ফেরত এল। সঙ্গে সঙ্গে কচি জবাব, এটা লাগবে না।
পেছন থেকে আচমকা একটা ঝাঁকুনি! একটা কর্কশ আওয়াজ, তোকে দিয়েছে দিদিমণি, নিয়ে নে বোকা মেয়ে!!
মেয়েটির রুক্ষ্ম চুল ধরে ঝাঁকাচ্ছে আর একটা রুক্ষ্ম মানুষ!
ড্রাইভার সব দেখছিল। এবার বলল, ছেড়ে দিন, ম্যাডাম। সিগন্যাল খুলে গিয়েছে।
ওকে ইশারায় চুপ করতে বলে, সাইডের ফুটপাথ ঘেঁষে নেমে পড়লাম।
মেয়ে আর মা দুজনেই একটু জড়োসড়ো! ঘাবড়েছে!

মা’কে উদ্দেশ্য করেই বললাম, মেয়ে তোমার সৎ। ওকে বিপথে যেতে দিও না। লোভ বাড়িও না।

-কি করব দিদিমণি!
পাঁচটা পেট গো! ওই ফুটে থাকি। কোলের টা ভুগে ভুগে অস্থির গো!

সঙ্গে অল্পবিস্তর পয়সাকড়ি থাকে। বিপদে আপদে কাজে লাগে। তার একটা অংশ দিলাম।
-এটা রাখো।

দুজনেই ঢিপ্ ঢিপ্ করে প্রণাম ঠুকছে!

আর দাঁড়িয়ে লাভ নেই। গাড়িতে উঠে ভাবলাম, প্রতিদিন পথে ঘাটে কত দুর্গা অভাবে ধুঁকছে, শীর্ণ জীর্ণ জীবন, এ মহানগরীর পঙ্কিল ফাঁদে জীবন পচে গলে শুকিয়ে কঙ্কাল!!
কতটুকুই বা জানি!!

আমার দুর্গা দিনে রাতে সমান সাহসিনী
আমার দুর্গা হাস্যবদন, কৌতুক-রমণী
আমার দুর্গা অসময়ে ধরতে পারে হাল,
আমার দুর্গা মুখরা, প্রতিবাদী চিরকাল।
আমার দুর্গা লড়তে পারে যেকোনো পরিস্থিতি
আমার দুর্গা প্রমাণ করে দুর্জয় উপস্থিতি
আমার দুর্গা বিদ্যা-বুদ্ধি-জ্ঞানে বিভূষিতা
আমার দুর্গা যশোমতী, শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *