*আমি ফৌজি* কলমে:- মনিমালা রুদ্র ভট্টাচার্য্য

*আমি ফৌজি*
কলমে:- মনিমালা রুদ্র ভট্টাচার্য্য

সেই ছোট্ট বেলা থেকে,
তেরঙ্গাতে দেখি যখন মাকে,
যখন শিখেছি জয় হিন্দ বন্দেমাতরম,
যখন দেখেছি কুচকাওয়াজ মিলিয়ে কদম-কদম!
তখন থেকেই আমার মনে জাগলো বাসনা!

বড়ো হয়ে আমিও ফৌজি হবো,
মায়ের জন্য প্রাণ দিয়ে লড়ে যাব!
আজ সত্যিই আমি ফৌজি হয়েছি,
দেশ রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছি!
শপথ করেছি জীবন থাকতে পিছু হটব না।

রাতের বেলা ঘুমোও যখন তুমি,
রাইফ্যাল কাঁধে জাগি তখন আমি,
আঁধার ছিঁড়ে জ্বলে আমার চোখ;
দেশপ্রেমে ভরে ওঠে বুক,
সমূহ বাধা অনায়াসে নিমেষে করি জয়!

যখন তুমি এসির হাওয়ায় বসে!
আমি তখন দুর্গম পথ চষে,
কিলো কিলো বুলেট আর রাইফ্যাল কাঁধে নিয়ে,
যত ক্লান্তি অবসাদ সব পথেই ফেলে দিয়ে—
শত্রুর চোখে ফুটিয়ে তুলি ঘোর অশনি ভয়!

বাদল দিনে যখন তোমার কণ্ঠে রবির গান,
আমার তখন শরীর জুড়ে বৃষ্টি-জলে স্নান!
যখন শরতের আলোর বেণু বাজছে তোমার ঘরে,
আমি তখন ক্যাম্পে জাগি সীমানা রেখা ধরে!
আমায় ঘিরে চলতে থাকে অঝোরে তুষার পাত!

শীতের রাতে যখন তুমি প্রিয়জনের সাথে,
আমি তখন ব্যস্ত তোমায় নিরাপত্তা দিতে!
অকস্মাৎ মাওবাদীর ল্যান্ড-মাইন বিস্ফোরণ
ওদের রুখতে শুরু করি রাইফ্যাল গর্জন!
বুকের আগুন জ্বালিয়ে পোড়াই সকল প্রতিঘাত!

কোকিল যখন তোমার কানে গাইছে মধুর সুর;
আমার তখন বসন্ত লক্ষ যোজন দূর!
তোমার পাড়ায় পলাশ শিমুল যখন লালে লাল—-
আমি তখন ইউনিফর্মে, পাশে দাঁড়িয়ে সাইপাল!
মাতৃ ভূমির মান রাখতে পণ করেছি প্রাণ!

লে-আউট সেরে, শরীর চর্চা, জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে;
সুশৃঙ্খল জীবন-ধারা ভালো-মন্দ নিয়ে।
এর মাঝেই লাদাখ রেখে শহীদ কত সেনা;
পুলওয়ামায় ঘটল যা কেউ কক্ষনো ভুলব না!
ছত্রিশগড়ে থরে থরে শহীদ জওয়ান!

ডিউটি সেরে এসে শোবে, তাই করে গেছে বিছানা;
সে বিছানা তেমনি রইলো আর শুইতে হল না!
তখন তুমি খবর দেখছো টিভি ছেড়ে গমগমে;
আমরা তখন ওদের শোকে একেবারে থমথমে।
গান স্যালুটে বিদায় জানাই বীর সেনাদের প্রতি!

বাবা মা পুত্র হারা চির দিনের মতো;
স্ত্রী-সন্তান কাঁদছে আজও বুকে নিয়ে ক্ষত!
বলেছিল আবার যখন আসবে পরের বারে;
গোলাপ ফুলের গাছ লাগাবে ছাদের ধারে ধারে!
ঠাকুর ঘরে এনে দেবে পেতল গণেশ মূর্তি!

প্রতিশ্রুতি রয়েই গেল দিয়ে গেল প্রাণ;
বিরহী বধূ স্মৃতি ভ্রষ্ট, নেই শরীরে জ্ঞান!
মায়ের মনে জাগায় আশা সেই ছোট্ট ছেলে;
আমিও বাবার মতো ফৌজি হবো ঘর-সংসার ফেলে!
মা গো, আমায় দু-হাত ভরে করো আশীর্বাদ!

তুষার পাতে কাঁপবো না; প্রখর রৌদ্রে ঘামবো না,
মুষলধারে বৃষ্টিপাত আর বজ্রপাতে টলব না।
গৃহত্যাগী দেব-উপাসক সন্ন্যাসীদের মতো;
ভারতলক্ষ্মীর উপাসনায় করবো কঠোর ব্রত!
জন্মান্তরে আবার যদি আসি মা তোর কোলে,
বুঝবি তবে এসেছিলাম ফৌজি হবো বলে!
ঠিক এভাবেই যুগে যুগে আসবো ফিরে ফিরে।
জন্ম দেবে তোর মতো মা গর্ভে ধারন করে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *