ট্রামের গল্প * কাবেরী বোস

ট্রামের গল্প
কাবেরী বোস
গলাটা খুব চেনা কেউ যেনো বললো ,এসে গেছে নামবে না তপুবাবু ! তপুর ঘুম টা ভেঙে গেলো!! বাসে ট্রামে উঠলেই সাত বছরের তপুর ঘুম পেয়ে যায় ! অবশ্য সব সময় নয় স্কুল থেকে ফেরার সময় শুধু , সেইই তো কত সকালে মা উঠিয়ে দেয় তারপর বাবার সাথে স্কুল , ছুটিতে মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফেরার সময় তপুর ঘুম এসে যায় মাঝে মাঝে!! কিন্তু এইই ট্রামেই তো হরিকাকু বুলবুল ভাজা বিক্রি করতো ! একটা ব্যাগ থেকে কি সুন্দর প্যাকেট প্যাকেট করে হরিকাকু বুলবুল ভাজা দিতো, সব বাচ্চারা কিনতো দাম মাত্র ছ টাকা! মা রোজই প্রায় কিনে দিতো! তপু একটা একটা করে খেতো বাড়ি ফেরা অবধি ! খুব খিদে পেলে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলতো!! কিন্তু যেটা সে খেতো সেটা আসলে কাঠিভাজা মশলা দিয়ে মাখা বুলবুল ভাজা কেন যে বলতো হরিকাকু কে জানে!! হরিকাকু তাদের সাথেই নামতো মনে হয় ওইদিকেই কোথাও থাকতো ,বেশ ভাব হয়েছিলো তপুর হরিকাকুর সাথে , হরিকাকু রোগা লম্বা , মুখে সাদা কালো খোঁচা খোঁচা দাড়ি , একটা ঢলকা জামা আর পাজামা , পায়ে হাওয়াই চপ্পল পড়ে হরিকাকু রোজ আসতো!! তপু রোজ হাত নেড়ে টাটা করে বাড়ি আসতো মায়ের সাথে… একদিন মা বাড়ির সবার জন্য বুলবুল ভাজা কিনেছিলো হরিকাকুর কাছ থেকে… তারপর একদিন হরিকাকু আর এলোনা , কোনোদিন এলোনা!! তপু রোজ মাকে বলতো হরি কাকু যেদিকে যেতো সেইদিকে যেতে ওইদিকেই হয়তো হরিকাকুর বাড়ি হবে… কিন্তু মা যেতোনা। ঘুম টা ভাঙতেই দেখলো মা টিকিট কাটছে আর কণ্ডাক্টর কাকু মা কে বলছে ,” হরি দা আর আসবেনা বৌদি ওর মাথার ব্যামো বেড়েছে যে , আবার পাগলদের হাসপাতালে ভর্তী করতে হয়েছে , ওর যে মাথা খারাপ বৌদি, বৌ মারা গিয়েছিলো সন্তান হতে গিয়ে , তারপর ছেলেটাকে বুকে আঁকড়ে মানুষ করছিলো কিন্তু সেইই ছেলেও মাত্র দশ বছরে স্কুলের সামনে এক লড়ির ধাক্কায় !! সব শেষ হয়ে যায় তাইতো হরিদা বাচ্চাদের ওইসব বিক্রি করে বেড়ায় !! কিন্তু মাঝে মধ্যেই মাথার ব্যামো বাড়লেই পাড়ার লোকেরা হাসপাতালে ভর্তী করে দেয় , ওর এক ভাই আছে সেইই দেখাশোনা করে ওকে… এইই ট্রামই ওর প্রাণ বৌদি আর কোথাও যায়না এখানেই বাচ্চাদের ওই বুলবুল ভাজা বিক্রি করে বেড়াতো কিন্তু এবারে শুনছি খুব বাড়াবাড়ি হয়েছে তাই জানিনা আর ফিরবে কিনা !!তপু সব কথা বুঝতে পারেনা মাকে জিজ্ঞেস করে , মা বলে , আসবে ঠিক আসবে হরিকাকু দেখিস , একটু শরীর খারাপ হয়েছে বাবা… তপু মায়ের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখে হরিকাকু যে গলিটায় চলে যেতো সেদিকে তাকিয়ে রইলো !!
#নীলবৃষ্টি
স্বত্ব সংরক্ষিত