শিরোনাম – ‘রায়বেঁশে’ – গুরুসদয় দত্ত , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আধুনিকা রাইহানারা

প্রবন্ধ

শিরোনাম –
‘রায়বেঁশে’ – গুরুসদয় দত্ত , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আধুনিকা রাইহানারা l

বাংলার লোকশিল্পের এক চমকপ্রদ ও বিশিষ্ট ধারা হল ‘রায়বেঁশে’ l লোকনৃত্য শিল্পীরা মূলত পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম ,বাঁকুড়া ও বর্ধমানের অধিবাসী ছিলেন l এর উৎপত্তি প্রসঙ্গে বলা হয় যে, একসময় রাজ রাজরা ও জমিদারদের ‘রায়বেঁশে’ নামক সৈন্যবাহিনী ও দেহরক্ষী ছিল l জমিদারী প্রথা অবলুপ্তির সাথে সাথে এই প্রথারও বিলুপ্তি ঘটে l শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষমতাকে মূলধন করে অর্থ সংস্থানের কোনো উপায় থাকলোনা l চাষের কাজে যুক্ত হতে হলে যে মন মানসিকতার প্রয়োজন তেমনটি তাদের ছিলোনা l ফলে অনেকেই ঠ্যাঙাড়ে ও ঠগীদের দলে যোগ দেয় l যদিও ইংরেজ সরকার ক্যাপ্টেন স্লীম্যান কে ঠগী দমনের দায়িত্ব দিয়েছিলো ফলে বহু ঠগী ধরা পরে l ১৯৪০ এ প্রায় পাঁচশত ঠগীকে ফাঁসি দেওয়া হয় তবু রায়বেঁশে নৃত্যশিল্পীরা যেন সমাজের ত্রাস হয়েই বেঁচে রইলো l

‘রায়বেঁশে’ শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে l লোক সংস্কৃতির গবেষক পুলকেন্দু সিংহ মনে করেন , ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন মুর্শিদাবাদের ফতেসিং পরগনার দুর্গরক্ষক ওসমান খান ছিলেন বাংলার সুলতানি শাসনের প্রতিনিধি l তারাও দিল্লীর মুঘল আধিপত্য মেনে নেয়নি l কাজেই বাংলার শক্তিকে দমন করে দখল করার জন্য আকবর বাদশা সেনাপতি মানসিংহ কে বাংলায় পাঠান l মানসিংহের সাথে এসেছিলেন তাঁর সহকারী সেনাধ্যক্ষ সবিতা রায় দীক্ষিত l তাঁর সাথে ছিল দুর্ধর্ষ ভীল সৈন্যদল অর্থাৎ ভল্ল বা বল্লমধারী রাজস্থানি যোদ্ধা l মানসিংহ ওই অঞ্চল দখল করে সবিতা রায় দীক্ষিত কে ময়ূরাক্ষী নদী তীরের মুণ্ডমালা নামক স্থানের হাড়ি রাজাকে পরাজিত ও নিহত করেন l পুরস্কার স্বরূপ দিল্লির বাদশাহের অনুমতি ক্রমে তিনি ফতেসিং পরগনার শাসক নিযুক্ত হন ও গড় নির্মাণ করে সেখানেই বসবাস শুরু করেন l ভল্ল রাজস্থানি যোদ্ধারাও সেখানে থেকে যান l এরা দৈহিক শক্তির অধিকারী হলেও চাষ আবাদে একেবারেই অনভিজ্ঞ ছিলেন l কাজেই তারা জমিদারের লাঠিয়াল সৈন্য হয়েই থেকে যায় l এরাই লেঠেল , পাইক ,বরকন্দাজ হিসাবে কাজ শুরু করে l ক্রমে জমিদারদের দেহরক্ষী হয়ে ওঠে , শত্রু দমন করে l এরাই স্থানীয় হাড়ি , বাগদি , ডোম , বায়েনদের নিয়ে “রায়বেঁশে ” দল গঠন করেছিল l ” রায় ” শব্দটির অর্থ বড় বা সম্ভ্রান্ত l ” বেঁশে ” শব্দটির অর্থ বাঁশ l বাঁশের শক্ত লাঠি দিয়ে দেখানো কসরৎ , রায়বেঁশে l জমিদারদের লাঠিয়াল দের হাতে থাকতো লম্বা বাঁশ , পায়ে ঘুঙঘুর , খোল করতালের তালে তালে তারা শীরিরিক ক্রিয়াকলাপ প্রদর্শন করতো l

‘রায়বেঁশে’ রণনৃত্যের পুনরুত্থানে গুরুসদয় দত্তের ( ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ – ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ ) অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে l তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ আই۔ সি ۔এস অফিসার , সরকারি কর্মচারী ( কালেক্টর , কৃষি ও শিল্প বিভাগের সচিব , জেলা শাসক ) লোকসাহিত্যের গবেষক ও ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা l ব্রতচারীদের মধ্যে তিনি ‘প্রবর্তকজী’ নামে পরিচিত ছিলেন l তাদের অভিবাদন ভঙ্গী , বেশ , মাতৃভাষা প্রীতি , স্বাস্থ্যজ্ঞান , সত্যনিষ্ঠা , সংযম , প্রফুল্লভাব , আত্মনির্ভরতা , অধ্যাবসায় খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল l এই সময় তিনি এই বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকনৃত্য ” রায়বেঁশে ” কে ব্রতচারী আন্দোলনের সাথে যুক্ত করেন , রায়বেঁশে নৃত্যশিল্পীদের সাথে যোগাযোগ করে এই লোকনৃত্য কে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করেন l কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ বহু বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ব গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন l

আসলে স্বদেশকে ভালোবাসা থেকেই গুরুসদয় দত্তের রায়বেঁশে লোকনৃত্যকে নতুন করে গড়ে তোলার সাধনা l এই প্রচেষ্টায় উৎসাহিত হয়ে , ২৭ শে ফাল্গুন ১৩৩৭ তারিখে একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গুরুসদয় দত্তকে লিখেছিলেন ,

” বিদেশ থেকে ফিরে এসে আপনার আর একটি যে অধ্যবসায় দেখলুম তাতে আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়েছে l দেশের স্বাস্থ্য এবং অন্নের সংস্থান খুবই জরুরী সন্দেহ নেই কিন্তু আনন্দের প্রকাশ তার থেকে কম প্রয়োজনীয় নয় l দেশের জনসাধারণ বলতে যাদের বোঝায় সেই পল্লীবাসীরা তাদের নৃত্য গীতে কাব্যকলায় অজস্রভাবে তাদের প্রাণের আনন্দ প্রকাশ করেছে l মরা নদীর মাঝে মাঝে জল কুন্ডের মত এখনো তারা অবশ্যই দেখা যায় , কিছুদিনের মধ্যে তার সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হবে এমন আশঙ্কা আছে l আমাদের শিক্ষিত — সম্প্রদায়ের মূঢ়তা তার অন্যতম কারণ l আমরা গ্রন্থকীট , দেশের গভীর প্রাণ প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের যোগ নেই l পুঁথির নজীর অনুসরণ করে বিদেশীয় শিল্পকলা সম্বন্ধে পাণ্ডিত্য করতে আমাদের উৎসাহ , কিন্তু সেই রসবোধ নেই যাতে ঘরের কাছে সাধারণের মধ্যে যেসব সৌন্দর্য প্রকাশের উপকরণ আছে তার যথাযোগ্য মূল্য নিরূপণ করিতে পারি l তার মধ্যে একটি হচ্ছে নৃত্য l সরস্বতীর এই মহাদ্দানকে (মহৎ দান ) আমাদের ভদ্র সমাজ উপেক্ষা করে পেশাদারের ঘরে ঠেলে দিয়েছে l জন সাধারণের মধ্যে আড়ালে আবডালে কিছু কিছু আছে সসঙ্কোচে আপনি তাকে অখ্যাতি থেকে মুক্ত করে সর্বজন এর মধ্যে তার আসন করে দেবার চেষ্টা করছেন , এ কাজটা বড় কাজ l সকল রকম আনন্দের প্রকাশ মানুষের প্রাণ শক্তিকে জাগরুক করে রাখে , মানুষ কেবল অন্নের অভাবে মরেনা — আনন্দের অভাবে তার পৌরুষ শুকিয়ে মারা যায় l আপনি পল্লীর পুরাতন রায়বেঁশে নাচকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন ,এরকম পুরুষোচিত নাচ দুর্লভ l
এই নাচের উৎসাহ কে আপনি ভদ্রমণ্ডলীর মধ্যেও সঞ্চারিত করে দিচ্ছেন l পাশ্চাত্য মহাদেশের নৃত্যকাল পৌরুষেরই সহচারি l আমাদের দেশেরও চিত্ত দৌর্বল্য দূর করতে পারবে এই নৃত্য l তাই আমি কামনা করি আপনার চেষ্টা ব্যাপক হোক সার্থক হোক l ”
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ,
” এ রকম পুরুষোচিত নাচ দুর্লভ l আমাদের চিত্ত দৌর্বল্য দূর করতে পারে এই নাচ l ‘ রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ ও ইচ্ছাতেই শান্তিদেব ঘোষ রবীন্দ্রনাট্য
” নবীন ” নাটকে রায়বেঁশে আঙ্গিকের নাচের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিলেন l ব্রতচারী ও শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব ও সমকালীন কিছু নাটকে এই রায়বেঁশে নাচ অঙ্গীভূত হয়েছে l রায়বেঁশের উদ্ভব সম্পর্কে এমন কথাও প্রচলিত আছে যে , আদিম যাদুনৃত্য থেকেই এই রণনৃত্যের উদ্ভব হয়েছে l আসলে গুহাচিত্রে শিকারের নৃত্য দৃশ্য , টেরাকোটার বা পাথরের মুখোশ দেখে মনে হয় রণনৃত্যের উদ্ভব ঘটেছিল সেই আদিম যুগে l আর তা প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থারই অংশ ছিল l যুদ্ধ নৃত্যে যাওয়ার আগে মানুষ যেমন যুদ্ধনৃত্যের মহড়া দিত , যুদ্ধে জয়লাভ করার পর বিজয় উৎসবেও তেমন এই নৃত্য প্রদর্শন করতো l রায়বেঁশে নৃত্য এই যুদ্ধনৃত্যেরই পরিবর্তিত রূপ বলে দাবি করেছেন গবেষক l প্রাচীন নৃত্যের পরিবর্তন ঘটলেও – লোকনৃত্যের মূল ধারা হল যুথবদ্ধতা l এই নৃত্যেশৈলী সঞ্চারিত হয় ফসল বোনা , ফসল কাটা , চড়ক , গাজন , ধর্মরাজের পুজো , ছৌ নৃত্যের মধ্যে l লোকায়ত আদিবাসী জনজাতির মধ্যে ঘোড়ানাচ , পাইক , কঠিনাচ , নটুয়া , রায়বেঁশে বিশেষ জনপ্রিয় l

রবীন্দ্ররচনাবলীর তৃতীয় খন্ডের ” খাপছাড়া ” তে আমরা
রায়বেঁশে নৃত্যের উল্লেখ দেখি –

বর এসেছে বীরের ছাঁদে ,
বিয়ের লগ্ন আটটা
পিতল – আঁটা লাঠি কাঁধে ,
গালেতে গালপাট্টা l
শ্যালির সঙ্গে ক্রমে ক্রমে
আলাপ যখন উঠলো জমে ,
রায়বেঁশে নাচ নাচের ঝোঁকে ,
মাথায় মারলে গাট্টা l
শ্বশুর কাঁদে মেয়ের শোকে ,
বড় হেসে কয় ঠাট্টা l

বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে বিশেষ করে নারীদের ওপর বিভিন্ন ধরণের আক্রমণের পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে এবং মানসিক বলিষ্ঠতা বজায় রাখতে কিশোর কিশোরী তরুণ তরুণীর মধ্যে রায়বেঁশে কে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টায় নিযুক্ত আজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান l ক্যারাটে , ক্রিকেট , ব্যাডমিন্টনের পাশাপাশি রায়বেঁশে নৃত্যকেও জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে l কুস্তি ,তলোয়ার ,লাঠি খেলা ,আগুন খেলার সমন্বয়ে সৃষ্ট এই নৃত্য আজ আধুনিক রূপ পরিগ্রহ করছে l

বর্তমানে শান্তিনিকেতনে ব্রতচারী নাচের মধ্য দিয়ে রায়বেঁশে কে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা চলছে l গুরু পরম্পরা প্রাপ্ত ব্রতচারী শিক্ষক শ্রী নারেশ বন্দ্যোপাধ্যায় , যিনি ‘ব্রতচারী নরেশজি’ নামেও পরিচিত ছিলেন , ব্রতচারীর মূলধারা কে অক্ষুন্ন রেখে ব্রতচারী আন্দোলনকে এগিয়ে দিয়েছিলেন l প্রধানত রায়বেঁশে মার্শাল নৃত্যের মাধ্যমেই তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন l গুরুসদয় দত্ত গ্যালারি মিউজিয়ামে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন , বাংলার লোকশিল্প ও নৈপুণ্য প্রদর্শনের জন্য এটি নিবেদিত একটি প্ল্যাটফর্ম যা প্রতিষ্ঠা করোছিলেন আই ۔সি۔ এস۔ গুরুসদয় দত্ত এবং এই কর্মকান্ড কে শুধু ভারতবর্ষেই নয় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিনি রায়বেঁশে নৃত্য বা۔মার্শাল ড্যান্সকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন l রায়বেঁশে নৃত্যকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য ভারত সরকার 2003- 2005 সালে ‘ গুরু শিষ্য প্রকল্প ‘ র অধীন তাঁকে ” রায়বেঁশে নৃত্যের গুরু ‘ হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন l

তবু কয়েকবছর আগে পর্যন্ত রায়বেঁশে নাচের যে জনপ্রিয়তা ছিল , বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মার্শাল নৃত্যশিল্পী দের ডাক আসতো , ঢোল , কাঁসর , ঘন্টার তালে তালে যুবক যুবতীরা নানা কসরত দেখাতো – তা যেন ক্রমশ থিতিয়ে আসছে l মুর্শিদাবাদের একটি ব্রতচারী সংস্থা রায়বেঁশে নাচকে বাঁচিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে l শ্ৰীমন্ত দাস পোদ্দার জানিয়েছিলেন ,
” তাদের লক্ষ্য রায়বেঁশে কে ফের প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা l ” এই উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রশাসন l

রায়বেঁশে নৃত্যের নামডাক আছে কাটোয়ার কোশিগ্রামের শিল্পীদের l মাথায় লম্বা চুল , দুই হাতে দুই গরুর গাড়ির চাকা , জলভর্তি ঘড়া নিয়ে লম্বা বাঁশ নিয়ে তরতরিয়ে ওঠা , ঘরের চালে উঠে ডিগবাজি খেতে খেতে নামা – র কলাকৌশলের যে ধারা ছড়িয়ে আছে – তাই ‘রায়বেঁশে ‘ l
সাধারণত পনেরোজন শিল্পী নিয়ে একটি দল গঠন করা হয় l দলপতি দুঃখহরণ পন্ডিত শুনিয়েছিলেন রায়বেঁশে নৃত্যের গল্প , যার সারমর্ম হল – তাঁদের পরিবার ছয় সাত পুরুষ ধরে রায়বেঁশে নাচের সঙ্গে যুক্ত l তাঁরা পূর্বপুরুষেরা রাজা জমিদারদের লাঠিয়াল ছিলেন , দেহরক্ষীর কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে রাজা রানীর মনোরঞ্জনও করতে হত l একদিকে যেমন শত্রুর সঙ্গে লড়াই করতে হতো অন্যদিকে তেমনি নাচ দেখিয়ে প্রভুদের আনন্দ দিতে হতো l সেদিনের লাঠি খেলার কসরতই এখনকার রায়বেঁশে নৃত্য l এখানে বাজনার তালে তালে যুদ্ধের মহড়া দিতে হয় l আগেকার দিনে লাঠি যুদ্ধ কেমন হতো তা রায়বেঁশে নাচে দেখানো হয় lশুধু যে লাঠি খেলাই দেখানো হয় তা নয় বাজনার তালে তালে নানা শারীরিক কসরতও দেখানো হয় l দলে কয়েকজন থাকেন যারা ঢোল আর কাঁসর বাজান আর বাকিরা নৃত্য প্রদর্শন করেন l এক্ষেত্রে সাজটা খুবই জরুরী l নাচের সময় লাঠিয়াল বেশি নাচ অনুষ্ঠানকে আরো সুন্দর করে তোলে , এই সময় মুখ থেকে নানা রকম আওয়াজ করতে হয় l নাচের সময় আগেকার দিনে এমন মুখ দিয়ে আওয়াজ করে লাঠিয়াল সবাইকে সজাগ করে দিত l বর্তমানে তাদের নানা সরকারি অনুষ্ঠান থেকে ডাক আসে , মাসে এক এক জন শিল্পী হাজার দশেক টাকা উপার্জন করতে পারেন l অন্য সময় চাষবাস তো আছেই l

‘রায়বেঁশে’ মার্শাল নৃত্যের মাধ্যমে সংশোধনাগারে বন্দীদের মানসিকতা সংস্কারের আপ্রাণ চেষ্টা চলছে l কারাগার জীবন থেকে মুক্তি পেলেও শুধুমাত্র রায়বেঁশে নাচের টানে জেলে ফিরে এসে গোরাচাঁদ ঘোষ জানিয়েছেন –
” জেলের ভেতর এই কাজটার সাথে যুক্ত হওয়ার পর জীবনটাই বদলে গিয়েছে l ছাড়া পাওয়ার পরও নাচটা চালিয়ে যাচ্ছি l জীবনের অক্সিজেন বলতে পারেন l ”

মুর্শিদাবাদের ছাত্রী রাইহানা বলেন ,
” আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতিতে নাচ গান নিষিদ্ধ l তাই বাধা এলো বাড়ি থেকে , আত্মীয় পড়শিদের থেকেও l পরে অবশ্য লোকে বুঝেছে আমরা খারাপ কিছু করছিনা ” l শত প্রতিকূলতা কাটিয়েও মুর্শিদাবাদের শবনম , শুকতারা , মৌসুমীরা রায়বেঁশে মার্শাল নৃত্যকে ভালো বেসেছে l বাধা ছিল ধর্ম ,বাধা ছিল পেটে চনমন খিদে , তবু চোখে চোখ রেখে শুকতারা খাতুন রা বোল তুলেছে ,
” জাগিন জাগিন জাগিন যা তা তা তা তাতাক ধা ” l

আজ
রাজ্যের গন্ডি ছাড়িয়ে ছুটছে অশ্বমেধের ঘোড়া – রায়বেঁশের কন্যা বাহিনীরা l

( শব্দ সংখ্যা – ১৫০০ )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *