বিষয় – “সামাজিক অবক্ষয়ে অশান্ত আবহাওয়া” কলমে – কাবেরী রায় চৌধুরী

বিষয় – “সামাজিক অবক্ষয়ে অশান্ত আবহাওয়া”

কলমে – কাবেরী রায় চৌধুরী

যেদিকে তাকাই নৈরাশ্যে, হতাশা আর শোকাতুর পরিবেশ- পরিস্থিতি, চোখে সমুদ্রের নীল জলের লোনা স্রোত। নারীমন ডুঁকড়ে কাঁদে পৌরষত্বের প্রতাপে, কেউ দেখতে পায় না, ঘরের চার দেয়ালে আবদ্ধ। কিশোরী মেয়ে লালসার শিকার, ধর্ষিতা হয়ে সমাজে লজ্জায় মুখ ঢাকা, দোষী পশুর দল বুক ফুলিয়ে তাপ উত্তাপহীন, নিমেষে মিশে যায় ভিড়ে, আবার নতুনের সন্ধানে। অপরাধের শাস্তি নেই, মানবিকতা প্রশ্ন চিহ্নে দাঁড়িয়ে ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন।

২০২৪ এর ৯ই আগষ্ট অভয়া টানা ছত্রিশ ঘন্টা ডিউটি করে একটু ঘুমের সুযোগ পেয়েছিল, এরই মধ্যে ডিউটিরত অবস্থায় রেপ ও খুন হয়ে যেতে হয়। আজও পর্যন্ত যথার্থ বিচার পেলো না অসহায় বাবা মা, বেশ কয়েকজন যুক্ত থাকা সত্ত্বেও অধরা। ওষুধে ভেজাল, রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে অসুবিধা হচ্ছিল জানানোটাই তার জীবনে সমাপ্তি ডেকে আনলো। সততার মূল্য একজন সত্যনিষ্ঠ ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন চিরতরে বিদায় নিয়ে চলে গেল। রাতারাতি প্রমাণ লোপাট, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে বারবার। ধীরে ধীরে থিতিয়ে আসে গতানুগতিকতা, ধামাচাপা দিয়ে এগিয়ে চলেছে একের পর এক ঘটনার উপসংহার।

২০১৪ – ১৬ থেকে প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যের চাকরির ফলে টেট বাতিল কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির ফলে যোগ্য প্রার্থীরা চাকরিহারা, বঞ্চিত পথে বসে ভবিষ্যৎ অথৈ জলে ভরাডুবি। সমাজের চতুর্দিকে ঘোর অমানিশার রাত, নতুন প্রজন্মের কাছে মাথা তুলে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ। উচ্চ মেধাবীরা ভিনদেশে বা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে, নিজের দেশে কর্মসংস্থান নেই, সামাজিক এই অবক্ষয়ের জন্য যারা দায়ী তারা দেদার টাকার মালিক, শিক্ষার থেকে তোলাবাজ, অসৎ, মিথ্যেবাদী, ছল, চাতুরীতে রসাতলে উচ্ছন্নে তলিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ, সাদাসিধে লোকের দুর্গতি চরমতম। বেকারত্বে ছেয়ে গেছে গোটা রাজ্য, অভাব ও অভিযোগে বিপথে পা বাড়াচ্ছে যুব সম্প্রদায় এর ফল স্বরূপ ঠক জোচ্চোর, দালাল চক্র রমরমিয়ে বাড়বাড়ন্ত। বিশ্বাস যোগ্যতা সন্দিহান পর্যায়ে বিষাক্ত বায়ু ছড়াচ্ছে, বায়ু দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের অপরাধপ্রবণতা। টাকা রোজগারের লিপ্সায় খাদ্যে ভেজাল, মানুষ মরলো কি বাঁচলো বা দিন কে দিন নিত্যনতুন রোগের উপসর্গ কারো যায় আসেনা মুদ্রাস্ফীতির বাজারে মুনাফা অর্জনে পাখির চোখ লক্ষ্য।

সদ্য ঘটে যাওয়া কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের পর্যটকদের উপর হত্যালীলা। হিন্দু ধর্মের দোহাই দিয়ে পুরুষদের গুলি বর্ষণ, নারীদের রেহাই দেওয়া কি মানবিকতা? কখনোই নয় উদ্দেশ্য প্রণোদিত হত্যালীলা। সন্ত্রাসবাদীদের কোন ধর্ম নেই, হিন্দু, মুসলিম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে অশান্তি অরাজকতা ধ্বংসের পথে হোলি খেলা। “ঈশ্বর ও আল্লাহ তেরে নাম, সবকো সম্মতি দে ভগবান।” কাশ্মীর বহুদিন ধরেই সন্ত্রাসবাদীদের কীর্তিকলাপের পীঠস্থান, ওদের উপরে রয়েছে বড় খেলোয়াড়, তারা পুতুল নাচের মতো নাচাচ্ছে ওদের মাথাগুলোকে, দেশটাকে অশান্ত করে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাঁধিয়ে হানাহানি, গোলাগুলি, সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়ে কিছু মানুষ কমানো। বড় মাথার মদত পুষ্ট এরা, একদিক থেকে চোখ ফেরাতে আরেক দিকে মানুষকে বিব্রত করাই এদের দ্বিচারিতা। সমাজে পাপাচার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধে রেখেছে, এর থেকে মুক্তির উপায় মানুষকেই সোচ্চার হতে হবে। আগুন পাখি হয়ে বিষ উদ্গার করে সমূলে ধ্বংস করতে হবে নাশকতা মূলক অভিসন্ধি।

জনগণ সচেতন হও, চারিদিকে লোলুপতার গ্রাসে ঘৃণিত নৃশংসতা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় ধর্মান্ধতা নয় মহামানবের মিলন তীর্থভূমি। সবার রক্তে লালিমা স্রোতে সবার সবারে প্রয়োজন। রাম ও রহিম রক্তের প্রয়োজনে একে অপরের কাছে শরণাপন্ন, “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না – হে বন্ধু আমার।।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *