উপন্যাসিকা। সূর্য শিশির। পর্ব-৪। ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।

উপন্যাসিকা।
সূর্য শিশির।
পর্ব-৪।
ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।
বাচ্চাটা খুব কাঁদছে। আয়াদিদি পুষ্প বাচ্চার জন্য ফিডিং বোতলে দুধ ভরতে কিচেনে গেছে। শতমন্যু গিয়ে বাচ্চাকে পরম যত্নে বুকে তুলে নেয়। কি নরম! তুলোর পুতুল যেন! এমন সন্তানকে ফেলে রেখে মধুরা প্রতিদিন দুপুরে বেরিয়ে যায়। সে এখন তুলনামূলক সাহিত্যের ওপর গবেষণা করছে। তার শিক্ষক দেবর্ষি স্যার! বৃন্দা ফোন করে কুহেলীকে। -‘ মধুরার খবর কি রে? সেদিন ফেসবুকে ওর একটা পোষ্ট দেখলাম। ‘ভালোবাসা কোনো বাধা মানে না। আমার প্রেম যদি খাঁটি হয় তবে তুমি আমার হবেই।’- এই সব হাবিজাবি লেখা। ‘- কুহেলী বলে -‘ঠিক বলেছিস রে! আমারও চোখে পড়েছে পোষ্টটা। ডি.আর.স্যারেরও কি চোখে পড়েনি পোষ্টটা!’-
হ্যাঁ পোষ্ট একটা নয়। সপ্তাহে একদিন অন্তর একদিন পোষ্ট লেখে মধুরা। শতমন্যু শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরে। বাবার কাঁধে মাথা রেখে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে শিশু। শতমন্যু ভাবে–সম্পর্ক যেন সুতোর মতো। বেঁধে রাখে দুটি হৃদয়কে। আর তৃতীয় কোনো শত্রু বর্গির মতোই ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিঁড়ে দিতে চায় সেই সুতো। নিঃস্ব করে দেয় সম্পর্কটাকে।
সন্ধ্যার আবছায়ায় শতমন্যুর চোখে পড়ে বাউন্ডারি ওয়ালের ওপাশে কেটে ফেলা গাছটার ওপরে।গাছটা পরিবেশকে বাঁচাতে চেয়েছিল।
পচে যাওয়া এই সমাজ, দুর্নীতি, নারী নির্যাতন, মৃতদেহের সঙ্গে পর্ণ ভিডিও…গাছ সহ্য করতে পারেনি… কারণ গাছটা, ফলফুল ধারণ করেছিল! নারীসত্তাকে ধারণ করেছিল… এই গাছের প্রতিবাদ!
অতএব গাছটা বাঁচার অধিকার হারিয়েছিল…
ওরা গাছটাকে মেরে ফেললো!
বৃন্দা বলে -‘ হ্যাঁ রে কুহেলী বল্, কি খবর? এতোদিন পরে!’- কুহেলী বলে -‘ আর বলিস না। মধুরা আবার বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছে। শতমের দিকে তাকালে কষ্ট হয়। ওর সঙ্গে কথা বলে না, শোয়ার ঘর আলাদা করে নিয়েছে। ছয়মাসের বাচ্চাটাকেও আয়ামাসির হাতে তুলে দিয়েছে।’-
‘- কিন্তু কেন? ওদের তো প্রেমের বিয়ে!’- বৃন্দা অবাক হয়।
-“মধু একট রিসার্চ করছে। তুলনামূলক সাহিত্যের ওপরে। দেবর্ষি স্যার ওর মেন্টার।’- কুহেলী বলে।
-‘ওহ্ ! বুঝেছি। তো আমরা কি করবো? ওকে বোঝাতে যাবো? আরে মনে নেই? শতমন্যুর সঙ্গে প্রথম ভালোবাসা ছিলো তো গোপার। শতমন্যুদের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিল গোপা। শতমন্যুর মা-বাবা গোপাকে দেখতে চেয়েছিলেন। ভাবী পুত্রবধূ। কেমন সুন্দর ম্যানেজ করে মধুও ঝুলে পড়লো। ভালোমানুষ গোপা কিছু বলতেই পারলো না।
‘-মনে নেই আবার! শতমের মা-বাবাকে ম্যানেজও করে নিলো। শতমকেও।’-
-‘মনে আছে রে, কি ভাবে চোখের জল লুকিয়ে সরে গেলো গোপা।’-
-‘আর শতমের কথা ভাব।ও নিজেও পুরুষ মাকড়সার মতো ধরা দিলো কুহকিনীর ফাঁদে!’-
-‘তবেই বোঝে। এই কেসে আমরা কি করতে পারি! তা ছাড়া শতমও তো গোপাকে চিট করেছিল। এখন ওদের কেস ওরা বুঝুক।আমি রাখছি। -‘আরে নারে ছাড়িস না। তোর কাছে শ্রীময়ীর নাম্বার আছে?দে আমাকে। কন্ট্যাক্ট করে দেখি, কোনো বুদ্ধি দিতে পারে কিনা! মাস্টার্সের পরে সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করলো তো শ্রী। বিদেশে শুনেছি সাইকোলজিস্ট হিসেবে বেশ নাম করেছে। আফটার অল আমরা সবাই বন্ধু।’-
-‘ ওক্কে বস ‘-