#কাকোরী #কলমে: অর্ণব পাল

#কাকোরী
#কলমে: অর্ণব পাল

উত্তরপ্রদেশের লখনউ জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম কলন্দরাবাদ। এ গ্রাম বিখ্যাত দুটি কারণে, এক তার দিশেরি আম আর দুই তার কাবাব। গ্রামের ঠিক মধ্যিখানে যে বুড়ো বট গাছ আছে, তার ঠিক তলাতেই পাশাপাশি মন্দির ও মসজিদ। যেমন দেবালয় তেমনি দুই সম্প্রদায়ের মানুষ ও যুগ যুগ ধরে শান্তিতে পাশাপাশি বাস করে আসছে। গ্রামের পাশ দিয়ে এঁকে বেঁকে গেছে রেললাইন। এ গ্রামের আরো একটা গোপন পরিচয় আছে, এর মাটির নিচে নাকি কয়েক কোটি টাকার কয়লা আছে, যার দিকে লোলুপ দৃষ্টি অনেকেরই।
গ্রামের মাতব্বর লাল্লন যাদব আর ঝুজ্জার মিঞা অনেক করেও গ্রামের লোক কে গ্রাম ছাড়তে রাজি করাতে সমর্থ হলো না, যার জন্য তারা মন্ত্রী সাধু সিংহের কাছে টাকা খেয়েছিল। নাম সাধু হলেও মন্ত্রী প্রবর বড়ই অসাধু। কলন্দরাবাদ এর কয়লার প্রতি তার অপরিসীম লোভ। কোনো বুদ্ধিতেই সুবিধে না করতে পেরে তারা সেই বহুল প্রচলিত পথ নিলো, ” divide and rule “।
একদিন ভোরে দেখা গেলো মন্দির প্রাঙ্গণ ভেসে যাচ্ছে গরুর রক্তে আর মসজিদ অপবিত্র হয়েছে শুকর মাংসে।
পারস্পরিক দোষারোপ এবং লাল্লন যাদব আর ঝুজ্জার মিঞার ইন্ধনে এতকালের সম্প্রীতি ভুলে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরের প্রতি চরম ঘৃণা প্রকাশ করতে লাগলো।
একদিন গভীর রাতে একটি ট্রেন লখনউ জংশন থেকে গ্রামের দিকে রওনা দিলো। ট্রেন ভর্তি অস্ত্র ও অসংখ্য সমাজবিরোধী। তাদের উদ্দেশ্য দাঙ্গা লাগিয়ে গ্রামের মানুষকে একেবারে নিকেশ করবার। কাকোরি স্টেশন পেরোনোর পরেই লাল্লন দেখলো লাইনের ওপর কিছু বন্য হাতি পথ আটকে দাঁড়িয়ে। ট্রেন থামতেই কিছু ছায়া মূর্তি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে গুলি ছুড়তে লাগল ট্রেনকে লক্ষ্য করে। এক ছায়া মূর্তি গার্ড আর ট্রেন ড্রাইভারকে বেঁধে ফেলল। বাকিরা ট্রেন এ উঠে আততায়ীদের গুলি করে মারতে লাগলো। আততায়ীরা কিছু বোঝার আগেই তারা প্রাণ হারাতে লাগলো। মরিয়া
ঝুজ্জার মিঞা এক ছায়ামূর্তি কে গুলি করতেই দেখলো গুলি যেন হাওয়াকে ভেদ করলো। সে “ভু ভু ” করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। সব নিকেশ হবার পর এক ছায়ামূর্তি তাদের সর্দারকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” বিসমিল জি! কাজ শেষ?” উত্তর এলো, ” হ্যাঁ আশফাক উল্লা! HRA ব্রিটিশ কে ঠান্ডা করে দিলো, আর এরা তো নরকের কীট এরও অধম। ” রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে সকলে চেঁচিয়ে উঠলো, ” বন্দে মাতরম! Hindustan Replublican Association জিন্দাবাদ। রামপ্রসাদ বিসমিল জিন্দাবাদ। আশফাক উল্লা খান জিন্দাবাদ!! ”
ভোরের আলো ফুটতেই গ্রাম বাসীরা দেখলো এক ট্রেন ভর্তি কিছু লোক মরে পড়ে আছে। তাদের দুই নেতা লাল্লন যাদব আর ঝুজ্জার মিঞা এক সাথে অজ্ঞান হয়ে আছে। তাদের বুঝতে বাকি রইলো না এদের অভিসন্ধি। কিন্তু তাদের এই হাল করলো কে? ট্রেন এর গার্ড কে জিজ্ঞেস করতে সে কেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতো গেয়ে উঠলো, ” সরফরোষি কি তামান্না আব হামারে দিল মায় হ্যায়, দেখনা হ্যায় জোর কিতনা বাজুয়ে কাতিল মে হ্যায়! ”
গ্রামের বৃদ্ধ প্রধান আকাশ পানে তাকিয়ে হাত জড়ো করে প্রণাম করে বললেন, ” ধন্য পুন্যাত্মা রামপ্রসাদ বিসমিল জি! আশফাক উল্লা খান জী!! আজও আপনারা দেশ রক্ষায় ব্রতী! বন্দে মাতরম!! “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *