তীর্থের পথে পথে হরিদ্বার পর্ব -২ কোয়েলী ঘোষ

তীর্থের পথে পথে হরিদ্বার
পর্ব -২
কোয়েলী ঘোষ

চণ্ডী মন্দির
শূন্যে নির্মল আকাশ , চারিদিকে সুগভীর অরণ্য ,পাহাড় ,নিচে কুলকুল বয়ে চলেছে মা গঙ্গা । রোপওয়ে করে উঠছি চণ্ডী মন্দির ।
আগে পথ ছিল দুর্গম । ট্রেকিং করে উঠতে হত । এখন রোপওয়ে চলছে ।
নীল পর্বতের শিখরে চণ্ডী দেবীর প্রাচীন মন্দির অবস্থিত ।মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী চামুণ্ডা । পুজোর ফুল , মিষ্টি কিনে এগিয়ে চলি । পুজো দিয়ে মন্দির পরিক্রমা করে কিছুক্ষণ বসি চাতালে । এখানে বছরে দুবার মেলা বসে । এবার ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি ।ওদিকে সন্ধ্যায় গঙ্গা আরতি শুরু হবে ব্রহ্মকুন্ডে ।

সন্ধ্যার সময় পৌঁছে গেছি গঙ্গার তীরে । সুমধুর সঙ্গীতে আর গঙ্গা স্তোত্র মুখরিত হয়ে উঠলো । নৃতের তালে তালে আরতি হচ্ছে আর পঞ্চপ্রদীপের আলো প্রতিবিম্বিত হয়ে পড়ছে গঙ্গার জলে । কাঁসর ঘণ্টা , শঙ্খ নিনাদে পূর্ণ হয়ে উঠছে মন ।জয়ধ্বনি উঠছে হর হর গঙ্গে …. জয় মা গঙ্গে …
পাতার ঠোঙায় গঙ্গার স্রোতে ভেসে চলেছে ফুল , প্রদীপ । ভেসে চলেছে জীবন প্রবাহ , সেই অনাদি কাল থেকে আজও —

মন্দিরময় এই তীর্থভূমিতে প্রচুর মন্দির ছড়িয়ে আছে । সেইসঙ্গে আছে পৌরাণিক গল্প । ঘুরে নেওয়া যায় পায়ে হেঁটে , কখনও বা অটো রিকশায় ।

বিল্বকেশ্বর মন্দির
প্রাচীন কালে এখানে বিল্ব বৃক্ষের বন ছিল বলে নাম বিল্ব পর্বত ।ভগবান শঙ্করের মূর্তির নাম বিল্বকেশ্বর । পাশেই পার্বতী মন্দির ।দুই মন্দিরের মাঝে বয়ে চলেছে
শিবধারা নদী । এখানে শীতল জলের একটি কুণ্ড আছে ,নাম গৌরীকুণ্ড ।

সপ্তঋষি আশ্রম
হরিদ্বার থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে সপ্তসরোবরের তীরে এই আশ্রম । কশ্যপ , ভরদ্বাজ , অত্রি , গৌতম , জমদগ্নি , বিশ্বামিত্র , বশিষ্ঠ এই সাত ঋষি এখানে তপস্যা করতেন । গঙ্গা এখানে সাতটি ধারায় বিভক্ত হয়ে হর কি পৌড়ি ঘাটের দিকে চলে গেছে ।

ভীমগোডা মন্দির — এখানে বীর ভীমের গদার ঘায়ে নির্মিত হয়েছে এক কুণ্ড ।
হরিদ্বারে আছে গঙ্গার অনেক ঘাট । কুশাবরত ঘাট ,রামঘাট , রাম ঘাট , বিষ্ণুঘাট ,সুভাষ ঘাট ।

এখানে খাওয়া দাওয়া সব নিরামিষ । দাদা বৌদির হোটেলে দেরাদুন রাইস , ঘি , ভাজা , তরকারি পুরো বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হয় ।

হরিদ্বারের প্রতি বারো বছর অন্তর পুর্ণ কুম্ভ আর ছয় বছর অন্তর অর্ধ কুম্ভ মেলা হয় ।

নীলকণ্ঠ মহাদেব

পরের দিন আমরা ভোরে উঠে চলেছি নীলকণ্ঠ মহাদেবের উদ্দেশ্যে ।
যেতে যেতে প্রথমে চোখে পড়বে বিশালাকার মহাদেবের ধ্যানমগ্ন মূর্তি ।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে গাড়ি চলেছে । অরণ্য ঘেরা পাহাড়ি রাস্তা , নিচে সাথে চলেছে মা গঙ্গা , ধারে কত উপল খন্ড । পাহাড় বেয়ে ঝরঝর করে পড়ছে ঝর্ণা । নিচে ছোট ছোট গ্রাম , ক্ষেত দেখা যায় । অপরূপ নির্জন শান্ত পরিবেশ ।
দূরে তিনটি পর্বত দেখা গেল যাদের ব্রক্ষl , বিষ্ণু , মহেশ্বর নামে পরিচিত ।
দেবতা আর অসুরের বিবাদে সমুদ্র মন্থনের পর যে বিষ নির্গত হয় সেই বিষ মহাদেব এখানে পান করেছেন , সেইজন্য মহাদেবের নাম নীলকন্ঠ ।

চলবে

ছবি ঋণ — কৌশিক পাল ।
মৌনিকা পাত্র ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *