“আমার বিশ্বরূপ” —– শংকর রায়

“আমার বিশ্বরূপ”
শংকর রায় 
*****
আর কদিনই বা বাঁচবো বলো অনামিকা ,
বুকের বাঁদিকে যে গ্যাসের কুণ্ডলী পাকিয়ে
থাকতো , আমি হালকা ঘুষি মেরে মেরে
তাকে ছড়িয়ে দিতাম সমস্ত বুকে l কয়দিন
হলো সেই গ্যাসের কুণ্ডলী মাথায় গিয়ে
আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে l আমার সমস্ত মস্তিষ্ক
আচ্ছন্ন করে রেখেছে l আমি সবসময় অন্য
রকম চাপ অনুভব করছি l এইরকম একটি
পরিস্থিতিতে তোমায় কিছু বলার আছে
অনামিকা , আমার তো এখন ঈশ্বর চিন্তা
করা উচিত্ ,তাই না ? কিন্তু পারছি কোথায়?
গভীর রাতে পৃথিবী ঘুমিয়ে গেলে আমিও
নিদ্রাহীন দুচোখ বুজে থাকি l আমি ঈশ্বরকে
দেখার কল্পনা করি l ঠিক তখন তুমি আসো
আমার সব ধ্যানের মধ্যে তুমিই প্রকট থাকো
সব নিবেদন ঈশ্বরমুখী না হয়ে তুমিময় হয় l
যতটা সম্ভব আবেগকে দূরে সরিয়ে ও যদি
দেই , কী দেখি জানো ? তাহলে দু তিনটি
উদাহরন দেই , মনে করো আমি রাম ভক্ত
বিভীষণ পুত্র তরনীসেন, রামের সাথে রামেরই
বিরুদ্ধে ধর্ম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি l নিজ পিতার
বলে দেওয়া আমাকে মারার একমাত্র গোপন
ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে রাম আমার মাথা, ধর থেকে সম্পূর্ণ
আলাদা করে দিলেন l সেই কাটা মুন্ডু আজ
রাম রাম না বলে, বলছে শুধুই তোমার কথা
কিংবা মনে করো আমি বীর হনুমান, সীতার
সামনে আনুগত্যের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছি
আমি নিজের বুক মধ্যিখান বরাবর চিরে
ফাঁকা করে ধরলাম, এ মা একী ! আজ তো
বুকের মাঝে রামসীতার ছবি নেই, সেখান
থেকে তো বেরিয়ে পড়ছে তোমার ছবি l
বিশ্বাস হচ্ছে না অনামিকা ? কী করেই বা
হবে, আর তোমার কিইবা দোষ ? তুমি তো
শুধু আমাকে নিয়েই আর বসে নেই l তোমার
রয়েছে কর্ম রয়েছে বিশ্বলোক l আর আমি
বেদনাহত যেনো অর্জুন l অস্ত্র ত্যাগ করে
ক্ষত্রিয়ের কর্তব্য ভুলে দিন গুনছি মৃত্যুর l
বিশ্বাস করো অনামিকা, এই ভর দুপুরে যদি
স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ এসে আমায় বিশ্বরূপ দেখিয়েও
যায় তবে আমি দেখবো ঠিকই কিন্তু সে
বিশ্বরূপ নয় রক্তমাংসের তোমার রুপ !!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *