বিরহিনী শীত —- মীনা দে

বিরহিনী শীত
মীনা দে।

হেমন্তের মধুর আলিঙ্গনে ধরা দিল শীতবালিকা। হেমন্তের স্বল্প উষ্ণতা এবং শীতের মধুর আমেজ একসাথে মিশে প্রকৃতিতে নেমে এলো শীতোষ্ণতার বাতাবরণ। হেমন্তের স্বল্প আয়ু , তাকে তো এবার বিদায় নিতেই হবে। শীত বালিকার ক্ষমতা কোথায় তাকে বেঁধে রাখবার। আলিঙ্গনাবদ্ধ শীত বালিকাকে খুব সন্তর্পনে দূরে সরিয়ে, তাকে সম্পূর্ণ একা করে দিয়ে বিদায় নেয় হেমন্ত। শীত বালিকা রইল পড়ে শোকে তাপে মূহ্যমানা। ধীরে ধীরে শীত বালিকার অঙ্গ জুড়ে দেখা দিল যৌবন দ্যুতি। কিন্তু তার বিরহ মলিন ব্যাথাতুর হৃদয়কে সে কিছুতেই শান্ত করতে পারল না। সে তার শরীরের যত অলঙ্কার যত আভূষণ সমস্ত একে একে খুলে ফেলতে লাগল। নিরাভরনা শীতের শরীর হয়ে উঠল বরফ শীতল।
ধরণীতে শুরু হলো পাতা ঝরার পালা আর শীতের কনকনে পরশ। শীত জীর্ণ শীর্ণ শুষ্ক দেহ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় , তার মন ক্রমশঃ যৌবন জ্বালায় দগ্ধ হতে থাকে। কিন্তু তার সঙ্গীর দেখা সে পায় না। তার সবটুকু আনন্দ সে ধরণীর জন্য বিলিয়ে দেয়। ফুল ফল সব্জিতে ভরে ওঠে ধরণীর মাঠ ঘাট প্রান্তর। সে জানতেও পারেনা তার কাছে আসবার জন্য সাজো সাজো রব তুলেছে বসন্ত নামে রজপুত্র, তাকে নিয়ে যাবে বলে। বসন্তের যখন সময় হল সে এসে পড়ল তার লোক লস্কর হাতি ঘোড়া সমেত। শীতকে উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে সবুজ মেখলা এবং ওড়নাতে সাজিয়ে তুলল বসন্ত। শীতের শরীরের উষ্ণতা ধীরে ধীরে ফিরে এলো। বসন্তের নীবিড় আলিঙ্গনে ধরা দিল শীত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *