#মূলাজোড়কালীবাড়িরপৌষ_মেলা @দেবযানীসেন(কবিতাকবিতা)

#মূলাজোড়কালীবাড়িরপৌষ_মেলা
@দেবযানীসেন(কবিতাকবিতা)

পরবর্তী অংশ……..
মেলায় ফিরে আসি, ভাগীরথীর তীর জুড়ে বেশ অনেকটা প্রশস্ত এই মেলা। শ্যামনগর স্টেশন থেকে নেমে সোজা লঞ্চ ঘাট বরাবর চলে গেলেই আভাস পাওয়া যাবে যে মেলায় প্রবেশ করেছি। একটি দ্বার বা ফটক আছে সেখানে প্রবেশ করে সরাসরি শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দের মন্দির দর্শন হবে। মন্দিরের দুধারে খুব সুন্দর গোলাপ ফুলের বাগান। বাম পাশ কাটিয়ে মেলার মধ্য দিয়ে গিয়ে মা ব্রহ্মময়ীর মন্দিরে প্রবেশের জন্য আরেকটি ফটক। এখানেই মেলার মূল আকর্ষণ, হরেক রকমের আহার্য দোকান, নানা প্রকারের আনন্দ উপভোগ করবার উপাদান ও হরেক পশরা সাজিয়ে বসা নানান দ্রব্যের দোকান। একটি ছোট্ট নাটমন্দির নিয়ে এগারো খানা শিবমন্দিরের মাঝে মায়ের অবস্থান। পূর্বেকার জরাজীর্ণ সংস্কৃত কলেজ আজ নব রূপে নির্মিত রবীন্দ্র ভবন। গঙ্গার সামনে একটি বিশ্বকবির ভাস্কর্য স্থানটিকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলেছে।

এবার মায়ের ব্রহ্মময়ী রূপে বিরাজমান হওয়ার কারণ বলি, এই কালীবাড়ির সঙ্গে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ভাই গোপীমোহন ঠাকুরের নাম জড়িয়ে আছে। গোপীমোহন ঠাকুরের আট বছরের মেয়ে ব্রহ্মময়ীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। বিয়ের দিন পালকি করে আহিরীটোলা ঘাটে ব্রহ্মময়ীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল,স্নানের জল ভরে আনার জন্য জলে নামলে তলিয়ে যায়, সেই দেহ ভেসে ওঠে মূলাজোড় ঘাটে। এরপরই স্বপ্নাদীষ্ট হন গোপীমোহন ঠাকুর। ব্রহ্মময়ীকেই স্বপ্নে দেখেন তিনি, এবং স্বপ্নেই জানতে পারেন যে ব্রহ্মময়ীর দেহ মূলাজোড় ঘাটে ভেসে উঠেছে। কালীরূপী ব্রহ্মময়ী তাঁকে বলেন, “আমি তোমার মেয়ে। আমার দেহ যেখানে ভেসে উঠেছে সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করো।” গোপীমোহন মূলাজোড়ে গিয়ে সত্যি সত্যিই মেয়ের দেহ পান এবং কাছের জঙ্গলে পান একটি কষ্টিপাথরের কালী মূর্তি। যদিও মন্দিরের কাজ সমাপনের পূর্বেই গোপীমোহন মারা যান। তারপর তার ছোট ছেলে প্রসন্ন কুমার ঠাকুর, (যার প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃত কলেজটিও সংস্কৃত চর্চায় শ্যামনগরকে নিয়ে গিয়েছিল খ্যাতির শীর্ষে) মন্দিরের কাজ সমাপন করেন। কিন্তু ঠিকমতো সংরক্ষণ না হওয়ার ফলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। শুধুমাত্র পূর্বসূরীদের পরিচয়ে নয় স্বনামধন্য পার্শ্ব অভিনেতা হরিধন মুখোপাধ্যায় (গু গা বা বা তে যিনি জাদুকর হয়েছিলেন), প্রখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় সুব্রত ভট্টাচার্য ও যজশ্বী সংগীত শিল্পী পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর বাসস্থানও একদা এই শ্যামনগর ছিল।
এন্টনি কবিয়াল বা এন্টনি ফিরিঙ্গীর দাদুর লবনের কারখানা টিও ছিল এই শামুক গড়ে। তার এন্টনি কবিয়াল হয়ে ওঠার পূর্বে সাহেবেও নিয়মিত যাতায়াত ছিল, কিন্তু ঐতিহাসিক অতীতের সংরক্ষণ না হওয়ার ফলে,রায় গুনাকার ভারতচন্দ্র, এন্টনি কবিয়াল (ফিরিঙ্গী), রস সাহিত্যিক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় , চিকিৎসক রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতি আজ বিলুপ্ত। ভ্রমণ পিপাসু বাঙালির নিশ্চিত গন্তব্য হতে পারত ইতিহাস বিজড়িত এই শামুক গড় বা শ্যামনগর যা আজ শুধুই কালের কালিমা লিপ্ত হয়ে লোকমুখের পরিচিতিতে আটকে আছে শুধু মাত্র এই মূলাজোড় কালীবাড়ির সৌজন্যে।
___*__*__*___

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *