পথের _গল্প ভ্রান্তি মিলি মজুমদার

পথের _গল্প
ভ্রান্তি

মিলি মজুমদার
***
মিষ্টি গদাধরপুর স্টেশনে বসে আছে আটটা চল্লিশের লোকালটা ধরবে ব’লে।
আজ খুব লেট করছে ট্রেনটা।মিষ্টির নজর যায় কপালে লাল ফেটি বাঁধা সাধুর মতন লোকটার দিকে।এই সাধুটা রোজ স্টিলের বড় গামলায় বসানো তেল সিঁদুর মাখানো এবড়োখেবড়ো মাটির চাঁই নিয়ে ট্রেনে উঠে যাত্রীদের কপালে মা মনসার নাম করে টিপ পরায় আর পয়সা আদায় করে।এ তার নিত্যদিনের ঠাকুর নিয়ে সফর।তবে এই টিপ পরা মিষ্টির সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য কোনোটাই হয়নি।কিন্তু আজ যে একেবারে অন্য দৃশ্য !! ষ্টিলের বড় গামলার থেকে সিঁদুর মাখানো এবড়োখেবড়ো মাটির চাঁই সান বাঁধানো বটগাছের তলায় রেখে ঐ গামলাতেই মুড়ি ঘুগনী আর একটা ডিম সেদ্ধ কিনে এনে একমনে বসে বসে খেয়ে আবার স্টেশনের কলের জলে গামলা ধুয়ে মা মনসাকে বসিয়ে কিছু খুচরো পয়সা গামলার ভেতরে ছড়িয়ে কপালে গামলা ঠেকিয়ে সফরের জন্য উঠে দাঁড়ায় সাধু!
রামকৃষ্ণের এক টুকরো কথা মনে পড়ে মিষ্টির, নটীবিনোদিনী নাটকের, “আসল নকল একাকার হয়ে গেছে—
এতো বিরক্তির মধ্যে নিজের মনে হেসে ওঠে মিষ্টি।
ট্রেন লেট করলে ভীড়টা আরো বেশি হয়।
অফিস টাইমে এতো ভীড় সামলে নিজেকে বাঁচিয়ে চলাফেরা করাটা সত্যি খুব দুষ্কর মনে হয় মিষ্টির।
নতুন চাকরী তে জয়েন করার পর থেকে
এই সমস্যা হচ্ছে।
১০টার মধ্যে অফিসে ঢুকতেই হবে না হলে—-ভাবতে ভাবতেই চলে আসে ট্রেন—
একটুও জায়গা নেই বসার ,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে বর্ধমান পর্যন্ত ,রোজ একইভাবে ভীরের মধ্যে দাঁড়ানো টা খুবই অসস্তিকর,
এক হাতে ব্যাগ জলের বোতল অন্যদিকে নিজেকে ভীড়ের মধ্যে আগলে রাখা~~
আজ যেন বেশী গুমোট গরম —
সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে,পনিটেল , শর্টহাতা বুকের বোতাম খোলা জামা , ডান হাতে রূপালি মোটা চেন–এক কানে মাকড়ি , অসহ্য!—-
এতো ভীড়ের মধ্যেও একটু পেছনে সরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে মিষ্টি কারণ পেছনে একজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে তাই ভরসা–
জোরে ট্রেন চলতে থাকে ,মিষ্টি ভাবে ছেলেটার কি উগ্রতা সাজগোজে ! অস্বস্তি করে ওঠে মনটা ,সামনের ষ্টেশন এ ছেলেটা নেমে গেলেই শান্তি —

ট্রেনটা দুলতে থাকে নিজের তালে—হটাৎ ছেলেটা মিষ্টির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার জামার কলার টেনে ব’লে ওঠে
সোজা ভাবে দাঁড়াতে পাড়ছেন না ? দুই হাতেই তো আপনি উপরের হ্যান্ডেল ধরে আছেন তাও অকারণে সমানে বেশী দুলছেন আর ম্যাডামের গায়ে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিচ্ছেন ঢুলে ঢুলে পড়ছেন ?

হতবাক হয়ে যায় মিষ্টি !! কি ভুল ধারনা !!-নিজের কাছেই নিজেকে ভীষণ ছোটো মনে হয় মিষ্টির, পেছনটা কত নিরাপদ মনে হয়েছিলো !! অথচ—

–সাধুটা ছেলেটাকে টিপ পরিয়ে দিতেই ছেলেটা পকেট থেকে পয়সা বের করে দেয়, সাধু সরে যেতেই বলে, ভন্ডসাধু পেটের দায়ে ,মেয়েদের ইজ্জত দিতে জানে ,নিজে থেকে না চাইলে মেয়েদের টিপ পরায় না–

ইশ! ছেলেটা সামনের ষ্টেশনেই নেমে গেল —কিছু কি বলতে হত ছেলেটাকে থ্যাঙ্কস বা ধন্যবাদ ?!

ট্রেন ও চলতে থাকে মিষ্টি ও ভাবতে থাকে—

মিলি মজুমদার
< ——————- >

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *