বিশ্বব্যাঙ্কের দাবী ভারতে নোটবন্দি, জিএসটির ফলে আর্থিক বৃদ্ধির হার নামতে পারে ৬ শতাংশে

১৩ই অক্টোবর, কলকাতাঃ গোটা বিশ্ব তো বটেই, বিশেষ করে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিল আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার বা আইএমএফ। সেই আশঙ্কা আরও উস্কে দিয়েছিল মুডি’জ ইনভেস্টর সার্ভিসের সমীক্ষা। কিছু দিনের ব্যবধানে, সেই একই সুর শোনা গেল বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্টেও। ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার আরও নামবে বলে আগাম সতর্কবার্তা শুনিয়ে রাখল ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক।

রবিবার, সাউথ এশিয়া ইকনমিক ফোকাসে বিশ্বব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার দ্রুত নামছে। ২০১৮-১৯ সালে যে বৃদ্ধির হার ৬.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল, এ বার তা এক ঝটকায় নেমে আসতে পারে ৬ শতাংশে। ২০২১ সালে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৯ শতাংশ হতে পারে এবং ২০২২ সালে তা ৭.২ শতাংশে তা পৌঁছতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল, ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা বাজারে যথেষ্ট গতি আনবে আর তার ফলে বাজার বেশ খানিকটা নমনীয় হয়ে উঠবে। কিন্তু, তা হচ্ছে না বলেই মনে করছে বিশ্বব্যাঙ্ক।

অবশ্য এই প্রথম নয়, ২০১৭-১৮ সালে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৭.২ শতাংশ। কিন্তু, গত বছর ওই হার নেমে এসেছিল ৬.৮ শতাংশে। ফলে, এই নিয়ে পর পর দু’বছর ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী থাকার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অথচ, আর্থিক বৃদ্ধির হার যে নিম্নগামী তা বোঝা গিয়েছিল ২০১৯-২০ সালের প্রথম তিন মাসেই। বাজারে চাহিদার ঘাটতির ফলে শিল্পক্ষেত্র এবং পরিষেবা ক্ষেত্র দুর্বল হতে শুরু করে। অর্থনীতির নিম্নগতি ও খাদ্যশস্যের ক্রয়মূ্ল্য কম থাকায় মুদ্রাস্ফীতি ২০১৯-২০ সালে ৩.৪ শতাংশে ও ২০১৯-২০ সালের প্রথমার্ধে ৪ শতাংশের মধ্যেই বাঁধা ছিল। তার ফলে অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছুটা স্বাধীনতা পেয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নিরপেক্ষ নীতি থেকে কিছুটা সরে এসে রাশ আলগা করতে পেরেছিল তারা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রেপো রেট ১৩৫ বেসিস পয়েন্ট কমাতে পেরেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

কিন্তু, নানা কারণে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নতুন নতুন দাওয়াইয়ের কথা এ বার ভাবতে হচ্ছে আরবিআই-কে। গত বারের থেকে চলতি খাতে ঘাটতি বেড়ে জিডিপির ২.১ শতাংশে এসে পৌঁছেছে, তাও জানিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক। এমন পরিস্থিতি যে বাজারের ভারসাম্য নষ্ট করছে সেই আশঙ্কার কথাও শুনিয়েছে তারা। কারণ হিসাবে, ভারতের বাজার থেকে পুঁজি বেরিয়ে যাওয়া এবং প্রাথমিক ভাবে ডলারের তুলনায় টাকার দাম অনেকটা পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাকেই মাইলস্টোন ধরা হচ্ছে। সেইসঙ্গে,  ২০১১-১২ থেকে ২০১৫-১৬ সালের নিরিখে দারিদ্র দূরীকরণের গতিও অনেকটা মন্থর হয়েছে বলেও জানিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক।

কী কারণে ভারতীয় অর্থনীতির এমন অধোগতি? কারণ হিসাবে নোটবন্দি ও জিএসটি-র মতো বড়সড় অর্থনৈতিক সংস্কারকেই দায়ী ঠাউরেছে বিশ্বব্যাঙ্ক। এই দুই সংস্কারের জেরে বাজার যথেষ্ট ধাক্কা খেয়েছে বলেই জানাচ্ছে বিশ্বব্যাঙ্ক। তা ছাড়া, ধুঁকতে থাকা গ্রামীণ অর্থনীতি ও বিপুল বেকারত্বও অর্থনীতির ভার আরও বাড়িয়েছে। তার ফলেই আর্থিক  উন্নয়নের গতি অনেকটা শ্লথ হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা না হলে বা ঘরোয়া চাহিদা না বাড়লে বাজার কুঁকড়ে থাকবে বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক ওই সংস্থাটি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্পোরেট কর ছা়ড়ের সিদ্ধান্তের ফলে কিছুটা লাভ মিলতে পারে বলে বিশ্বব্যাঙ্কের ওই রিপোর্টে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের দুর্বলতাই তুলে ধরছে তাও বলা হয়েছে রিপোর্টে।

আইএমএফ, মুডি’জের পর বিশ্বব্যাঙ্ক। একের পর এক আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট ও সমীক্ষায় ভারতের অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। দেশের অর্থনীতি যে বেশ ধাক্কা খেয়েছে সেই সতর্কবার্তাই তুলে ধরছে ওই সংস্থাগুলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *