দিল্লী যাবার পথে মহিলার কোলের শিশুকে চলন্ত ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলল ভবঘুরে

বালুরঘাট, ১৯ সেপ্টেম্বরঃ ­­­স্বামীর সাথে দেখা করতে যাবার সময় মহিলার কোলের শিশুকে চলন্ত ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিল এক ভবঘুরে ।  দেড় বছরের ওই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তকে গণপিটুনি দেন উত্তেজিত যাত্রীরা । বুধবার উত্তর প্রদেশের আম্বেদকর নগর এলাকার ঘটনা । পুলিশ জানিয়েছে মৃত ওই শিশুর নাম রিক বর্মন (দেড় বছর বয়স) । ঘটনার পরেই আকবরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে । লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গোসাইগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত ভবঘুরে কমলেশকে । পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে । এদকে এই ঘটনার পরে কুশমন্ডির বাসিন্দা ওই মহিলার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে । অভিযুক্তের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী তুলেছেন বাসিন্দারা ।

জানাগিয়েছে,দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমন্ডি ব্লকের আমিনপুরের বাসিন্দা রঞ্জিত বর্মন । কাজের সূত্রে বর্তমানে তিনি দিল্লীতে থাকেন । মঙ্গলবার শ্বাশুড়ির সঙ্গে রাগ করে স্বামীর কাছে যাবার জন্য দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন উমা বর্মন। কিন্তু মাঝপথে চলন্ত ট্রেন থেকে উমার এক বছরের সন্তানকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় মানসিকভারসাম্যহীন যুবক। সন্তান হারানোর খবর পৌঁছতেই গোটা আমিনপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমেছে। এখনও উমা ও তাঁর স্বামী রনজিতের পরিবারের কেউই যোগাযোগ করতে  পারেননি উমার সঙ্গে। এমনকি রনজিৎ-‌ও বিষয়টি জানে না বলে পরিবার সুত্রে জানা যায়। এই গ্রামের অনেকেই কাজের জন্য দিল্লী সহ ভিনরাজ্যে রয়েছে। তাদের অনেকেরই পরিবার তাদের সঙ্গে রয়েছে। এই ঘটনায় সেই পরিবারের লোকেদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

উমার কাকা ঝন্টু বর্মন জানান, প্রায় ৫ বছর আগে এই গ্রামেরই বাসিন্দা রনজিতের সঙ্গে উমার বিয়ে হয়েছিল। তাদের ১ বছরের এক সন্তান ঋককে নিয়ে উমা দিল্লীতেই থাকত। রনজিৎ সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। প্রায় ১৫ দিন আগেই উমা একাই দিল্লী থেকে আমিনপুরে ফিরেছিল। কিন্তু এখানে শ্বাশুড়ির সঙ্গে বচসার জেরে গত মঙ্গলবার দিল্লী যাবার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। মালদা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফারাক্কা এক্সপ্রেসে চাপে। উত্তরপ্রদেশের গোঁসাইগঞ্জ ও কাটেহরি স্টেশনের মাঝে এক যুবক এসে তাঁর দেড় বছরের সন্তানকে এক যুবক আদর করার জন্য উমার কাছে চেয়ে নেয়। কিছু বোঝার আগেই সে ওই শিশুকে কোলে নিয়েই চলন্ত ট্রেন থেকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে। উমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাঁকে ধরে ফেলে। এরপরে শুরু হয় গণধোলাই। পরে গোঁসাইগঞ্জ স্টেশন এলে সেখানে ওই যুবককে নামিয়ে রেলপুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

গোঁসাইগঞ্জ রেল পুলিশের আধিকারিক মনোজ পান্ডে জানান, বিহারের সীতামারি জেলার নেবরী সিরসিরিয়া থানা এলাকার রুমনী সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা মানসিকভারসাম্যহীন ওই যুবকের নাম কমলেশ। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি যেহুতু ঘটনা উত্তরপ্রদেশের আকবরপুর থানা এলাকায়, সেকারণে উমা দেবীকে সেখানে পাঠানো হয়েছে। যদিও বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ওই সন্তানের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

রেল পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যে ঘটনার পরেই তারা ওই রুটে তল্লাসী চালিয়েছে। কিন্তু ওই সন্তানের কোনো খোঁজ মেলেনি। এলাকার হাসপাতালগুলিতেও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলে মনোজ পান্ডে জানান। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমেই প্রথম পরিবারের লোকেরা বিষয়টি জানতে পারেন।

উমা বর্মনের বাবা মন্টু বর্মন জানান, মেয়ের কাছে কোনো মোবাইল না থাকায় তার সঙ্গে তারা কোনোরকম যোগাযোগ করতে পারেন নি। এমনকি এই দুর্ঘটনার খবরও তারা জানতেন না। এমনকি উমার স্বামী রনজিৎ বর্মনও বিষয়টি জানে না বলে মন্টু বর্মন জানান। তিনি বলেন, তার মেয়ে উমা এখনও দিল্লীতে পৌঁছায় নি। কিভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করবে তাও বুঝে উঠতে পারছে না ওই পরিবারের লোকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *