শুধু প্রাচীন ইতিহাস নয়, দক্ষিন দিনাজপুর জেলার মাটির গন্ধ টানা আছে পৌরাণিক নানা কথায়, যার মধ্যে অন্যতম বৈরাট্টার শমীবৃক্ষ

৬ই মার্চ, কৃষ্ণপদ মন্ডলঃ ভারতবর্ষের শুধু প্রাচীন ইতিহাস নয়, দক্ষিন দিনাজপুর জেলায় রয়েছে মহাভারতের নানা কথার যোগ সুত্র, যার মাটির গন্ধে রয়েছে পৌরাণিক নানা কথায়, যার মধ্যে অন্যতম বৈরাট্টার শমীবৃক্ষ। এই বৃক্ষের সঙ্গে স্মৃতি জড়িয়ে আছে পঞ্চ পান্ডবের এক বছরের অজ্ঞাত বাসের সঙ্গে। “বৈরাট্টা” হরিরামপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে গেলে পাওয়া যাবে বৈরাট্টা গ্রাম। এই গ্রামে প্রবেশ করলেই দেখা যায় প্রায় সব বাড়িতেই প্রাচীন কালের অল্পপুরু ও বেশি চওড়াযুক্ত বর্গাকার বা আয়তাকার ইঁটের ব্যবহার। কারো ঘরের দেওয়ালে আবার কারো প্রাচীরে, কারো বারান্দায় ব্যবহৃত হয়েছে এই ইঁট। শুধু তাই নয় এই এলাকায় একটু এদিক ওদিক ঘোরা ঘুরি করলেই নজরে আসবে চওড়া দেওয়ার যুক্ত ইঁটের ঘরের ধংসাবশেষ। এই জায়গাটি দেখলেই বোঝা যাবে এটি অতি প্রাচীন প্রত্নক্ষেত্র। জনশ্রূতি আছে, মহাভারতের যুগে বিরাট রাজার রাজধানী ছিলো বৈরাট্টায়। বর্তমানে এখানেই রয়েছে সেই শমীবৃক্ষ এবং আলতা দীঘি, যা মহাভারত খ্যাত। কথিত কথা অনুযায়ী পঞ্চ পান্ডবে যখন পাশা খেলায় হেরে ১২ বছরের বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাত বাসে ছিলো, সেই এক বছরের অজ্ঞাতবাসে পঞ্চ পান্ডব এসেছিলো এই বিরাট নগরের  বৈরাট্টায়। এইখান অবস্থিত শমীবৃক্ষেই তারা তাদের রাজ বস্ত্র ও অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিলো। কারন সেই সময়ে এই এলাকা ছিলো বন ও জঙ্গলাচ্ছন্ন, যার মধ্যে এই শমীবৃক্ষই ছিলো এমন একটা গাছ যা এই অঞ্চলে একমাত্র আর এই গাছ সারা বিশ্বে কয়েকটাই পাওয়া যায়। ফলে এই গাছ লুকিয়ে রাখা জিনিশ এই বিশাল বনাঞ্চলে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে ভেবেই এই খানে লুকিয়েছিলো তাকের রাজ বস্ত্র ও অস্ত্র। এবং ছদ্মবেশ ধারন করে তারা বিরাট রাজের রাজ প্রসাদে প্রবেশ করে।

এছারাও এই এলাকায় রয়েছে বিরাট নগরের প্রাচীন মালিয়ান দীঘি, গড় দীঘি, হাতি ডোবা দীঘি, আলতা দীঘি, কাকা দীঘি মতো একের পর এক বড় বড় একাধিক দীঘি। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ১০ ফুট চওড়াযুক্ত সুদীর্ঘ প্রাচীরের কিছু অংশের নিদর্শন। সম্ভবতঃ এটি একডালা দুর্গের অংশবিশেষ বলে মনে করছে ঐতিহাসিকবিদরা।

ডঃ দেবব্রত মালাকার ও অন্যান ঐতিহাসিকবিদের মতে এখানে ছিলো রামপালের রাজধানী রামাবতী। অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকার অবশ্য এটি গুপ্তযুগের কোন রাজার রাজধানী ছিলো বলে মনে করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *